Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

এশিয়া কাপে ঋষভের না থাকাটা কিন্তু কেলেঙ্কারি

কে এল রাহুল আর ঋষভ পন্থের শেষ দিনের লড়াইকে সম্পূর্ণ সম্মান জানিয়েই বলছি, ভারতীয় দলে কিন্তু পরিবর্তনের সময় হয়েছে।

দুরন্ত: ইংল্যান্ডের বোলিং শাসন করে ঋষভ পন্থের সেঞ্চুরি। মঙ্গলবার ওভালে। ওয়ান ডে মেজাজে ব্যাট করে অবশ্য দলের হার বাঁচাতে পারলেন না ভারতের তরুণ ব্যাটসম্যান। ছবি: রয়টার্স

দুরন্ত: ইংল্যান্ডের বোলিং শাসন করে ঋষভ পন্থের সেঞ্চুরি। মঙ্গলবার ওভালে। ওয়ান ডে মেজাজে ব্যাট করে অবশ্য দলের হার বাঁচাতে পারলেন না ভারতের তরুণ ব্যাটসম্যান। ছবি: রয়টার্স

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৩
Share: Save:

কে এল রাহুল আর ঋষভ পন্থের শেষ দিনের লড়াইকে সম্পূর্ণ সম্মান জানিয়েই বলছি, ভারতীয় দলে কিন্তু পরিবর্তনের সময় হয়েছে। আমার কাছে, ইংল্যান্ডে এই বিপর্যয়ের প্রধান কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং যদি এর পরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা হয়, তা হলে বুঝতে হবে আমাদের এখন আর হারের পরেও প্রতিক্রিয়া হয় না।

রাহুল শেষ ইনিংসে এসে ১৪৯ করল। বেশ তাড়াতাড়ি এই রানটা করল ও। বোলারদের শাসন করে খেলেছে। ২২৪ বলে এই রানটা করেছে, অর্থাৎ ওর স্ট্রাইক রেট ৬৬.৫১। গোটা সিরিজে নিষ্প্রভ থাকলেও শেষ ইনিংসে এসে নিজের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে পেরেছে রাহুল। আপাতত একটা ওপেনার হিসেবে ওকে ধরে এগোতে হবে। কিন্তু ওর সঙ্গী হিসেবে আর শিখর ধওয়ন বা মুরলী বিজয়ের মতো পুরনোদের তালিকায় ফিরে যাওয়া খুব ভুল হবে। পৃথ্বী শ রয়েছে। মায়াঙ্ক অগ্রবাল রয়েছে। ওরা সব দলের হয়ে সমস্ত পরিবেশে রান করছে। এ বার ওদের সুযোগ প্রাপ্য।

শেষ টেস্টে দুরন্ত খেলে গেল ঋষভ পন্থও। ১৪৬ বলে ১১৪ রান। চারটে ছয়, পনেরোটা চার। স্ট্রাইক রেট ৭৮.০৮। টেস্ট ম্যাচে নেমে ওয়ান ডে-র মেজাজে ব্যাটিং। আর সেই ছেলেটাকেই কি না আসন্ন এশিয়া কাপের দলে রাখা হয়নি! এ তো কেলেঙ্কারি। যে ইংল্যান্ড বোলিংয়ের বিরুদ্ধে এ রকম আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে, তাকে কী ভাবে ওয়ান ডে দল থেকে বাদ

দেওয়া যায়?

ইংল্যান্ড সিরিজে অজিঙ্ক রাহানের অবস্থা দেখে আমি সব চেয়ে শঙ্কিত। কয়েক মাস আগেও মনে করা হত, বিদেশের মাটিতে সব চেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান রাহানে। তার এই অবস্থা হল কী করে? গোটা সিরিজে এক বারও ওকে দেখে মনে হয়নি খুব কর্তৃত্ব নিয়ে ব্যাটিং করছে। এ দিন রাহুলের সঙ্গে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ও। দেখে মনে হচ্ছিল, শেষ ইনিংসে এসে গোটা সফরের অপ্রাপ্তি ঢেকে দিতে চায়। কিন্তু হঠাৎ একটা বাজে শট নিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে গেল।

আমার মনে হচ্ছে, রাহানের জায়গায় করুণ নায়ারকে এক বার দেখা যেতেই পারে। বেচারা করুণ নায়ারকে দেখে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে। টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে বসে আছে। ইংল্যান্ডে প্রথম দিন থেকে রয়েছে স্কোয়াডের সঙ্গে। কিন্তু নতুন ব্যাটসম্যান খেলানোর সময়েও ওর জায়গা হল না। খেলল হনুমা বিহারী। এটা ঠিক যে, হনুমা ভাল খেলে দিয়েছে প্রথম ইনিংসে। কিন্তু করুণের মনে হতেই পারে, আমি দোষটা কী করলাম? ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও বাদ থেকেছি। এখানে নতুন ছেলে খেলানো হল, তার পরেও আমাকে যোগ্য ভাবা হল না!

আমার মনে হয়, ব্যক্তিগত ব্যর্থতা তো রয়েইছে ব্যাটিং বিভাগের, এর সঙ্গে দলগত ভাবেও চিত্রটা খুব একটা স্বস্তিদায়ক দেখাচ্ছে না। একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। চেতেশ্বর পূজারা যদি আমার প্রধান ব্যাটসম্যানদের এক জন হয়, তা হলে ওকে বসাব কেন? প্রথম টেস্টে ওকে বসিয়ে তিন জন ওপেনার খেলানো হল! আর ওপেনাররা গোটা সিরিজ ধরে ভুগিয়ে গেল। একমাত্র ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টেই রাহুল আর ধওয়ন ভাল শুরু দিয়েছিল। তা-ও সেটা পঞ্চাশ রানের উপর, তার বেশি কিছু নয়। ওই ভাল শুরু ভারতকে বড় স্কোর তুলতে সাহায্য করেছিল। এবং, বিরাট কোহালির দুই ইনিংসে অসাধারণ ব্যাটিং! ট্রেন্ট ব্রিজের দুই ইনিংসে কোহালির ৯৭ ও ১০৩ না থাকলে ওই টেস্টটাও সম্ভবত হারতে হত। প্রথম একাদশ গড়ার ব্যাপারে আরও স্থিরতা দেখানো উচিত ছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। দলের প্রধান ক্রিকেটারদের অবশ্যই একটা ধারণা দিতে হবে যে, তোমরাই স্তম্ভ। তবেই না ওরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলবে।

এর পর আর আশা করছি না কোচ রবি শাস্ত্রী বা অধিনায়ক বিরাট কোহালি বলবে যে, আমরা লড়াই করেছি। বললেও কেউ শুনবে না কারণ, যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলায় শুধু লড়লে হয় না, ফলটা কী হল সেটাই আসল। টেস্ট সিরিজের জন্য আরও ভাল করে তৈরি হওয়াও মনে হয় দরকার ছিল। আমাদের সময়ে অনেক বেশি প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলার রেওয়াজ ছিল। সফরে গিয়ে ভারতীয় দল অন্তত চার-পাঁচটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলত। এ বারে সেখানে মাত্র একটিই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে ভারতীয় দল। এক দিনের সিরিজের পরে সবাই ইউরোপ ভ্রমণে বেরিয়ে গেল। সাদা বল আর লাল বলে খেলা যে সম্পূর্ণ অন্য চ্যালেঞ্জ, সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। এখন যা পরিস্থিতি, ফের জরুরি বৈঠক ডাকা দরকার। ময়নাতদন্ত হওয়া দরকার এই হারের যে, কেন দলটাকে এত নুইয়ে পড়া দেখাল! মাঝেমধ্যে সেই অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডে টানা দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE