Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কেকেআরের কাঁটা প্রাক্তন তিন নাইট

বৃষ্টিতে খেলা সাময়িক বন্ধ আছে তো কী, ক্রিকেট ছাড়াও যে অন্য বিনোদনের মঞ্চ রয়েছে। সকলের নজর চলে গেল স্কোরবোর্ডের নীচে নাইটদের বেগুনি রংয়ের মঞ্চে। সেখানে ডিজে বাজিয়ে দিয়েছেন সানি লিওনের ‘বেবিডল’।

হতাশ: দলের হার বাঁচাতে পারলেন না রাসেল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

হতাশ: দলের হার বাঁচাতে পারলেন না রাসেল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

রাত ন’টা কুড়ি। তখনও ভর্তি ইডেন। বৃষ্টি হচ্ছে দেখেও কেউ মাঠ ছেড়ে যাননি। শাহরুখ খান আসেননি দেখেও কেউ বেরিয়ে যাননি।

এই হল আইপিএল!

বৃষ্টিতে খেলা সাময়িক বন্ধ আছে তো কী, ক্রিকেট ছাড়াও যে অন্য বিনোদনের মঞ্চ রয়েছে। সকলের নজর চলে গেল স্কোরবোর্ডের নীচে নাইটদের বেগুনি রংয়ের মঞ্চে। সেখানে ডিজে বাজিয়ে দিয়েছেন সানি লিওনের ‘বেবিডল’। সেই গানের সঙ্গে নাচছেন দুই তরুণী। তাঁদের তালে তালে নাচছে গোটা ইডেন।

ক্রিকেটের টানটান উত্তেজনা থাকবে, সঙ্গে থাকবে বিনোদনের মোড়ক। এই হল আইপিএল। অথবা নামকরণ করা যাক, রঙিলা আইপিএল। ঝোড়ো শুরু, রুদ্ধশ্বাস শেষ দৃশ্য— সব পাওয়া যাবে! ছক্কার বন্যা আছে। একঘেয়েমিতে ভোগার ভয় নেই। সারা দিন ধরে বসে থাকা নেই। মাঠে ক্রিকেটারদের অফুরন্ত প্রাণশক্তির মতোই গ্যালারি সারাক্ষণ টগবগে। ঝিমুনি আসবে না। পরিবার নিয়ে সকলে দিব্যি বসে আছেন রাতের ইডেনে যে, বৃষ্টি থামলে কখন আবার খেলা শুরু হবে? রাত বারোটা পেরিয়েও মাঠ ভর্তি।

যা অনেকটা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ঘরানা এবং স্বাদ এনে দিচ্ছে এ দেশের ক্রিকেটে। ইংল্যান্ডে দুই ম্যাঞ্চেস্টার, চেলসি, লিভারপুল, আর্সেনাল, টটেনহ্যাম বা অন্যান্য ফুটবল দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো এখানেও কলকাতা, চেন্নাই, হায়দরাবাদ— তৈরি হয়ে যাচ্ছে শহর বনাম শহর, নতুন ক্রিকেট সভ্যতা।

বিলি স্ট্যানলেকের গতি আর নাইট সংসারের প্রাক্তন প্রতিনিধি শাকিব আল হাসানের বাঁ হাতি স্পিনের সামনে ১৩৮ রানের বেশি তুলতে পারল না নাইট রাইডার্স। কিন্তু অল্প রানের পুঁজি নিয়েও নাইটরা যখন বল করতে এলেন, ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ পেয়ে গেলেন তাঁরা— ইডেনের গ্যালারি। শনিবার কোনও বিরাট কোহালিও ছিলেন না প্রতিপক্ষ দলে যে, আবেগের বিভাজন ঘটাবেন। এ দিন ইডেন মানে শুধুই ‘কে...কে...আর, কে...কে...আর!’

সেই গর্জনে বলিয়ান সুনীল নারাইন দুরন্ত প্রত্যাঘাত করে তুলে নিলেন দুই উইকেট। অন্য দিক থেকে ভারতীয় দলের তারকা স্পিনার কুলদীপ যাদব ফেরত পাঠালেন মণীশ পাণ্ডেকে। চায়নাম্যান (বাঁ হাতি কুলদীপের যেটা ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে গুগলি অর্থাৎ, বাইরের দিকে স্পিন করবে) ধরতে পারেননি মণীশ। কিন্তু যাঁকে কোহালি এবং স্টিভ স্মিথের সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ভাবা হচ্ছে, সেই কেন উইলিয়ামসন বাড়তে দিলেন না কুলদীপের রহস্য। ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ বার করে দিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কই (৪৪ বলে ৫০)।

তবু শেষ পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্স সেই ‘কলকাতা ফাইট রাইডার্স’। হারতে পারি কিন্তু বিনা লড়াইতে হারব না। মিচেল জনসনরা শেষের ওভারগুলোতেও লড়ে গেলেন। মনে হচ্ছিল মুম্বই বনাম দিল্লি প্রথম ম্যাচটার মতোই আর একটা রুদ্ধশ্বাস পরিণতি অপেক্ষা করছে। একটা সময়ে ১৪ বলে ২০ রান। কয়েকটা ‘ডট বল’ (যে বলে কোনও রান হয় না) হলে, কে বলতে পারে, খেলা ঘুরবে না! কিন্তু না, হল না। পাঁচ উইকেটে হারলেন নাইটরা।

ঋদ্ধিমান সাহা তাঁর ঘরের মাঠে ১৫ বলে ২৪ রান করলেন। সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের (১৬০) জন্য পুরস্কার পেলেন। কিন্তু নাইটদের কাঁটা হয়ে বিঁধলেন তিন প্রাক্তন নাইট। শাকিব আল হাসান চার ওভারে ২১ রান দিয়ে দুই উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ম্যাচ জেতানো জুটি গড়লেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে। বাংলাদেশের জার্সি পরা কয়েক জনকেও দেখা গেল ইডেনে খেলা দেখতে এসেছেন। আন্দ্রে রাসেলকে স্কোয়ারকাটে পয়েন্টের উপর দিয়ে হেলায় ছক্কা মারলেন শাকিব। শটটা যেন চাবুকের মতো সেই সব কেকেআর কর্তার উপর আছড়ে পড়ল, যাঁরা তাঁকে ঢাকার প্রতিবেশী শহর থেকে চলে যেতে দিয়েছেন হায়দরাবাদে। পরে ইউসুফ পাঠান এসে জল ঢেলে দিলেন সব আশায়। রাসেলের বলে বিশাল ছক্কা মেরে হায়দরাবাদকে জয়ের স্কোরে পৌঁছে দিলেন পশুপ্রিয় প্রাক্তন নাইট ইউসুফ। নাইট স্পিনারদের বল ‘গ্রিপ’ করতে অসুবিধা হল ইডেনের শিশিরের জন্যও। শিশিরের কথা ভেবেই টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল হায়দরাবাদ।

শাহরুখ খানের একটা দুর্দশার ইতিহাস আছে প্রাক্তনদের হাতে ধাক্কা খাওয়ার। কেকেআরে থাকতে রান পাননি ক্রিস গেল। উদ্বোধনী ম্যাচের ঝড় বাদ দিলে বিশেষ কিছু করতে পারেননি ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। নিজের সন্তানদের মতোই তাঁদের ভালবেসেছেন শাহরুখ। দামি উপহার দিয়েছেন, বলিউড নায়ক-নায়িকাদের এনে পার্টি করেছেন। তাতেও সেরা খেলাটা বার করতে পারেননি। যেই নাইট রাইডার্স তাঁদের ছেড়ে দিল, অন্যত্র গিয়ে দুরন্ত সব ম্যাচে জেতানো ইনিংস খেলেছেন গেল-রা।

ইডেনে শনিবার তেমনই কাঁটা হয়ে বিঁধলেন প্রাক্তন নাইট ত্রয়ী। শাকিব, ইউসুফ ছাড়াও ছিলেন মণীশ পাণ্ডে। দুরন্ত ফিল্ডিংয়েই তিনি ধ্বংস করলেন কেকেআরকে। বৃষ্টির পরে ফের খেলা শুরু হতেই প্রথম ওভারে বিলি স্ট্যানলেকের বলে আউট নীতীশ রানা। ওটা অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার স্ট্যানলেকের উইকেট নয়, রানা আসলে কট অ্যান্ড বোল্ড মণীশ। পয়েন্টে পাখির মতো উড়ে গিয়ে তুলে নিলেন ক্যাচ।

একটু পরে যেটা করলেন, আরও অবিশ্বাস্য! বাউন্ডারি লাইনের উপর উড়ন্ত অবস্থায় বল ধরে মাঠের ভিতরে পাঠিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরার চেষ্টা করলেন। ক্যাচটা না ধরতে পারলেও বাঁচিয়ে দিলেন অবধারিত ছক্কা। চমকপ্রদ হচ্ছে, মণীশরা এভাবে ক্যাচ ধরাটা অনুশীলন করেন। এটা কোনও এক রাতের চটক নয়।

এটাই আইপিএলের দান। অবিশ্বাস্যকে তাড়া করা কোনও অঘটন নয়, বরং তারও মহড়া চলে এখানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IPL IPL 2018 IPL 1
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE