Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
কুয়ালা লামপুরে সেমিফাইনাল থেকেই র‌্যাঙ্কিং ধরে রাখার লড়াই সাইনার

চেয়েছিলাম কোচ ২৪ ঘণ্টা খেলার কাটাছেঁড়া করুক

ফোন ধরলেন কুয়ালা লামপুরের দুপুরে। হোটেলে চেক ইন করেছেন ঘণ্টাদুয়েকও হয়নি। গত পাঁচ দিন রোজ খেলে ইন্ডিয়া ওপেন জেতার তিন ঘণ্টার ভেতর রবিবার মধ্যরাতে দিল্লি বিমানবন্দর ছুটেছিলেন ফ্লাইট ধরতে। প্রচণ্ড ক্লান্ত। তার মধ্যেই বিশ্বের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার সাইনা নেহওয়াল তাঁর শীর্ষে ওঠার রোডম্যাপ থেকে শুরু করে বর্তমান কন্ডিশন, কোচ নাকচের কারণ, নয়া মানসিকতা, সিংহাসন ধরে রাখার গেমপ্ল্যান...সব কিছু নিয়ে কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।

দিল্লি ছাড়ার আগে মায়ের সঙ্গে সাইনা নেহওয়াল। ছবি: টুইটার

দিল্লি ছাড়ার আগে মায়ের সঙ্গে সাইনা নেহওয়াল। ছবি: টুইটার

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৫
Share: Save:

ফোন ধরলেন কুয়ালা লামপুরের দুপুরে। হোটেলে চেক ইন করেছেন ঘণ্টাদুয়েকও হয়নি। গত পাঁচ দিন রোজ খেলে ইন্ডিয়া ওপেন জেতার তিন ঘণ্টার ভেতর রবিবার মধ্যরাতে দিল্লি বিমানবন্দর ছুটেছিলেন ফ্লাইট ধরতে। প্রচণ্ড ক্লান্ত। তার মধ্যেই বিশ্বের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার সাইনা নেহওয়াল তাঁর শীর্ষে ওঠার রোডম্যাপ থেকে শুরু করে বর্তমান কন্ডিশন, কোচ নাকচের কারণ, নয়া মানসিকতা, সিংহাসন ধরে রাখার গেমপ্ল্যান...সব কিছু নিয়ে কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।

প্রশ্ন: এক নম্বরে ওঠা আর দেশের মাঠে প্রথম সুপার সিরিজ জেতার সেলিব্রেশন কী রকম হল?

সাইনা: শনিবার এক নম্বর হয়ে আর সেলিব্রেট করার সুযোগ ছিল না। পরের দিনই ফাইনাল ম্যাচ থাকায়। আর কাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তিন ঘণ্টার ভেতর এয়ারপোর্ট ছুটলাম মালয়েশিয়ার ফ্লাইট ধরতে। আমার মা পর্যন্ত আমাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এক ঝলক দেখার জন্য কাল স্টেডিয়ামে প্লেয়ার্স লকাররুমের সামনে অপেক্ষা করছিলেন! এতটাই টাইট শি়ডিউল আমার।

প্র: দিল্লিতে আপনার জেতা সোনার মেডেলটা নিয়ে?

সাইনা: একদম তাই। আমার জেতা সমস্ত ট্রফি, মেডেল আমাদের গাচিবোল্লির বাড়িতে বাবা সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখেন। মা ইন্ডিয়া ওপেনের সোনার মেডেলটাও বাড়ি ফিরে বাবার হাতে দেবেন।

প্র: সেলিব্রেট করার উত্তরটা কিন্তু পেলাম না এখনও?

সাইনা: ওহ! কাল রাত থেকে যত পেরেছি আইসক্রিম, মিল্কশেক আর চকোলেট খেয়ে চলেছি। তিনটেই আমার ভীষণ প্রিয় খাবার। আর কুয়ালা লামপুরেও সঙ্গে আমার প্রিয় নায়ক শাহরুখ খানের গোটাতিনেক লেটেস্ট মুভির ডিভিডি এনেছি। আজ সারা দিন বিশ্রাম নেব আর ওগুলো চালিয়ে দেখব। এ সবকেই সেলিব্রেট করা বললে বলতে পারেন।

প্র: মালয়েশিয়ান ওপেন তো প্রিমিয়ার সুপার সিরিজ। লড়াই নিশ্চয়ই আরও কঠিন?

সাইনা: আরও কঠিন মানে! বিশ্বের সমস্ত টপ প্লেয়ার খেলছে। মঙ্গলবারই যা সারা দিন প্র্যাকটিস, কন্ডিশনিং করার সময়। বুধবার থেকে রবিবার টানা ম্যাচ। যদি অবশ্য ফাইনাল পর্যন্ত টিকে থাকতে পারি। চিনের ওরা তিন জনই এখানে আছে— জুয়েরুই, ইহান, শিজিয়ান। বুঝতেই পারছেন লড়াইটা কেমন হবে।

প্র: এক নম্বর র‌্যাঙ্কিং থাকবে তো?

সাইনা: সেটা তো এমনিতেই এই সপ্তাহের বৃহস্পতিবার প্রথম বেরোবে। মালয়েশিয়ান ওপেনের পারফরম্যান্সের সঙ্গে আপাতত কোনও সম্পর্ক নেই। তবে যত দূর জানি, এখানে সেমিফাইনালে উঠলেও সম্ভবত আমার র‌্যাঙ্কিং থেকে যাবে।

প্র: সেমিফাইনালেই আসল লড়াই কুয়ালা লামপুরে বলছেন?

সাইনা: হ্যাঁ। যেহেতু এই টুর্নামেন্টের বাছাই তালিকা তৈরির সময় আমার পুরনো তিন নম্বর র‌্যাঙ্কিং ছিল, সে জন্য এখানে আমি তৃতীয় বাছাই হিসেবে সেমিফাইনালে শীর্ষ বাছাই জুয়েরুইয়ের বিরুদ্ধে হয়তো খেলব, অথবা ইহানের সঙ্গে। সেটা পেরোলে ফাইনালে হয়তো সামনে পাব আর এক টপ ক্লাস চিনা প্লেয়ার শিজিয়ানকে। সে জন্য বলা যায়, আসল চ্যালেঞ্জ সেমিফাইনাল-ফাইনালেই।

প্র: কিন্তু এ বছর প্রথম তিন মাসে তো তিনটে টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে একটা সুপার সিরিজ-সহ দুটোয় চ্যাম্পিয়ন আপনি। প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসেবে অল ইংল্যান্ডের ফাইনাল খেলে ইতিহাসও তৈরি করেছেন।

সাইনা: হ্যাঁ। সে জন্যই তো আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চাইনিজ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নামব এখানে। আশা করি সফলও হব। অল ইংল্যান্ডেও তো ইহানকে হারিয়েছি।

প্র: আগে ঠিক কী সমস্যা ছিল? চিনা দেখলেই হারতেন কেন? অনেক বার তো এগিয়ে থেকেও শেষমেশ হেরে গিয়েছেন।

সাইনা: হয়তো আমি ওই বিগ ম্যাচগুলো ঠিক যে গেমপ্ল্যানে খেলতে চাইতাম, সেটার পূর্ণস্বাধীনতা পেতাম না। এখন যে রকম পাচ্ছি।

প্র: গোপীচন্দের সঙ্গ ত্যাগের কি সেটাই প্রধান কারণ?

সাইনা: আর বেশি কিছু জানতে চাইবেন না। আমারও এর বেশি কিছু বলা শোভনীয় নয়। গোপীস্যারেরও অনেক অবদান আছে আজ আমার এই জায়গায় পৌঁছনোর পিছনে।

প্র: কিন্তু এত দিনের কোচ এবং নিজের শহর ছেড়ে বেঙ্গালুরুতে বসবাস করে বিমল কুমারের কাছে ট্রেনিং নেওয়ার কারণটা তো আপনার অসংখ্য ফ্যানের জানার কৌতূহল থাকতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক।

সাইনা: চিনাদের কাছে হারতে হারতে আমি তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম। এমনও হয়েছে যে, হেরে কেঁদে ফেলেছি। গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতার পর তো মাত্র চব্বিশেই খেলা ছেড়ে দেব পর্যন্ত ভেবে ফেলেছিলাম। সেই সময় মনে হয়েছিল আমার দরকার সারাক্ষণ এক জন কোচের চোখের সামনে রোজ কম পক্ষে সাত-আট ঘণ্টা প্র্যাক্টিস করা। যাতে আমার ছোটখাটো ভুলত্রুটিও কোচের চোখ না এড়ায়। আমার খেলার প্রতিটা খুঁটিনাটি তিনি যেন খেয়াল রাখেন আর সেই মতো মেরামত করে দেন। আর সেটা বিমলস্যারের কাছে পাওয়ায় বেঙ্গালুরুতে গিয়ে থেকে ওঁর থেকে আরও ভাল ভাবে পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তা ছাড়া প্রকাশস্যারের (পাড়ুকোন) অ্যাকা়ডেমির কোনও তুলনা হয় না। আমার কেরিয়ারের এই পর্যায় ঠিক যে রকম ট্রেনিং দরকার তার সব কিছু ওখানে আছে।

প্র: তা হলে গোপীচন্দের থেকে বেশি সময় না পাওয়ায় তাঁর অ্যাকাডেমি ছেড়েছেন?

সাইনা: খানিকটা সে রকমই। আসলে আমি টুর্নামেন্ট না থাকলে বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। সারাক্ষণ যেন ইচ্ছে করে প্র্যাক্টিস করি। আর আমার সঙ্গে কোচ থাকুন। এটা সেই ছোটবেলায় ক্যারাটেতে ব্রাউন বেল্ট হওয়ার সময় থেকেই আমার কেমন যেন একটা অভ্যেস!

প্র: ছয় মাস আগের আর এখনকার সাইনার ভেতর কী তফাত?

সাইনা: এখন আমি অনেক বেশি ফিট, শক্তিশালী। কোর্টে আরও ফাস্ট। ফলে নেট প্লে, রিটার্ন স্ম্যাশ অনেক ভাল হচ্ছে। আর সবচেয়ে বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। এখন আমি কোনও গেমে পিছিয়ে পড়লেও নিজের গেমপ্ল্যান অনুযায়ীই খেলার সাহস পাই। বিমলস্যারও বলেন, তুমি যদি নিজের মতো খেলে ম্যাচে এগিয়ে থাক, তা হলে কোনও একটা সময় পিছিয়ে পড়লেও নিজের গেমপ্ল্যানে খেলেই আবার ঠিক লিড নিতে পারবে। কুছ পরোয়া নেহি বেটি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE