Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসা ঠিক চলছে, অরুণ সেরে যাবেন মাসচারেকেই

অসম্ভব বিরল ধরনের ক্যানসারে ভোগার পর ক্রমশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন অরুণ লাল। আমাদের ডাক্তারি পরিভাষায় ওঁর রোগের নাম ‘অ্যাডেনয়েড সিস্টিক কারসিনোমা’।

গৌতম মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৯:২৮
Share: Save:

অসম্ভব বিরল ধরনের ক্যানসারে ভোগার পর ক্রমশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন অরুণ লাল। আমাদের ডাক্তারি পরিভাষায় ওঁর রোগের নাম ‘অ্যাডেনয়েড সিস্টিক কারসিনোমা’। যা সাধারণত মুখগহ্বরে চোয়াল এবং সংলগ্ন এলাকায় হয়। এই ক্যানসারের বিশেষত্ব হল রোগ ছড়ায় স্নায়ু দিয়ে। তাই চিকিৎসার একটাই উপায়, অস্ত্রোপচার। যার প্রক্রিয়াটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।

সুখবর হল, মুখের এই ক্যানসার প্রাণঘাতী নয়। সঠিক চিকিৎসায় সেরে যায়। তবে উদ্বেগের দিকও আছে। স্নায়ুর মাধ্যমে ছড়ায় বলেই রোগে ঘিরে এই অনিশ্চয়তা থাকে যে, ভবিষ্যতে ফিরে আসতে পারে। নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে মুখের ভিতর বা লিম্ফ নোডে ছড়ায়। মাত্র দশ শতাংশ ক্ষেত্রে ফুসফুসে ছড়াতে পারে।

অরুণ লালকেও এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অরুণ লালের অস্ত্রোপচার একদম সঠিক পদ্ধতিতে হয়েছে। সব ঠিক থাকলে মাস চারেকে পুরো সুস্থ হয়ে যাবেন। চোয়ালের এই অস্ত্রোপচার দু’টো ভাগে হয়। এক্সিশন বা মুখগহ্বরের রোগগ্রস্ত অংশ কেটে বাদ দেওয়া এবং তার পর রিকনস্ট্রাকশন। যেখানে পা বা কোমর থেকে হাড় এবং পেশি নিয়ে বাদ যাওয়া অংশটাকে নতুন করে তৈরি করা হয়। সব মিলিয়ে দশ-বারো ঘণ্টার প্রক্রিয়া। সেরে উঠতে মাস দেড়েক লেগে যায়। অরুণ লালের ক্ষেত্রে শুনলাম রেডিয়েশন দিতে হচ্ছে। তাই ওঁর ক্ষেত্রে রিকভারি পিরিয়ডটা প্রায় চার মাস হবে।

সাধারণ লোকে ওঁর সমস্যাকে মুখের আর এক ধরনের ক্যানসার, ‘স্কোয়ামাস কার্সিনোমা’র সঙ্গে ভুল করতে পারেন। দু’টো রোগ কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। তামাক চিবোনোর অভ্যাসে ‘স্কোয়ামাস কার্সিনোমা’র সম্ভাবনা বাড়ে। এই ধরণের রোগীই সবচেয়ে বেশি পাই আমরা। কিন্তু অরুণ লালের যা হয়েছে সেটা অসম্ভব বিরল। আর সে জন্যই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ না হলে অন্য কোনও ডাক্তারের পক্ষেও এই রোগ ধরতে পারা বেশ কঠিন।

মুশকিল হল, রোগটা শুরু হয় মুখের ভিতর কোনও ছোট্ট ফোলা, ঘা বা যন্ত্রণা দিয়ে। রোগী সামান্য সমস্যা ভেবে জেনারেল ফিজিশিয়ান বা দাঁতের ডাক্তার দেখান। আমি নিশ্চিত, অরুণ লালও ভাবতে পারেননি তাঁর সমস্যাটা ক্যানসার। আমি বলব, সাধারণ চিকিৎসা করিয়ে দেড়-দু’মাসে ফল না পেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। এবং বায়েপসি করে দেখে নেওয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসায় এই ক্যানসার সেরে যায়। তবে দেরি হয়ে গেলে হাড়ে বা মজ্জায় ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।

রিল্যাপ্স করতে পারে বলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত ফলোআপ খুব জরুরি। সঙ্গে তামাক জাতীয় পদার্থ থেকে দূরে থাকা এবং মুখের নিয়মিত যত্ন নেওয়া চাই। তিন বছরের মধ্যে ফের সমস্যা না হলে সম্পূর্ণ নিরাময়ের সম্ভাবনা বাড়ে।

আমার কাছে অনেকে জানতে চাইছেন, অরুণ লালের সঙ্গে যুবরাজ সিংহের রোগের মিল আছে কি না। একেবারেই না। বায়োলজির দিক থেকে দুই ক্যানসারের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই মেরুতে। রোগের চরিত্র আলাদা, চিকিৎসার পদ্ধতিও। মিল বলতে দু’টোই সময়ে ধরা পড়লে পুরোপুরি সারে, প্রাণসংশয় থাকে না।

অরুণ লালের সমস্যা আর তার চিকিৎসাটা অবশ্য বেশি জটিল।

যুবরাজের হয়েছিল এক্সট্রা গোনাডাল জার্ম সেল টিউমর। সাধারণত বুকে বা পেটে হয়। মাতৃগর্ভে শিশুর অণ্ডাশয় নীচের দিকে নামার সময় তার কোনও অবশিষ্টাংশ শরীরের অন্য কোথাও থেকে গেলে তা থেকে এই ক্যানসার হয়। কেমোথেরাপিতে সারিয়ে দেওয়া যায়। এই রোগও ফিরতে পারে। তবে যুবরাজ চার বছরের উপর সুস্থ আছে। ধরে নেওয়া যায় রিল্যাপ্সের সম্ভাবনা খুব কম। তবু রোগ ফিরে এলে আবার কেমোথেরাপিতে সারিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু অরুণ লালের ক্যানসারের কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই। হঠাৎই হয়। স্নায়ু দিয়ে ছড়ায় বলে চিকিৎসা পদ্ধতি জটিল। রোগ ফিরলে আবার অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি নেই। মুখের রিকনস্ট্রাকশন যতই সফল হোক, কিছু না কিছু সমস্যা আর অস্বস্তি থেকেই যায়।

শল্যচিকিৎসক যতই দক্ষ হন না কেন, তিনি তো আর ভগবান নন। সবটা নিখুঁত করা সম্ভব হয় না!

(লেখক বিশেষজ্ঞ ক্যানসার সার্জেন)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arunlal Treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE