Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুখের হল না প্রত্যাবর্তন, ইডেনে রাসেল-ঝড়ে বিদ্ধ গম্ভীর

সোমবার ইডেনে দেখা গেল আর এক জনকে— আন্দ্রে রাসেল। রীতিমতো ‘বুক ক্রিকেট’-এর ঢঙে ব্যাট করে রাসেল করে গেলেন ১২ বলে ৪১।

বিধ্বংসী: ইডেনে রাসেল তাণ্ডব। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে করলেন ১২ বলে ৪১। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

বিধ্বংসী: ইডেনে রাসেল তাণ্ডব। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে করলেন ১২ বলে ৪১। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৯
Share: Save:

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে একটা রসিকতা চালু আছে ক্রিকেট মহলে। বলা হয়, সারা বছর ধরে বিশ্বের কোনও না কোনও শহরে তাঁরা ছক্কা মেরে যাচ্ছেন!

রবিবার মোহালিতে ছিলেন এক জন— ক্রিস গেল। সোমবার ইডেনে দেখা গেল আর এক জনকে— আন্দ্রে রাসেল। রীতিমতো ‘বুক ক্রিকেট’-এর ঢঙে ব্যাট করে রাসেল করে গেলেন ১২ বলে ৪১। স্ট্রাইক রেট? অবিশ্বাস্য ৩৪১.৬৬! ছক্কা মারলেন ছ’টি। এবং কী সব শট! কখনও পয়েন্টের উপর দিয়ে স্কোয়ার কাট করে ছয় মারলেন মহম্মদ শামিকে। এবং, শামি কিনা দ্রুততম পেসারদের এক জন! আবার কখনও পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে ব্যাকফুটে বল তুলে দিলেন লং অফের উপর দিয়ে। কতটা শক্তি থাকলে ওই শটটা খেলা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলতে থাকবে।

রাসেল যখন ব্যাট করতে এলেন, কলকাতা নাইট রাইডার্সের অবস্থাও বেশ আশঙ্কাজনক। ১৩.৪ ওভারে তারা তখন ১১৭-৪। বোকার মতো আউট হয়েছেন দীনেশ কার্তিক। পরপর দু’টি বলে মিডউইকেট দিয়ে দু’টি চার মারলেন কেকেআর অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টিতে সেরা অধিনায়কদের এক জন গৌতম গম্ভীর স্কোয়ার লেগ থেকে ট্রেন্ট বোল্টকে তুলে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন মিডউইকেটে। পাড়ার ক্রিকেটেও ব্যাটসম্যান বুঝবে যে, মাচা বাঁধা হয়েছে। একই রাস্তা ধরে শিকারে যেতে গেলেই গুলি খেয়ে মরতে হবে। কার্তিক ওখান দিয়েই মারতে গেলেন আর ধরা পড়লেন গম্ভীরের পাতা ফাঁদে। এর পরেও এই কার্তিকই কিনা নিয়ে গেলেন ‘নই সোচ’ নামক পুরস্কার। যেটা দেওয়া হয় বুদ্ধিমত্তার স্বীকৃতি হিসেবে!

রাসেলের অত সব নতুন ভাবনা ভাবতে বয়ে গিয়েছে। তাঁর ক্রিকেটে পরিষ্কার দর্শন— হাতে গদার মতো ব্যাট আছে, বোলারকে সামনে পেলেই তুলোধোনা করো। কেকেআরের ইনিংসের মাঝপথে ধরা পড়া ‘রক্তাল্পতা’ ঠিক করে দিতে তিনি নিলেন মাত্র ১২ বল। যখন আউট হলেন, দলের স্কোর ১৭৮-৫। ইডেনের বোলার-সহায়ক পিচে জেতার মতো স্কোর উঠে গিয়েছে।

আগের দিনের মতো ঝড় ওঠেনি ইডেনে। বৃষ্টি আসেনি। হাউসফুল না হলেও মাঠ অন্তত আশি শতাংশ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। শাহরুখ খানের দেখা এ দিনও পাওয়া যায়নি। গত কয়েক বছর ধরেই এটা চলছে। খুব বেশি ম্যাচে আসছেন না তিনি। প্রশ্ন থাকছেই, শাহরুখের সত্যিই কি মোহভঙ্গ হয়েছে আইপিএল নিয়ে? ইডেনের যদিও পয়সা উসুল রাসেলের ছক্কার ফুলঝুরিতে। পুরস্কার মঞ্চটা এ দিন যেন ভুলে ভরা ছিল। ম্যাচের সেরার পুরস্কারটিও রাসেলকে না দিয়ে নীতীশ রানাকে দেওয়া হল। অথচ ৭ রানে তাঁর কঠিন ক্যাচ পড়ার পরে কালবৈশাখী হয়ে গম্ভীরের দিল্লিকে উড়িয়ে দিলেন তো রাসেলই।

এমনিতে টি-টোয়েন্টিতে গম্ভীর খুবই ধুরন্ধর অধিনায়ক। শুরুতে সুনীল নারাইনকে আক্রমণ করলেন পেসার দিয়ে। জেনেবুঝে যে, নারাইন গতি এবং শর্ট বলের বিরুদ্ধে নড়বড়ে। আবার ক্রিস লিন স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্বল। এ বারের আইপিএলে দু’বার বাঁ হাতি স্পিনে আউট হয়েছেন। নারাইন আউট হতেই তাই গম্ভীর নিয়ে এলেন শাহবাজ নাদিমকে। কিন্তু তাঁর সব হিসেব ওলটপালট করে দেন রাসেল। এত দিন নাইট সংসারে থাকার সময় গম্ভীরকে কত ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি। কে জানত, এমন দিনও আসবে যখন রাসেল জিতবেন, কিন্তু গম্ভীর জিতবেন না! ক্রিকেট যেমন দেয়, তেমন যে কেড়েও নেয়!

যুগলবন্দি: ম্যাচ জেতালেন যাঁরা। রানা আর রাসেল। দুই ব্যাটসম্যানের দাপটে কেকেআর ৭১ রানে হারাল দিল্লিকে। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

৭১ রানে জিতে প্রতিযোগিতায় ফিরে এল নাইট রাইডার্স। একটা দলে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। দু’জনেই ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার। আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারাইন। এক জন ব্যাটে ঝড় তুললেন। আর এক জন নিয়ে গেলেন ১৮ রানে তিন উইকেট। আর হায় দিল্লি, তারা দলে কোনও ক্যারিবিয়ানই রাখেনি! অথচ, আইপিএলে প্রত্যেকটি দলের সাফল্যের নেপথ্যে এক জন ক্যারিবিয়ান। সকলে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সই করানোর জন্য ছুটছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে কায়রন পোলার্ড। কলকাতা নাইট রাইডার্সে নারাইন এবং রাসেল। চেন্নাই সুপার কিংসে ডোয়েন ব্র্যাভো। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে ছিলেন ক্রিস গেল। এখন তিনি কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে। রবিবার দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনও ঘটিয়েছেন ‘ইউনিভার্স বস্’।

আর গম্ভীর? ইডেনকে বলতেন তাঁর দ্বিতীয় ঘর। সেখানে ফিরে দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ সংবর্ধনা পেলেন। ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’-এর কী অসাধারণ বিজ্ঞাপন! দু’বার ট্রফি দেওয়া তিনি প্রতিপক্ষ জেনেও ‘গোতি গোতি’ বলে উৎসাহ দিল ইডেন। আর একটি দৃশ্যও মনে গেঁথে থাকার মতো। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে এগিয়ে চলেছেন ৩৫ বলে ৫৯ করা নীতীশ রানা (পাঁচটি চার ও চারটি ছয়)। শূন্য দৃষ্টিতে দিল্লি অধিনায়ক তাকিয়ে রইলেন। দিল্লির রঞ্জি ট্রফি দল থেকে রানাকে বাদ দেওয়া নিয়ে কোচের সঙ্গে ঝগড়া করেছিলেন গম্ভীর। ব্যাটিংয়ের খুঁতও নিজে হাতে সারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

সোমবার ইডেনে নীতীশ গুরুদক্ষিণা দিলেন। গম্ভীরকে হারিয়ে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE