এখনও কতটা ‘পরাধীন’ এ দেশের মেয়েরা? নিজের কথা বলার অধিকার আদৌ আছে কি তাঁদের? কতটা ক্ষমতা হাতে পান তাঁরা? আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আগে বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উইমেন্স কনক্লেভ’ অনুষ্ঠানের আলোচনাচক্রে বারবার ঘুরে এল এ সব প্রশ্নই।
‘হার লাইফ, হার স্টোরি: ডকুমেন্টিং উইমেন্স লাইভস’ শীর্ষক আলোচনাচক্রে লেখক-গবেষক কোটা নীলিমা যেমন সাফ জানালেন, এ দেশে মেয়েদের নিয়ে লেখালেখি করা সম্ভবই নয়! কারণ তাঁর বক্তব্য, ‘‘পিতৃতান্ত্রিক সমাজ আজও মেয়েদের কুক্ষিগত করে রেখেছে। তা সেই মেয়ে গ্রাম্য-শহুরে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা পরনির্ভরশীল— যা-ই হন।’’ তাই তো আজও বাইরের দুনিয়ায় পা রাখতে গেলে অনুমতি নিতে হয় মেয়েদের।
এ দেশের নারীদের কথা লেখা কতটা শক্ত? কাশ্মীরি লেখক এবং অধ্যাপক শাহনাজ় বশির শুনিয়েছেন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা। কাশ্মীরের পটভূমিকায় লেখা তাঁর বই ‘দ্য হাফ মাদার’ এক মায়ের গল্প। দিনের পর দিন কোর্টকাছারি থেকে শুরু করে হাসপাতাল-মর্গে যিনি চক্কর কাটেন নিজের ‘নিখোঁজ’ ছেলেকে ফিরে পেতে। শাহনাজ়ের কথায়, ‘‘প্রকাশক লেখাটা পড়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি ওই মহিলার যৌন দিকটা তো এক বারও লিখলেন না!’’ অর্থাৎ, মেয়েদের যৌনতাটাই যেন একমাত্র বিক্রয়যোগ্য! প্রায় একই অভিজ্ঞতা নীলিমারও। আত্মঘাতী চাষিদের স্ত্রীদের নিয়ে সম্প্রতি বই লিখেছেন তিনি। ‘উইডোস অব বিদর্ভ, মেকিং অব শ্যাডোস’ নামে ওই বইয়ের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের প্রশ্ন করতে গেলে গ্রামের অনেকের কাছে শুনতে হয়েছে, ওঁরা তো মেয়ে, ওঁদের রান্নাঘর-ঘরের কাজ নিয়ে প্রশ্ন করুন। চাষবাস, সার, কৃষিঋণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া— এ সব নিয়ে ওঁরা কী বলবেন!’’ অথচ কী কারণে, কতটা জীবনযুদ্ধের পরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নিয়েছেন ওই কৃষকেরা, তার সবটা জানেন শুধু তাঁদের স্ত্রীরাই। কিন্তু সমাজ-রাষ্ট্রের চোখে সেই মহিলারা ‘অদৃশ্য’।