কখনও সমর্থকদের সবচেয়ে প্রিয় তো ছিলেনই না। উল্টে তাঁদের ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপও শুনতে হয়েছে। তবে আশিস নেহরার মূল্য কতটা সেটা বুঝেছেন তাঁর সতীর্থরা। ভারতীয় দলে, আইপিএলেও। তা সে ২০০৮-এ সচিন তেন্ডুলকরের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সেই হোক, ২০০৯ বীরেন্দ্র সহবাগের দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, ২০১১ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুণে ওয়ারিয়র্স বা ২০১৪-র পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। তাঁকে বলা হয় ক্রিকেটারের ক্রিকেটার, আরও স্পষ্ট করে বললে ক্যাপ্টেনের ফেভারিট।
কেন?
চাপের মুখে তাঁর মতো পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা খুব কমই দেখা গিয়েছে। বিশ্বকাপে ভারতের বোলিং বিভাগের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দারুণ। বিশেষ করে চাপে। তার পরও নেহরা একই পরিস্থিতিতে এখনও দেশের অন্যতম সেরা বোলার। ফিটনেসের সমস্যা তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে দ্রুত দাঁড়ি টেনে না দিলে জাতীয় দলে আরও কিছুদিন তাঁর দাপট দেখা যেত বলে মনে করেন অনেকেই। অবশ্য জাতীয় দলে কেরিয়ারের শেষ দিকেও তিনি ধোনির অন্যতম অস্ত্র ছিলেন। বিশেষ করে পাওয়ার প্লে-তে। যখন রান আটকানো বা উইকেট তোলা বা ফর্মে থাকা কোনও ব্যাটসম্যানের ব্যাটের ঝড় থামানো টার্গেট।
সব সময় যে তিনি সফল হয়েছেন তা নয়। তবে ক্যাপ্টেন যে তাঁর উপর ভরসা করতে পারেন সেটা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছেন নেহরা। ঠিক যে রকম দেখা গেল শুক্রবার আইপিএলেও। একদিকে কায়রন পোলার্ড আর অন্যদিকে রোহিত শর্মা। দুই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ব্যাটসম্যান তখন ওয়াংখেড়েতে ঝড় তুলে দিয়েছেন। চেন্নাই সুপার কিংসের কোনও বোলারকেই রেয়াত করছেন না। ২৭ বলে ৬৭ রান তুলে ফেলেছেন দু’জন। এক সময় ৫৭-৪ থেকে দলের রান রোহিত আর পোলার্ডের দাপটে ১৪ ওভারে পৌঁছে যায় ১২৪-এ। ঠিক সেই সময় ধোনি নেহরাকে বল করতে আসার ইঙ্গিত করেন।
প্রথমে নেহরা ঠিক বুঝতে পারেননি। তিনি পাল্টা ধোনিকে ইঙ্গিত করে বলতে চান, এখনই? এই প্রান্ত থেকেই বল করব? ধোনি ইঙ্গিতে হ্যাঁ বলতেই নেহরা যেন জীবন পেলেন। তবে সেই ওভারে বোলিং করতে এসে রাউন্ড দ্য উইকেটে ব্যাটসম্যানকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রথমে কাজের কাজ কিছু হচ্ছিল না।
সেই ওভারের শেষ বল। নেহরার চার নম্বর অর্থাৎ শেষ ওভারও। রোহিতকে স্লোয়ার অস্ত্রে ঘায়েল করার চেষ্টা করলেন নেহরা। মোহিত শর্মা বা জেমস ফকনারের মতো ঘাতক নয়। গড় গতির সঙ্গে তাঁর স্লোয়ারের আকাশ-পাতাল তফাৎও হয়ে যায় না। নেহরার স্লোয়ার ডেলিভারি হয়তো গড়ের থেকে ১০ কিমি কম গতিতে আসে। সেটাই অনেক সময়ই ঘাতক হয়ে যায়। শুক্রবারও ব্যতিক্রম হল না। রোহিত বড় শট নিতে গিয়ে ফসকালেন। ক্যাচ উঠল লং অনে। ম্যাচটা সেখানেই ঘুরে যায়। তার আগেও পার্থিব পটেল আর কোরি অ্যান্ডারসনের উইকেট তুলে নিয়ে নেহরাই শুরুর ঝটকাটাও দিয়েছিলেন। রোহিতের উইকেটটা তাই মুম্বইয়ের কফিনে তাঁর শেষ পেরেক পোঁতার মতো। ওয়াংখেড়ের রাতটা এ ভাবেই উজ্জ্বল করে রাখলেন নেহরা। ক্যাপ্টেনের আস্থা রেখে। ক্যাপ্টেনের ফেভারিট হয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy