ডিএন কলেজের মাঠে চলছে খেলা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
ঝিল উজিয়ে উত্তুরে হাওয়াটা মারতে শুরু করেছে।
সাইড লাইনের ধারে আসনপিঁড়ি ভিড়ে তর্কটা শুরু হয়েছে তা নিয়েই— এই মরা শীতে ওরা কিছু করতে পারবে!
কি পারতে হবে?
সোজা উত্তর— কলকাতার ময়দান থেকে ভাড়া করা বিদেশিদের নিয়ে গড়া দলটিকে হারাতে হবে।
স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দলটি সেই অসাধ্য সাধনই করে দেখাল।
লায়নস ক্লাবে তিন-তিন জন কলকাতার নামি খেলোয়াড়। রাজস্থানের ফিবো, এরিয়ানের পেন আর সালকিয়ার মুসা। গোটা মাঠ জুড়ে তাদের দাপটও দেখল সকলেই। কিন্তু পাল্টা রুখে দাঁড়িয়ে সমানে টক্কর দিয়ে হুগলির পান্ডুয়া ফুটবল অ্যাকাডেমির আদিবাসি ফুটবলাররা ১-০ গোলে হারিয়ে দিল তাদের।
দুই দলের ওঠাপড়ায় এ দিন এক রুদ্ধশ্বাস ফুটবল দেখল অরঙ্গাবাদ। গোল করলেন এস টুডু।
মন্ত্রী জাকির হোসেনের আয়োজনে কার্যত গত এক সপ্তাহ ধরে ফুটবল জ্বরে আচ্ছন্ন বিড়ি শিল্প শহর অরঙ্গাবাদ। শুক্রবার নমাজ বার বলে এ দিন বিড়ি শিল্প নগরে ছিল বন্ধের মেজাজে। তাই এ দিন মাঠে দর্শকের উপস্থিতিও ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি।
আট দলের এই ফুটবলে ইতিমধ্যেই ফাইনালে উঠেছে জাকিরের নিজের দল অরঙ্গাবাদ টাউন ক্লাব। অন্য দিকে মহামেডান স্পোর্টিংকে হারিয়ে বৃহস্পতিবারই সেমিফাইনালে উঠেছে কলকাতার এএফসি। শুক্রবারের খেলায় জয়ী পান্ডুয়ার আদিবাসি দলের সঙ্গে শনিবার সেমিফাইনাল কলকাতার এএফসি’র। ফাইনাল ১৩ নভেম্বর।
জনসংযোগ বাড়াতে নিজের সংসদীয় কেন্দ্র জঙ্গিপুরে ফুটবলকেই হাতিয়ার করেছিলেন তৎকালীন সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ বার নিজের খাস তালুক বিড়ি শিল্প শহর অরঙ্গাবাদে সেই ফুটবলকেই সঙ্গী করলেন মন্ত্রী জাকির।
নিজের ক্লাবের ব্যানারে ফুটবলের এই আয়োজনে দৈনিক টিকিটের হারও নেহাত কম নয়। দৈনিক ৩০ টাকা। খেলার জন্য মাঠের পাশে অস্থায়ী ভাবে সাজানো হয়েছে গ্যালারি। কলকাতার উয়ারি, এএফসি, মহামেডান ছাড়াও খেলায় অংশ নিয়েছেন হলদিবাড়ি, মেমারি, পান্ডুয়া থেকে আসা ক্লাবও। গত এক সপ্তাহ ধরে অরঙ্গাবাদ তাই কার্যত আক্রান্ত ফুটবল ফোবিয়ায়।
রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে অবশ্য প্রণববাবুর ফুটবলের আয়োজনকে কিছুটা হলেও ছাড়িয়ে গেছে জাকিরের এই ফুটবল খেলা। মাঠের দর্শকদের মনোরঞ্জনে ফুটবলের পাশাপাশি মাঠে উপস্থিত ছয় চিয়ার গার্লসদের নাচ।
৩০ অক্টোবর অরঙ্গাবাদ কলেজ মাঠে নিজের ক্লাবের ফুটবলের উদ্বোধন করেছেন জাকির হোসেন নিজেই । হাজির ছিলেন বাংলার নামী ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য।
জাকিরের কথায়, “অরঙ্গাবাদ এলাকায় বেশির ভাগই গরিব বিড়ি শ্রমিক। সেভাবে বিনোদনের কোনও ব্যবস্থা নেই এই শিল্প শহরে। কিন্তু ফুটবলের প্রতি তাদের ভালবাসা রয়েছে। এই জন্যই বহিরাগত নামী দলের ভালো ফুটবলার এনে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন।”
তিনি জানান, বহিরাগত দলগুলিতে দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। ফলে সে খরচের কিছুটা তুলতে টিকিটের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। টিকিট কেটেও নামী দলের খেলা দেখতে প্রচুর সংখ্যায় দর্শক এসেছেন মাঠে। খেলা দেখে তারা খুশি।
কিন্তু ফুটবলকে আঁকড়ে জনসংযোগের এই দুই আয়োজনের মধ্যে তফাতও ছিল বিস্তর। প্রণববাবুর কেকেএম ফুটবলে অংশ নেন মুর্শিদাবাদ ও বীরভুমের ২৫৬টি স্থানীয় ক্লাব।
আর জাকিরের ফুটবলে অংশ নেওয়া ৮টি দলের ৭টিই বহিরাগত। এমনকি নিজের দলেও খেলোয়াড়দের অধিকাংশই কলকাতার বিভিন্ন মাঠ থেকে তুলে আনা। স্বভাবতই জাকিরের ফুটবলে মন মজেছে শিল্প নগরীর।
জাকিরের ক্লাব সম্পাদক মাসাদুল হক বলছেন, “আমরা চেয়েছি মানুষকে ভাল খেলা দেখাতে। স্পনসরসিপ ছাড়াই ফুটবলের বাজেট ২০ লক্ষ টাকা। ২০ ও ৩০ টাকার দৈনিক টিকিট বিক্রি করা হয়েছে সে খরচের কিছুটা তুলতে। বাকি যা ঘাটতি হবে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জাকির।”
জাকির বলছেন, “অরঙ্গাবাদে ফুটবল যথেষ্ট জনপ্রিয়। এই এলাকায় বড় দলের ফুটবল খেলা এখন আর সেভাবে হয় না। তাই ফুটবলকে উতসাহ দেওয়া দরকার। তাই বলেছি ফুটবলের জন্য ৫/৬ লক্ষ টাকার যা ঘাটতি হবে আমি মেটাবো। ফুটবলের জন্য এটুকু তো করতেই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy