Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মুম্বই-অবজ্ঞার জবাব দিয়ে আরও তৃপ্ত সূ্র্য পরিবার

ভারতবর্ষের এবি ডে’ভিলিয়ার্স। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ভারতীয় উত্তর। স্কাই। মানে, সূর্যকুমার যাদবের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ! ইডেন গার্ডেন্সে মুম্বই ম্যাচ-উত্তর সূর্যকুমার যাদবের এক-একটা নাম। পরিবার থেকে যার একটাও কেউ দেয়নি। দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার গোটা দিন ধরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তো এই নামগুলোই ঘোরাফেরা করল কেকেআরের নতুন সূর্যকে ঘিরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

ভারতবর্ষের এবি ডে’ভিলিয়ার্স।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ভারতীয় উত্তর।

স্কাই। মানে, সূর্যকুমার যাদবের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ!

ইডেন গার্ডেন্সে মুম্বই ম্যাচ-উত্তর সূর্যকুমার যাদবের এক-একটা নাম। পরিবার থেকে যার একটাও কেউ দেয়নি। দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার গোটা দিন ধরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তো এই নামগুলোই ঘোরাফেরা করল কেকেআরের নতুন সূর্যকে ঘিরে।

এ দিন মুম্বইয়ের অনুশক্তি নগরে যখন ফোন করা হল, ও প্রান্তের গলা শুনে মনে হল না মুম্বইকরের পরিবারের পৃথিবী গত চব্বিশ ঘণ্টায় খুব একটা পাল্টেছে বলে। আত্মজ সম্পর্কে ওঁরাও যা বললেন, তাতে মনে হবে না সূর্যর জীবনেও খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে। ‘‘এত নাম-টাম এর মধ্যে বেরিয়ে গিয়েছে বলে জানতাম না। তবে ওকে এ সব নিয়ে গত রাতেই সতর্ক করে দিয়েছি,’’ ফোনে বলছিলেন সূর্যর বাবা অশোক যাদব।

ঠিক কী কথাবার্তা হল পিতা-পুত্রে?

শোনা গেল সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটা সূর্য বাবাকে করেন সেটা হল, ইনিংসটা যথেষ্ট উপভোগ্য ছিল কি না? আসলে সূর্য পরিবার আজও মনে করে, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁর ছেলের প্রতিভাকে যথাযোগ্য মযার্দা দেয়নি। দিনের পর দিন ডাগআউটে রেখে দিয়েছে। মাঠে নামায়নি। ‘‘গম্ভীরের এটাই সবচেয়ে বড় দিক। কেকেআর নাম দেখে না। তারকা বোঝে না। আমি তো বলব মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ভাল ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য মোটেও সুবিধেজনক ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়,’’ বলতে থাকেন অশোক। যিনি ছেলেকে গত রাতে বলে রেখেছেন একটা ম্যাচ জিতিয়ে আবেগে ভেসে না যেতে। বলে রেখেছেন, পরের ম্যাচগুলোতেও ব্যাট থেকে এতটাই ঝাঁঝ আশা করে রাখছে পরিবার।

অথচ একটা সময় সূর্যর হাতে ব্যাট নয়, ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট থাকত। খেলেওছেন রাজ্য পর্যায় পর্যন্ত। ক্রিকেটে তা হলে এলেন কী ভাবে? শোনা গেল, বিকল্পটা তিনি নিজেই বেছে নিয়েছিলেন। এক স্থানীয় কোচই কিশোর সূর্যকে দেখে নাকি বলে দিয়েছিলেন, এ ছেলের যা মশলা তাতে রঞ্জি পর্যন্ত যাওয়া নিশ্চিত। তার পর অনূর্ধ্ব পনেরো হয়েছে। দিলীপ বেঙ্গসরকরের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ঢুকেছেন। রঞ্জি হয়েছে। মুম্বই অধিনায়কত্ব এসেছে। আর এখন কেকেআরের তিনি সহ-অধিনায়ক।

‘‘আমরা ওর উপর কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিইনি। নিজেই একটা সময় ব্যাডমিন্টন ছেড়ে, ক্রিকেট ধরেছিল। তবে ও খুব সিরিয়াস ক্রিকেট নিয়ে,’’ বলছিলেন অশোক। ঠিকই। এখনও দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাহির খানের জিমে পড়ে থাকেন। কারণ, একটা সময় ফিটনেস ভুগিয়েছে তাঁকে। আরও শোনা গেল, নাইট তারকা হয়েও পাড়ার ছোট ছেলেদের সঙ্গে ব্যাট হাতে নেমে পড়া এখনও সূর্যর নিয়ম। পরিবারকেও সম্মান করেন অসম্ভব। ডান কাঁধে একটা ট্যাটু আছে যেখানে বাবা-মার মুখ আঁকা। মায়ের কথায় এসইউভি-র রং পাল্টে হলুদ করেছেন!

এবং পরিবারকে বাদ রেখে ভারতীয় ক্রিকেটে ঢুকলে দু’জনকে নাকি পাওয়া যাবে, যাঁদের সম্পর্কে কেকেআর সহ-অধিনায়ক অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল। গৌতম গম্ভীর এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।

পিল্লাই কলেজের কমার্স স্নাতক না কি আজও ফর্ম নিয়ে হতাশায় ভুগলে গম্ভীরের যুদ্ধকে উদাহরণ করে নিজেকে তাতান। কয়েক মাস আগে খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য মুম্বই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। গ্রাস করছিল হতাশা। তখনও তাঁকে সামলেছে গম্ভীর-টোটকা। ‘‘গম্ভীর ওকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। যেমন চাপ কী ভাবে সামলাতে হবে। ফর্ম হারালে নিজের মনকে কী ভাবে ঠিক রাখতে হবে,’’ বলছেন অশোক। আর ধোনির থেকে ছেলে নাকি ধার করে থাকেন চাপে বরফশীতল থাকার ক্ষমতা। বুধবার ইডেনই যেমন গম্ভীর চলে যাওয়ার পর ব্যাটিং লাইন আপে কাঁপুনি ধরতে পারত। ধরেনি সূর্য ঠাণ্ডা মাথায় সামলে দেওয়ায়। ‘‘ওই ঠাণ্ডা থাকাটা কিন্তু ধোনিকে দেখে শেখা,’’ প্রসঙ্গ উঠতেই মনে করিয়ে দিলেন অশোক। কেকেআর অধিনায়ক আর সিএসকে ক্যাপ্টেনের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর জল্পনা চলে ভারতীয় ক্রিকেটে। কিন্তু এর পর অন্তত একটা ব্যাপার দু’জনের মধ্যে ‘কমন’ পাওয়া গেল।

সূর্য-প্রণাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE