গাওস্কর যুগ এখন ইতিহাস।
সচিন যুগ অতীত।
এখন বিরাট কোহলির যুগ।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রায়ই একটা কথা বলতে শুনেছি। দেশের মতো বিদেশের মাটিতেও লড়লে বুঝব, মাঠে তুই কত বড় মস্তান।
সেই সৌরভ তো এখন নিজের চোখেই দেখছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের লড়াই। কোহলির মাস্তানি। দেখে ওর নিশ্চয়ই কিছু মনে পড়ছে।
মনে পড়বেই। ও নিজে যে ভাবে ওর দলকে চাগিয়ে রাখত, যে ভাবে ময়দানি মাস্তানি দিয়ে বিপক্ষকে দমিয়ে রাখত, কোহলির মধ্যে অনেকটা সেই ছায়া। অজিদের চোখে চোখ রেখে আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের যে ভাবে কথা বলতে শিখিয়েছিল দাদি, কোহলিকে দেখে ওদের মনে হতে পারে সৌরভের কাছ থেকেই ট্রেনিং নিয়ে এসেছে ভারতের নতুন টেস্ট ক্যাপ্টেন।
ব্যাট হাতে ঝড় তোলা যেমন বিরাটের স্বভাব, তেমনই ফিল্ডার বিরাটও কখনও মাঠে হারিয়ে যাওয়ার পাত্র নয়। বিরাট কোহলি কোথায় ফিল্ডিং করছে, সেটা গ্যালারি থেকে অনায়াসে বুঝে নেওয়া যায়। ওর চরিত্রের এই ‘বোল্ড’ ব্যাপারটাই ক্রিকেট মাঠে ওকে উজ্জ্বল করে তোলে। এই না হলে লিডার!
এই যে মাঠে ওর মাস্তানি করা। বিপক্ষের কেউ ওর দলের কারও সঙ্গে গুন্ডামি করতে এলে তাকে আগলে বিপক্ষের মুখের উপর জবাব দেওয়া, মাঠের ঝামেলায় নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া, এ সব কিন্তু ও উপভোগ করে বলেই আমার মনে হয়। এগুলোই একজন ‘ন্যাচারাল লিডার’-এর গুণ। মাঠে থাকব অথচ সেখানে গরমাগরমি থাকবে না, এই ব্যাপারটা ওর একেবারেই পছন্দ নয়। এই ধরনের ছোটখাটো ঝামেলার মাধ্যমে আবহাওয়াকে উত্তপ্ত রাখতে ভালবাসে বিরাট, যাতে পুরো টিমটাও মাঠে সবসময় চার্জড থাকে, কখনও ঠান্ডা না হয়ে যায়।
একজনের নাম তো শুরুতেই করলাম। খেয়াল করে দেখবেন, গাওস্কর, কপিল, ধোনিরাও অনেকটা এমন ধরনেরই ছিলেন। মাঠে কোনও কিছু অসম্মানজনক মনে হলে সুনীল গাওস্কর যেমন দল নিয়ে মাঠ ছাড়তে তৈরি, তেমন দলের কেউ অসম্মানিত হলে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ানো ধোনি, কপিল দেবদের স্বভাব। কে ভাল বা কে মন্দ, সেই তুলনায় যাচ্ছিই না। তবে কোহলি যে সেই জাতেরই নেতা, এটা বলতে কোনও আপত্তি নেই। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা এই প্রজন্মেও সেই ধরনেরই একজন নেতা পেয়েছি।
অস্ট্রেলিয়া এই সিরিজে হয়তো ভারতকে হারাতে পেরেছে। কিন্তু কোহলিকে হারাতে পেরেছে কি? মনে হয় না এর উত্তরে কেউ ‘হ্যাঁ’ বলবেন। অ্যাডিলেড, মেলবোর্নের পর এখন সিডনিও কাঁপাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার ৫৭২-এর জবাবে ভারত এখন ৩৪২-৫। ম্যাচ অবশ্যই বিপদসীমার বাইরে যায়নি। কিন্তু ভারতের আশা, বিরাট যে ক্রিজে আছে। আর অস্ট্রেলিয়ার আফসোস, বিরাটকে হারানো গেল না।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে একটা তথ্য পাচ্ছি। প্রতি ৩৩টা টেস্টে বিরাটের ১০টা সেঞ্চুরি। সচিনের টেস্টে সেই অনুপাতটা ছিল ৪০:১০। বাকিদের থেকেও বিরাটের এই অনুপাতটা এখনও ভাল। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের যাবতীয় গোলাগুলির জবাব বিরাটের ব্যাটে আছে। আমি বিরাটের পূর্বসূরিদের সঙ্গে ওর তুলনা করতে চাই না। শুধু কয়েকটা কমন ব্যাপারের উপর নজর টানতে চাই। যেমন, রানের খিদে। বাইশ গজ শাসন করা। এবং সেরাদের মধ্যে সেরা হওয়ার অদম্য ইচ্ছা। এই তিনটে ব্যাপার কিন্তু এদের সবার মধ্যেই দেখা যায়। সঙ্গে তো টেকনিক্যাল দক্ষতাটা আছেই। কোনও সন্দেহ নেই, এই প্রজন্মের মহানায়ককে আমরা পেয়ে গিয়েছি।
প্রশ্ন উঠতেই পারে যে ইংল্যান্ডে ওই ব্যর্থতার পর অস্ট্রেলিয়ায় বিরাট এই সাফল্য পেল কী করে? দুটো দেশে সম্পুর্ণ আলাদা ক্রিকেট হয়। ইংল্যান্ডে সুইং সামলাতে হয় বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় বাউন্স ও গতি। বিরাট বাউন্স ও গতি সামলানোর হোমওয়ার্কটা দারুণ করেছে। এমনিতেই ওর ব্যাকফুট মুভমেন্ট দুর্দান্ত। কিন্তু ইংল্যান্ডের পরিবেশে সুইং সামলানোর কায়দাটা অন্য রকম। পরের বার যখন ওরা ইংল্যান্ড যাবে, তখন নিশ্চয়ই আগের ক্রুতিটা মেরামত করে ফেলতে পারবে বিরাট।
এ রকম একজন রোল মডেল দলে থাকলে আরও কয়েক জন ভাল ব্যাটসম্যান উঠে আসবে এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মুরলী, রাহানে, পূজারাদের মতো এ বার আর এক ভাল ব্যাটসম্যান পাওয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া গেল বৃহস্পতিবার সিডনিতে। কেএল রাহুলের অসাধারণ ১১০-এর ইনিংসে। ওকে ঠিকমতো তৈরি করে নিতে পারলে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সোনার যুগ ফিরে আসতেই পারে।
সেঞ্চুরিতে স্বস্তি
যতটা না খুশি হয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি স্বস্তি পেয়েছেন লোকেশ রাহুল। জীবনের প্রথম টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পর যে ভাবে তাঁর সমালোচনা শুরু হয়েছিল, তাতে রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল বছর বাইশের এই কন্নড় তরুণের। এ দিন খেলা শেষে বলেন, “বিশ্বাস করুন, মেলবোর্নে ও রকম টেস্ট অভিষেক মোটেই আশা করিনি। সিডনির টেস্টটাই প্রথম ভেবে নেমেছিলাম। আজ ব্যাট করে আনন্দ পেলাম।” নিজের তৃতীয় টেস্ট ইনিংসেই সেঞ্চুরি এল রাহুলের ব্যাট থেকে।
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস ৫৭২-৭
ভারত
প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ৭১-১-এর পরে)
রাহুল ক ও বো স্টার্ক ১১০
রোহিত বো লিয়ঁ ৫৩
কোহলি ন.আ ১৪০
রাহানে এলবিডব্লিউ ওয়াটসন ১৩
রায়না ক হাডিন বো ওয়াটসন ০
ঋদ্ধিমান ন.আ ১৪
অতিরিক্ত ১২।
মোট ৩৪২-৫।
পতন: ৯৭, ২৩৮, ২৯২,২৯২।
বোলিং: স্টার্ক ২১-৪-৭৭-২, হ্যারিস ২৩-৬-৬৩-০, হ্যাজলউড ২০-৫-৪৫-০,
লিয়ঁ ৩২-৭-৯১-১, ওয়াটসন ১৫-৪-৪২-২, স্মিথ ৪-০-১৭-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy