—নিজস্ব চিত্র।
অমিত মিশ্রকে ভাল কিছু করতে দেখলে বরাবর আলাদা আনন্দ হয়। একটা অদ্ভুত তৃপ্তি কাজ করে। শনিবার যেমন। দীপাবলিতে অমিত যখন ভারতকে দুর্ধর্ষ জয় এনে দিচ্ছে, টিভিতে ম্যাচটা দেখতে দেখতে তেরো বছর আগের ওয়েস্ট ইন্ডিজ মনে পড়ছিল আমার!
অমিতকে তো আজ থেকে চিনি না আমি। তেরো বছর আগে থেকে চিনি ওকে। স্কিল ওর বরাবর ছিল। হাতে ভাল টার্ন ছিল, গুগলিটা ভাল। কিন্তু প্রথম দেখায় আমি এ সব দেখে মুগ্ধ হয়ে যাইনি। গিয়েছিলাম, ওর দাপুটে মনোভাব দেখে।
ভারত ‘এ’ টিমের কোচ আমি তখন। মুরলী কার্তিক নেই। ভরসা বলতে অমিত। নামটা এখন আর মনে নেই, কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন ব্যাটসম্যান তখন খুব মারছিল। বেশ চিন্তায় ছিলাম ওকে থামানো নিয়ে। মনে আছে, আমাকে টেনশনে দেখে অমিত আচমকা বলেছিল স্যর, ভাববেন না। কাল ওকে দু-তিন ওভারের মধ্যে তুলে নেব! পরের দিন কিন্তু নিলও অমিত। বুকের পাটাটা একবার ভেবে দেখুন।
যে দমটা শুধু বিশাখাপত্তনম নয়, গোটা নিউজিল্যান্ড ওয়ান ডে সিরিজে অমিতের মধ্যে দেখলাম। তেরো বছরে ওর মনোভাব এতটুকু বদলায়নি। বরং স্কিলের সঙ্গে আরও ধারালো হয়েছে।
বিশাখাপত্তনমটা আগে বলি। কেউ ভাবতে পেরেছিল, ২৭০ তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড মাত্র ৭৯ অলআউট হয়ে যাবে? গোটা ইনিংসটা টিকবে মাত্র ২৩ ওভার? কেউ ভেবেছিল, অমিত ওদের একা শেষ করে দেবে? ৬-২-১৮-৫-এর অবিশ্বাস্য ফিগারে শেষ করে সিরিজ সেরার পুরস্কার নিয়ে বেরিয়ে যাবে? আমি তো পারিনি। বিশাখাপত্তনম উইকেট যা ছিল, তাতে নিউজিল্যান্ড যে ওকে সামলাতে পারবে না জানতাম। কিন্তু এতটা নাকানিচোবানি খাবে, বুঝিনি। বুঝিনি, ৬৩-৩ থেকে নিউজিল্যান্ড স্রেফ অমিতকে খেলতে না পেরে ৭৯ অলআউট হয়ে যাবে। ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোরে শেষ করবে।
একটা সময় মনে হচ্ছিল, অমিত বোধহয় প্রত্যেক বলে উইকেট পাবে! ওর লেগস্পিন, গুগলি— কেউ দেখলাম বুঝতেই পারছে না। অমিত অবিশ্বাস্য বল করা শুরু করতে ধোনিকেও দেখলাম, পুরো টেস্ট ম্যাচ ফিল্ড প্লেস করে দিল। ঘাড়ের কাছে চার-পাঁচজন দাঁড় করিয়ে দিল। একটা সময় ছিল, যখন ধোনি ওকে খুব একটা ভরসা করত না। আজ সেই ধোনিকে দেখলাম, ওকে তীব্র অ্যাটাকিং ফিল্ড দিচ্ছে। মনে হয় ধোনিও বুঝতে পেরেছে অমিতের উপর এখন অনায়াসে ভরসা করা যায়।
যা-ই হোক, যা বলছিলাম। বিশাখাপত্তনমে অমিত যে বলটা করেছে, তাতে ওর এই ম্যাচটা নিয়ে বেশি লেখালেখি হবে। কিন্তু আমি তুলে আনতে চাই সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোকে। যেখানে শনিবারের মতো স্পিন-সহায়ক উইকেট না পেয়েও অমিত নিয়মিত উইকেট তুলেছে। তাতে যেমন স্কিল লেগেছে, তেমন লেগেছে মনের জোর। কে না জানে, লেগস্পিনার উইকেট নেয় কিন্তু সে কখনও কখনও খরুচেও হয়। মার অমিতও খায়। কিন্তু ভয় পায় না বলে, ওকে হারানো সহজ হয় না। ভারতীয় টিমে নিয়মিত না হয়েও সিরিজ সেরা হয়ে বেরিয়ে যায়। এই সিরিজে পনেরো উইকেট নিয়ে যা হল অমিত। অথচ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট স্কোয়াডে থেকেও একটা ম্যাচ খেলেনি। কিন্তু ওয়ান ডে বোলিং দেখে সে সব বোঝা গেল কি? আসলে হতাশ শব্দটাই ওর ডিকশনারিতে নেই।
আমার মতে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজেও প্রথম এগারোয় অমিতের নিয়মিত জায়গা হওয়া উচিত। না হলে কিন্তু অবিচার হবে। আর তিন স্পিনার নিয়ে খেললে বিরাটের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। লিখে দিচ্ছি, অশ্বিন-জাডেজার সঙ্গে এই অমিতকে সামলানো মুশকিল হবে ইংল্যান্ডের। আরও একটা কথা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ভারত খুব বেশি ম্যাচ পাচ্ছে না বলে নিউজিল্যান্ড সিরিজকে অন্যতম সেরা প্রস্তুতি মঞ্চ বলে ধরা হচ্ছিল। আমার মতে, সেই প্রস্তুতিটা বেশ ভাল হয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে উড়িয়ে দিতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু ফাঁকফোকরগুলো মেরামত করে নেওয়া গিয়েছে।
অশ্বিন-জাডেজাকে এই সিরিজে খেলায়নি ভারত। কিন্তু অমিত-অক্ষরের পারফরম্যান্স বোঝালো, ঘরের মাঠে অশ্বিনরা কোনও কারণে না পারলেও ভারতের অসুবিধে হবে না। মিডল অর্ডারে কেদার যাদব যা খেলল, তার পর মনে হয় সুরেশ রায়নার ঢোকা কঠিন। ওপেনিংয়ে এত দিন রোহিত শর্মা রান পাচ্ছিল না। সিরিজের আসল ম্যাচে সেটাও হয়ে গেল। বিশাখাপত্তনম উইকেটে শনিবার রোহিতের ৭০ রান কিন্তু সেঞ্চুরির সমান। বিরাটের ইনিংসটাও সমান গুরুত্বের।
ম্যাচের সেরা, সিরিজেরও। অমিত মিশ্র: ৫-১৮। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
ওহ্, আর এক জনের কথা বলা হয়নি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সিরিজটা কিন্তু ধোনিকে নতুন ভাবে পেশ করে গেল। দেখাল, কিপিংয়ে ও এখনও ক্ষিপ্র। আর ব্যাটিংয়ে নিজেকে চার নম্বরে তুলে আনাটা দুর্দান্ত মুভ। ওটাই ওর পজিশন হওয়া উচিত এর পর থেকে। দু’টো বাদ দিলে পড়ে থাকে অধিনায়কত্ব। একটা উদাহরণ দিই। আজ তিন স্পিনারে (কেদারকে ধরলে চার) যাওয়াটা ওর মাস্টারস্ট্রোক। আসলে বিশাখাপত্তনম বরাবর ধোনির ভাল যায়। জীবনের প্রথম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি এখানে। এগারো বছর আগে। এগারো বছর পরের বিশাখাপত্তনমও বোধহয় ধোনিকে ওর অন্যতম সেরা দীপাবলি উপহার দিয়ে গেল।
আজকের পর নিশ্চয়ই ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি থেকে ধোনি-হঠাও আওয়াজ বেশ কিছু দিন উঠবে না!
ভারত: রাহানে ক ল্যাথাম বো নিশাম ২০, রোহিত ক নিশাম বো বোল্ট ৭০, বিরাট ক গাপ্টিল বো সাউদি ৬৫, ধোনি এলবিডব্লিউ স্যান্টনার ৪১, মণীশ ক বোল্ট বো সোধি ০, কেদার ন.আ. ৩৯, অক্ষর বো বোল্ট ২৪, জয়ন্ত ন.আ. ১, অতিরিক্ত ৯, মোট (৫০ ওভারে) ২৬৯-৬। পতন: ৪০, ১১৯, ১৯০, ১৯৫, ২২০, ২৬৬। বোলিং: সাউদি ১০-০-৫৬-০, বোল্ট ১০-০-৫২-২, নিশাম ৬-০-৩০-১, স্যান্টনার ১০-০-৩৬-১, সোধি ১০-০-৬৬-২, অ্যান্ডারসন ৪-০-২৭-০।
নিউজিল্যান্ড: গাপ্টিল বো উমেশ ০, ল্যাথাম ক জয়ন্ত বো বুমরাহ ১৯, উইলিয়ামসন ক কেদার বো অক্ষর ২৭, টেলর ক ধোনি বো মিশ্র ১৯, নিশাম বো মিশ্র ৩, ওয়াটলিং বো মিশ্র ০, অ্যান্ডারসন এলবিডব্লিউ জয়ন্ত ০, স্যান্টনার বো অক্ষর ৪, সাউদি স্টাঃ ধোনি বো মিশ্র ০, সোধি ক রাহানে বো মিশ্র ০, বোল্ট, অতিরিক্ত ৬, মোট (২৩.১ ওভারে) ৭৯। পতন: ০, ২৮, ৬৩, ৬৬, ৬৬, ৭৪, ৭৪, ৭৪, ৭৬। বোলিং: উমেশ ৪-০-২৮-১, বুমরাহ ৫-০-১৬-১, অক্ষর ৪.১-০-৯-২, মিশ্র ৬-২-১৮-৫, জয়ন্ত ৪-০-৮-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy