ট্রেন বেরিয়ে যেতেই রেলগেটে আটকে থাকা সার দেওয়া গাড়িগুলি নাগাড়ে হর্ন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, তিনি অবিচল। প্যানেল থেকে সঙ্কেত পাওয়ার পরেই লিভার ঘুরিয়ে রেলগেট খুললেন। তিনি পার্বতী ডোম। পুরুলিয়া ও টামনা স্টেশনের মাঝে কাটিন রেলগেটের গেটম্যান। আনাড়া-চান্ডিল শাখার এক মাত্র মহিলা গেটম্যান। টানা বছর দুয়েক ধরে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু দিনের বেলাতেই নয়, রাতেও রেল গেট পাহারার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বছর চল্লিশের পার্বতী।
রেলের নিছক এক সাফাইওয়ালার স্ত্রী থেকে পার্বতীর গেটম্যান হয়ে ওঠার লড়াই একপ্রকার গল্পই বটে। পার্বতীর স্বামী জুগনু ডোম পুরুলিয়ার রেলওয়ে হাসপাতালের সাফাইকর্মী ছিলেন। পুরুলিয়ায় রেলের ছোট্ট কোয়ার্টারে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার সামলাতেন পার্বতী। বছর তিনেক আগে হঠাৎ তাঁর জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। ভাগা স্টেশনের কাছে তাঁর স্বামীর দেহ মেলে।
পার্বতী ও তাঁর ১৬ বছরের ছেলে, ১৪ বছরের মেয়ের পাশে দাঁড়ান কিছু রেলকর্মী। রেলকর্মীদের একটি সংগঠনের নেতা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পার্বতী যাতে রেলে মৃতের পোষ্য হিসেবে চাকরি পান, সে জন্য ওঁকে দিয়ে আবেদন করানো হয়েছিল। কিন্তু, তিনি অক্ষরজ্ঞানহীন হওয়ায় রেল আবেদন বাতিল করে দেয়। পাশে এসে দাঁড়ান স্থানীয় মহিলা মণ্ডল পুজো কমিটি। তাঁরা পার্বতীকে লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ব নেন।