বৃহস্পতিবার সন্ধে আটটা এগারো পর্যন্ত দেখছি ‘গৌতম গম্ভীর ব্রোকেন ব্যাট’ বিষয়টা গুগলে এক লাখ সাতাশ হাজার হিট পেয়েছে। সেখানে ‘গৌতম গম্ভীর হাফসেঞ্চুরি ভার্সাস মুম্বই ইন্ডিয়ান্স’-এর হিট মোটামুটি ৯১,৪০০। সত্যি, আমরা নাটুকে গল্প খুব পছন্দ করি, তাই না? ও দিকে টুইটারও গুনগুন করে যাচ্ছে। রমেশ শ্রীবৎসের টুইটটা বেশ মজার— গৌতম গম্ভীর এখন টুইটারের জন্য একদম রেডি। ও ব্যাট ভেঙেছে, কিন্তু হ্যান্ডলটা ধরে রেখেছে। মজার লোক বলতে হবে। কিন্তু আমার টুইটার হ্যান্ডল ‘@গৌতমগম্ভীর’ তো আমি বছরখানেকের উপর ব্যবহার করছি।
আমার ফ্র্যাঞ্চাইজির কে যেন একটা বলল, ব্যাট ভাঙা নাকি কাচ ভাঙার মতোই শুভ লক্ষণ। আমি এ সব খুব একটা বিশ্বাস করি না। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলো অনেক চিন্তাভাবনাই ওলটপালট করে দেয়। শেষ কবে আমার এই অবস্থা হয়েছিল জানেন? শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ফাইনালে, ২০১১ সালে। আমার ব্যাটের নীচের দিকটা ভেঙে গিয়েছিল কিন্তু ভারত জিতেছিল। আমিও ৯৭ রান করেছিলাম। চেন্নাইয়ে বসে থাকা আমার ব্যাট স্পনসর হয়তো আমাকে মেরে ফেলতে চাইবেন, কিন্তু একটা কথা না বলে পারছি না। এ বারের আইপিএল জেতার জন্য যদি আরও পনেরোটা ব্যাট ভাঙতে হয় তো আমি তাতেও রাজি।
ভাঙা ব্যাটের কথা থাক। এ বারের আইপিএল জয়ের লক্ষ্যে আমরা দারুণ একটা পদক্ষেপ করলাম। দুর্দান্ত একটা মুম্বই টিমকে হারিয়ে। গর্ব না করে, কাঠ ছুঁয়ে বলছি, প্রথম ম্যাচের প্রায় পুরোটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রোহিত শর্মা দারুণ খেলেছে। ও তো রোল্স রয়েসের মতো নড়াচড়া করে। ট্র্যাফিক ভর্তি রাস্তাতেও অবহেলায় ফাঁকফোকর খুঁজে নেয়। প্রাক্তন ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা কার্ল হুপারের অভিজাত ব্যাটিং নিয়ে লিখতে গিয়ে এক লেখক একবার বলেছিলেন, ‘ব্যাটিং যদি সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা হত, তা হলে হুপার হত মিস ওয়ার্ল্ড।’
কেকেআরের একান্ত আপন সূর্যকুমার যাদবের প্রচুর প্রতিভা আছে। কিন্তু রোহিত বা বিরাটের সঙ্গে তুলনা করার মতো জায়গায় পৌঁছতে হলে ওকে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। ওর নামের প্রথম অক্ষরগুলো থেকে আমি ওর একটা ডাকনাম ঠিক করেছি— স্কাই। মাঠে ও যা করে, যা আপনারা সবাই দেখতে পান, শুধু সেগুলো নয়। সূর্যর অ্যাটিটিউডটাও দুর্দান্ত। ওকে আমি সহ-অধিনায়ক করেছি দেখার জন্য যে, দায়িত্ব পেলে সেটা ও কী ভাবে সামলায়। আমি আশা করব স্কাই ওর পা দুটো মাটিতে রেখে চলবে। নিজের ক্ষমতা বুঝবে।
আমাদের প্রথম ম্যাচে ইডেন প্রায় ভরে গিয়েছিল। কেকেআরে স্থানীয় প্রতিভার অভাব নিয়ে অনেকে কথা বলছিলেন। মনে হয় বুধবারের দর্শক সমর্থন দেখে তাঁরা তাঁদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন। আমার মনে হয় একটা-দুটো টিম বাদ দিলে কেকেআরই একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি যারা তাদের ‘কোর’ গ্রুপটা ধরে রেখেছে। এই ব্যাপারটা গত তিন বছরে শুধু আমাদের দুটো ট্রফিই দেয়নি। বিশ্বস্ত ভক্তদের একটা সমষ্টিও দিয়েছে। আমি মনে করি কেকেআর টিমটা কলকাতা শহরের, আর কলকাতা শহরটা কেকেআর টিমের। সে টিমে স্থানীয় প্রতিভা থাকুক বা না থাকুক। ১৪ এপ্রিল আপনারা যখন পয়লা বৈশাখ পালন করবেন, আমরা থাকব আপনাদের পাশে। গরমকালে যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং নিয়ে বিরক্ত আলোচনা করবেন, তখনও। আমরা আজ যে জায়গায় পৌঁছেছি, তার জন্য আন্তরিক ভাবে আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনাদের জন্যই তো টিমটার সাফল্য নির্ভর করে আছে।
ও হ্যাঁ, যুবরাজও আমার ব্যাট-বিপত্তি নিয়ে একটা টুইট করেছিল। ওর পোস্টটা এ রকম— এ বার মনে হচ্ছে ওটা গৌতম গম্ভীর সাইজের ব্যাট!
উঁকিঝুঁকি
সবিস্তার দেখতে ছবি দু’টিতে ক্লিক করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy