Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
শীর্ষে কলকাতা

জনের পেশি চুপসে দেওয়ার পর এ বার সামনে সাদা শার্ট

শুনশান লোখড়া হাইওয়ে মধ্যবর্তী স্টেডিয়ামে তাঁকে আবিষ্কার করা গেল যখন, ঠিক সন্ধে ছ’টা বাজে। মাথায় কালো স্কালক্যাপ। গায়ে সাদা নর্থ-ইস্ট জার্সি। পায়ে স্রেফ চটি! দেখে কে বুঝবে, ইনি আর পাঁচ জন সাধারণ দর্শক নন, হাইপ্রোফাইল তারকা-বিশেষ।

২-১ করে বেলেনকোসোর দৌড়। শুক্রবার। -নিজস্ব চিত্র

২-১ করে বেলেনকোসোর দৌড়। শুক্রবার। -নিজস্ব চিত্র

সোহম দে
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২০
Share: Save:

শুনশান লোখড়া হাইওয়ে মধ্যবর্তী স্টেডিয়ামে তাঁকে আবিষ্কার করা গেল যখন, ঠিক সন্ধে ছ’টা বাজে।

মাথায় কালো স্কালক্যাপ। গায়ে সাদা নর্থ-ইস্ট জার্সি। পায়ে স্রেফ চটি! দেখে কে বুঝবে, ইনি আর পাঁচ জন সাধারণ দর্শক নন, হাইপ্রোফাইল তারকা-বিশেষ।

ইনি, জন আব্রাহাম। সত্যি বলতে, তাঁকে দেখে ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে বিকট চিৎকারটা না উঠলে আলাদা করে বোধহয় খেয়াল হত না!

‘ঢিশুম’, ‘ধুম’, ‘দোস্তানা’র মতো এত হিট ছবি দিয়েছেন নিজের ফিল্ম জীবনে। কিন্তু জন আব্রাহামকে দেখে তা বিশেষ বোঝার উপায় নেই। বরং আলগা একটা সারল্য লেগে থাকে বলিউডি গ্ল্যামারের মধ্যেও। শুক্রবার যেমন। নায়ক স্টেডিয়ামে ঢুকেই সোজা গ্যালারির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। গ্যালারির ব্যারিকেড উপচে ততক্ষণে সমর্থকেরা তাঁকে ছুঁতে চাইছে। জনকে দেখা গেল, দিব্যি পাল্টা ওয়েভ ফিরিয়ে দিচ্ছেন। পাঁচ মিনিট পর ডাগআউটে। সেখানে সুব্রত পালদের সঙ্গে প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলি সেলিব্রেশন। ম্যাচ শুরু হল, এ বার তারকার ঠিকানা ভিভিআইপি বক্স, আর সেখানেও বা কম কী? কখনও শিশুর উচ্ছ্বাসে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়ছেন আকাশে। কখনও আবার আলফারোর গোলের সময় সোজা মাসল ফোলাতে ব্যস্ত! যেন বোঝাতে চাইছেন, দেখো কলকাতা আমার টিমের পেশিশক্তি দেখো রাখো!

কে ভেবেছিল, তা শুধু ম্যাচের প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। দ্বিতীয়ার্ধ দেখবে অন্য এক ‘বাহুবলী’-র আবির্ভাব। দেখবে, এক পর্তুগিজ ফুটবল-দস্যুর কামব্যাক! যিনি জনের বাইসেপস স্রেফ একটা হেডে চুপসে দিয়ে চলে যাবেন!

হাড্ডাহাড্ডি। শুক্রবার এটিকে ম্যাচে। -পিটিআই

ম্যাচ শেষের ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামকে দেখলে যে কারও খারাপ লাগত। বিষণ্ণ, বিমর্ষতার চাদরে যেন ঢেকে গেল গোটা স্টেডিয়ামটা। আইএসএল থ্রি নিয়ে চারদিকে বলাবলি চলছে যে, এ বার নাকি টুর্নামেন্টের তেমন উন্মাদনা নেই। যাঁদের এটা মনে হয়, তাঁদের বোধহয় একবার করে গুয়াহাটি ঘুরে যাওয়া উচিত। কেউ পাগলের মতো টানা চিৎকার করছেন ‘গো গো নর্থ-ইস্ট।’ কেউ মাঠে এসেছেন প্রিয় টিমের হেডব্যান্ড পরে। ডান দিক থেকে বাঁ দিক—যে দিকে চোখ যায়, সাদা জার্সির ঢল। পুরো যেন লস ব্ল্যাঙ্কোস! অথচ ম্যাচ শেষের পর কাউকে টুঁ শব্দও করতে শোনা গেল না। প্রচুর দর্শক তো আগেভাগে বেরিয়ে চলে গেলেন। জন— তিনি একটা সময় লাফাচ্ছিলেন, মাসল দেখাচ্ছিলেন, নাচছিলেন। ঠিক ফ্যারেল উইলিয়ামসের ‘হ্যাপি’ গানটার মতো। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেই জনের মাথায় কোনও কালো স্কালক্যাপ পাওয়া গেল না। সেই স্পিরিটটাই আর পাওয়া গেল না, যা বলিউড তারকাকে ফুটবল দুনিয়ার সঙ্গে অনায়াসে খাপ খাইয়ে দেয়। বললে তখন কে বিশ্বাস করত, এই একই লোক বিরতিতে অসম্ভব টগবগ করছিলেন। বলছিলেন, আমাদের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন এ বার হতেই হবে।

জন বোধহয় বুঝতে পারেননি ফুটবলটা অসম্ভব নিষ্ঠুর খেলা। এখানে আজ যে রাজা, কাল সে ফকির।

অথচ একটা সময় পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, জনের পেশি-প্রদর্শনই বোধহয় তাঁর টিমেরও প্রতীকী হয়ে থাকবে। একে তো কলকাতার মলিনা নেই। মানে, ডাগআউটের থেকে সেই চিৎকার-চেঁচামেঁচি মেশানো উদ্দীপনার টোটকাটাই নেই। চেলসিতে ডাগআউটে যে কাজটা করেন আন্তোনিও কন্তে, এটিকেতে করেন মলিনা। তার মধ্যে এটিকে আবার প্রথমে গোল খেয়ে গেল। দেখা গেল, টিম গোল খাওয়ার সময় পাশে থাকা আলবার্তো মারেরোকে হাতের ইশারায় কী যেন একটা বোঝালেন মলিনা। কে জানে হয়তো বলছিলেন, এটা কী ডিফেন্ডিং ছিল? কিন্তু ম্যাচটা ওই মলিনাই ঘুরিয়ে দিলেন স্রেফ একটা মুভে। দ্যুতির জায়গায় পস্টিগা। ডাবল স্ট্রাইকারে চলে যাওয়া। কাউন্টার করা। আর উইং থেকে ঘনঘন ক্রস করা। ব্যস, আর তাতেই কেল্লাফতে। পস্টিগার দুর্দান্ত হেড দিয়ে গোল। বেলেনকোসোর পোচার্স ফিনিশ। এক কথায়, লস ব্ল্যাঙ্কোসের ডেরায় এসে দাদাগিরি শেষ রোজিব্ল্যাঙ্কোদের। জন নয়, গ্যালারিতে তখন মলিনার নাচানাচি। টিমের কোনও অন্ধ সমর্থকের মতো ‘কাম অন, কাম অন’ চিৎকারে গলা ফাটিয়ে ফেলা।

পরে সাংবাদিক সম্মলনে এসে নর্থ-ইস্ট কোচ নেলো ভিনগাদা বলছিলেন, ‘‘আমরা ম্যাচটা থেকে আরও বেশি কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু কলকাতা সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে বেরিয়ে গেল।’’ তখন আর বলে কী লাভ? নির্বাসনে থেকেও মলিনা তো আসল কাজটা করে চলে গেলেন। পাহাড়ে এসে পাহাড় জয় করে। আরও এক সাদা জার্সির ডেরায় এসে সাদা জার্সি জয় করে। তবে না, সাদার বিরুদ্ধে আটলেটিকো অভিযান যে আজই শেষ হল তা নয়। কয়েক দিনের মধ্যেই আছে। সাদা জার্সি নয়, প্রতিপক্ষ এ বার সাদা শার্ট।

ঠিকই ধরেছেন। ভদ্রলোকের নাম আন্তোনিও লোপেজ হাবাস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Atletico Kolkata North East United ISL2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE