Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘আট মাসের ঠাসা ক্রিকেট সূচিতে মাঠে ফিরছি’

আগামী আট মাস সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখার জন্য যে ঠাসা ক্রিকেট রয়েছে, সে জন্য তো তাঁদের কারও না কারও ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য।

প্রস্তুত: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেখা যাবে এ বি-কে। ফাইল চিত্র

প্রস্তুত: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেখা যাবে এ বি-কে। ফাইল চিত্র

এ বি ডিভিলিয়ার্স
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৮
Share: Save:

যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সারা বছরের সূচি তৈরি করেন, সেই সব কর্তাকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

তবে আগামী আট মাস সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখার জন্য যে ঠাসা ক্রিকেট রয়েছে, সে জন্য তো তাঁদের কারও না কারও ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য। সুতরাং, এ বার সিনেমার মতো ‘লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশন’ বলে মজা করা শুরু করে দেওয়া যেতেই পারে। আমিও সেই আনন্দ উপভোগ করার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি।

ছ’মাসও পুরো হয়নি এখনও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছি। এই ক’দিনে স্ত্রী ও দুই ছেলের সঙ্গে প্রচুর আনন্দের মুহূর্ত কাটিয়েছি। অনেক বিশ্রাম হয়েছে। এ বার আবার মাঠে নামার ইচ্ছেটা চাগাড় দিয়ে উঠছে মাঝে মাঝেই। আর তর সইছে না যেন।

আরও পড়ুন
‘অস্ট্রেলিয়াতেও ঠিক রান পাবে রোহিত’, আশাবাদী কোচ

অনেকে হয়তো ভেবে বসে আছেন, আমি সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই বিদায় নিয়েছি। কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই সে রকম নয়। এই ক’দিনে জিম ও নেটে অনেক ঘাম ঝরিয়েছি। এই সপ্তাহের শেষেই আমাদের দেশে শুরু হচ্ছে প্রথম সুপার লিগ। এই লিগে খেলার জন্য এখন আমি তৈরি।

গত বছরই এই লিগ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের দেশের বোর্ড কিছু সমস্যার মুখোমুখি হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবে এ বার আর কোনও সমস্যা নেই। ড্রাফটও হয়ে গিয়েছে। আর ছ’টা ফ্র্যাঞ্চাইজি যা দল গড়েছে, শক্তির দিক থেকে প্রত্যেকটিই প্রায় সমান। যে কোনও দল যে কোনও ম্যাচে জিততে পারে। এটাই তো একটা জমজমাট টি-টোয়েন্টি লিগের আসল মজা। তবে প্রিটোরিয়ার শোয়েন স্পার্টান্স দলের অধিনায়ক হিসেবে বলতে পারি, আমাদের দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

আরও পড়ুন
‘আশা করছি পরের ম্যাচে বাদ যাব না’

সুপার লিগ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যাবে নতুন এমিরেটস্ টি-টোয়েন্টি লিগ। প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ-সহ সারা বিশ্বের নামী ক্রিকেটাররা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিভিন্ন মাঠে খেলবেন। আমি এই নতুন লিগের আন্তর্জাতিক দূত। আর এই লিগ নিয়ে প্রচুর আকর্ষণীয় পরিকল্পনা রয়েছে বলে শুনেছি।

দেখেশুনে মনে হচ্ছে সব ক্রিকেট খেলিয়ে দেশই কিছু না কিছু আলাদা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের টিভি দর্শকদের আকর্ষণ করার জন্য তারা অনেক কিছুই নতুন ও বৈচিত্রে ভরা পরিকল্পনা তৈরি করছে, যাতে প্রতিটি লিগই অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন লিগের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা ক্রিকেটের পক্ষেই ভাল। এ ভাবেই তো খেলাটা ক্রমশ আরও উন্নত হয়ে উঠবে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই টুর্নামেন্ট শেষ হতে হতে বড়দিন ও নতুন বছরের ছুটিও শেষ হয়ে যাবে আর তার পরে জানুয়ারিতে বাংলাদেশে শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। গত কয়েক বছর ধরে বিপিএল ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের যে প্রান্তেই থেকেছি, টিভিতে বিপিএল-এর ম্যাচ দেখেছি আমি। এ বার অবশ্য আমি দর্শক নই, খেলোয়াড় হিসেবে এই লিগে থাকব। রংপুর রাইডার্সের হয়ে মাঠে নামব। কোচ হিসেবে পাব টি-টোয়েন্টির অন্যতম সফল টম মুডিকে। আর সতীর্থ হিসেবে পাব ক্রিস গেল, অ্যালেক্স হেলসের মতো শক্তিতে ভরপুর কয়েক জন ক্রিকেটারকে, যাঁরা আশা করি মাতিয়ে রাখতে পারবেন রংপুর সমর্থকদের।

কারা যে বানিয়েছেন এই ঠাসা ক্রিকেট সূচি! মনে হচ্ছে যেন একটা ফর্মুলা ওয়ান শুরু হতে চলেছে।

বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ন কে, তা ঠিক হয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পরেই আবার টি-টোয়েন্টি লিগের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে দুবাইয়ে। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) মাধ্যমে। এই লিগের নক আউট পর্ব হওয়ার কথা পাকিস্তানেই। এই লিগও প্রতি বছর ফুলে-ফেঁপে বাড়ছে। আর এই লিগ নিয়ে এ বার আমি একটু বেশিই উত্তেজিত। কারণ, এই লিগেও আমি খেলছি। এবং প্রথম বার। কোন দলের হয়ে খেলব, তা অবশ্য ২০ নভেম্বর ড্রাফটের আগে জানতে পারব না। তবে ২০১৯-এর পিএসএলে অবশ্যই খেলছি।

তাও ভাল যে পিএসএল শেষ হওয়ার পরে ও ভারতে আইপিএল শুরুর আগে কয়েক সপ্তাহ বিশ্রাম পাব হয়তো। আইপিএল তো এপ্রিলে শুরু হওয়ার কথা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় টি-টোয়েন্টি লিগ যে এই আইপিএল, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (আরসিবি) দলে বিরাট কোহালির সঙ্গে ফের মাঠে নামার জন্য এখন থেকেই ছটফট করছি বলতে পারেন। এ বার আরও পরিশ্রম করে গত বারের সমস্ত ব্যর্থতা মুছে দেওয়াটাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আরসিবি-র যে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রসদ আছে, তা সবাই জানে। কিন্তু কেন বারবার ব্যর্থ হতে হয়েছে আমাদের, তা কারও জানা নেই। তবে সেই দিন বেশি দূরে নেই বোধহয়। ২০১৯-এই হয়তো আমরা আইপিএল জিততে পারব।

শুনছি ভারতে নির্বাচনের জন্য আগামী আইপিএল পুরোটা সে দেশে নাও হতে পারে। আইপিএল ভারতে ছাড়া ভাবাই যায় না। লোকে লোকারণ্য গ্যালারিতে হাজার হাজার দর্শকের উল্লাসের মধ্যে খেলার উত্তেজনাই অন্য রকমের। এই পরিবেশ অন্য কোথাও পাইনি। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো থাকেই। সে সব বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।

এর আগে আইপিএল যেমন ২০০৯-এ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, এ বারেও নাকি সে রকমই হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। বিকল্প আয়োজক দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা বা আরব আমিরশাহির কথা শোনা যাচ্ছে। আমিরশাহিতে হলে সেখানকার মাঠকর্মীরা পিএসএলের পরে উইকেটগুলো যত্ন করে তৈরি রাখবেন নিশ্চয়ই। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়। তবে যেখানেই হোক, আইপিএল নিঃসন্দেহে সাত সপ্তাহের এক অসাধারণ টি-টোয়েন্টি লিগ হয়ে উঠবে বরাবরের মতোই।

এ সব কিছু শেষ হওয়ার পরে সারা ক্রিকেটবিশ্ব ছুটবে ইংল্যান্ডের দিকে, যেখানে অপেক্ষা করে থাকবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। লর্ডসে ১৪ জুলাই বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ হবে সাদা বলে, উত্তেজনায় ঠাসা, তীব্র প্রতিযোগিতার টানা আট মাসের ক্রিকেট অধ্যায়। এর সঙ্গে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও চলবে পাল্লা দিয়ে। টেস্ট, ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে বহু দেশ।

ক্রিকেটের ইতিহাস এমন দীর্ঘ ও উত্তেজনায় ঠাসা সূচি আর কখনও দেখেছে? সন্দেহ আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket AB de Villiers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE