Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিদায় পাকিস্তান, ফাইনালে বাংলার বাঘেরা

সরকারি ভাবে না হোক, বেসরকারি ভাবে তখনই ঠিক হয়ে গেল এ বারের এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নাম। বাংলাদেশ। যারা বুধবার ফাইনালে ওঠার সরকারি সিলমোহর পেল পাকিস্তানকে  ৩৭ রানে হারিয়ে। ১০ ওভার বল করে দুই মেডেন-সহ ৪৩ রানে চার উইকেট পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের।

দুরন্ত: শোয়েব মালিকের ক্যাচ নিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উচ্ছ্বাস মাশরফির। বুধবার আবু ধাবিতে। এএফপি

দুরন্ত: শোয়েব মালিকের ক্যাচ নিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উচ্ছ্বাস মাশরফির। বুধবার আবু ধাবিতে। এএফপি

কৌশিক দাশ
আবু ধাবি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২৮
Share: Save:

৩৭ রানে জয়ী বাংলাদেশ

ম্যাচের সেরা মুশফিকুর রহিম

শর্ট মিডউইকেট অঞ্চলে দাঁড়িয়ে মাশরফি মর্তুজা যখন ‘সুপারম্যান’ হয়ে শরীরটা ডান দিকে ছুড়ে শোয়েব মালিকের ক্যাচটা নিলেন, তখনই মোটামুটি ছবিটা পরিষ্কার হযে গিয়েছিল। এর পর ইমাম উল হক একা লড়াইটা চালাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ম্যাচের রাশটা নিজের হাতে নিতে পারেননি। মুশফিকুর রহিমের জায়গায় কিপিং করা লিটন দাস যখন চোখের পলকে বেলটা ফেলে দিলেন, ইমাম ক্রিজের বাইরে। গ্যালারিতে বেজে উঠল, ‘‘যাও এগিয়ে, আমার বাংলাদেশ।’’

সরকারি ভাবে না হোক, বেসরকারি ভাবে তখনই ঠিক হয়ে গেল এ বারের এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নাম। বাংলাদেশ। যারা বুধবার ফাইনালে ওঠার সরকারি সিলমোহর পেল পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়ে। ১০ ওভার বল করে দুই মেডেন-সহ ৪৩ রানে চার উইকেট পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের।

মরুভূমির মাঝখান দিয়ে চলেছে রাস্তাটা। দু’পাশে কাঁটাঝোপের স্তূপ আর তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে বালির রাজ্য। মাঝে মাঝে গজিয়ে ওঠা বাড়ি। কখনও বা আবার দেখা যাচ্ছে মসজিদ। এ রকমই একটা রাস্তার শেষে হঠাৎ ভেসে উঠল স্টেডিয়ামটা। অনেকটা ‘ফ্লাইং সসার’-এর মতো আকৃতি। যেন হঠাৎ একটা স্পেসশিপ নেমে এসেছে আবু ধাবির মরুভূমিতে।

আরও পড়ুন: ভারতীয় শিশুর কান্না থামিয়ে মন জয় রশিদদের

দেখলে সত্যি অবাক হয়ে যেতে হয়। কিন্তু শেখ জাইদ স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সে ঢুকে ওয়াকার ইউনিস যেন আরও বেশি অবাক হয়ে গেলেন। ঘর ভর্তি সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘কী ব্যাপার, আজ এখানে এত লোক! বাংলাদেশ কি ধরেই নিয়েছে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেবে?’’ ঠিক পিছনেই ছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার আতাহার আলি। তাঁর দিকে ফিরে হেসে বলে উঠলেন, ‘‘কী ব্যাপার, তোমরাই জিতবে, ধরে নিয়েছ নাকি?’’ কেউ ধরে না নিলেও ওয়াকার ঠাট্টাচ্ছলে যা বলেছিলেন, দেখা গেল সেটাই সত্যি হল দিনের শেষে।

টস জিতে বাংলাদেশ ব্যাটিং নেওয়ার পরে প্রথম ৫০ ওভারে নায়ক হিসেবে উঠে এলেন দু’জন। পাকিস্তানের জুনেইদ খান। বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম। জুনেইদ অসাধারণ বল করে বাংলাদেশকে আটকে রাখলেন ২৩৯ রানে। আর মুশফিকুর এক রানের জন্য সেঞ্চুরি ফস্কালেও দলকে পৌঁছে দেন লড়াইয়ের জায়গায়। যেখান থেকে জিতে গেল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের অঙ্ক গোলমাল হয়ে যায় শেষ মুহূর্তে শাকিব আল হাসান না খেলায়। তাঁর বাঁ হাতের আঙুল ভেঙে গিয়েছে। সেই অবস্থায় ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলছিলেন। এই ম্যাচে শাকিবকে খেলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ওষুধ-ইঞ্জেকশনেও কাজ দেয়নি। অস্ত্রোপচার এড়ানো যাবে না দেখে শাকিব বুধবারই দেশে ফিরে গেলেন। খুব সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর অস্ত্রোপচার হবে। অধিনায়ক মর্তুজা অবশ্য চোট নিয়েই খেলে দিলেন। ব্যথার ওষুধ খেয়ে।

গোটা দশেক ওয়ান ডে ম্যাচে শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে মহম্মদ আমিরকে বাদ দিতে বাধ্য হয় পাক টিম ম্যানেজমেন্ট। আর এশিয়া কাপে এতদিন জল বয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে যিনি এ দিন মাঠে নামলেন, তাঁর বোলিং হিসেবটা এ রকম: ৯-১-১৯-৪। জুনেইদের শুধু পেসই নেই, বলটা বাইরের দিকেও নিয়ে যেতে পারেন। যেটা যে কোনও বাঁ হাতি পেসারের কাছে একটা ভয়ঙ্কর অস্ত্র। বাংলাদেশ ওপেনার লিটন দাসকে ও রকমই একটা বলে আউট করলেন। অফ-মিডলে পড়া বল হাল্কা কেটে অফস্টাম্পটা নিয়ে চলে গেল।

‌নতুন বলে জুনেইদ শুরু করা মাত্রই পাকিস্তান আক্রমণে সেই ঝাঁঝটা দেখা গেল, যেটা এত দিন হারিয়ে গিয়েছিল।

টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পরে একটা সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল তিন উইকেটে ১২। সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করেন মুশফিকুর। বাংলাদেশের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের পাঁজরে চোট আছে। যেটা নিয়েই তিনি খেলে চলেছেন। ফিল্ডিং করার সময় ঝাঁপিয়ে একটা ক্যাচ নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়লেন। তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয়। কিন্তু তাতে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিটা হয়নি।

শুক্রবার দুবাইয়ে এশিয়ার তাজ দখলের লড়াই এ বার ভারত বনাম বাংলাদেশের।

স্কোরকার্ড

বাংলাদেশ ২৩৯ (৪৮.৫)
পাকিস্তান ২০২-৯ (৫০)

বাংলাদেশ রান বল
লিটন দাস বো জুনেইদ ৬ ১৬
সৌম্য ক ফখর বো জুনেইদ ০ ৫
মোমিনুল হক বো শাহিন ৫ ৪
মুশফিকুর ক সরফরাজ বো শাহিন ৯৯ ১১৬
মহম্মদ মিঠুন ক ও বো হাসান ৬০ ৮৪
ইমরুল এলবিডব্লিউ বো শাদাব ৯ ১০
মাহমুদুল্লাহ বো জুনেইদ ২৫ ৩১
মেহদি ক (মাসুদ) বো জুনেইদ ১২ ১১
মাশরফি ক ফখর বো হাসান ১৩ ১৩
রুবেল হোসেন রান আউট হাসান ১ ৩
মুস্তাফিজুর রহমান ন. আ. ০ ০
অতিরিক্ত ৯
মোট ২৩৯ (৪৮.৫)
পতন: ১-৫ (সৌম্য, ২.৫), ২-১২ (মোমিনুল, ৩.৫), ৩-১২ (লিটন, ৪.২), ৪-১৫৬ (মিঠুন, ৩৩.৪), ৫-১৬৭ (ইমরুল, ৩৬.১), ৬-১৯৭ (মুশফিকুর, ৪১.৪), ৭-২২১ (মেহদি, ৪৫.২), ৮-২৩০ (মাহমুদুল্লাহ, ৪৭.৩) ৯-২৩৯ (রুবেল, ৪৮.৪), ১০-২৩৯ (মাশরফি, ৪৮.৫)।
বোলিং: জুনেইদ খান ৯-১-১৯-৪, শাহিন শাহ আফ্রিদি ১০-১-৪৭-২, হাসান আলি ৯.৫-০-৬০-২, মহম্মদ নওয়াজ় ৮-০-৩৯-০, শোয়েব মালিক ২-০-১৪-০, শাদাব খান ১০-০-৫২-১।

পাকিস্তান
ফখর ক রুবেল বো মেহদি ১ ৪
ইমাম স্টা লিটন বো মাহমুদুল্লাহ ৮৩ ১০৫
বাবর এলবিডব্লিউ বো মুস্তাফিজুর ১ ৩
সরফরাজ ক রহিম বো মুস্তাফিজুর ১০ ৭
শোয়েব ক মাশরফি বো রুবেল ৩০ ৫১
শাদাব খান ক লিটন বো সৌম্য ৪ ২৪
আসিফ স্টা লিটন বো মেহদি ৩১ ৪৭
নওয়াজ় ক নাজ়মুল বো মুস্তাফিজুর ৮ ১৯
হাসান ক মাশরফি বো মুস্তাফিজুর ৮ ১১
শাহিন শাহ ন. আ. ১৪ ২০
জুনেইদ খান ন. আ. ৩ ১০
অতিরিক্ত ৯
মোট ২০২-৯ (৫০)
পতন: ১-২ (ফখর, ০.৫), ২-৩ (বাবর, ১.২), ৩-১৮ (সরফরাজ, ৩.৩), ৪-৮৫ (শোয়েব, ২০.১), ৫-৯৪ (শাদাব, ২৫.১), ৬-১৬৫ (আসিফ, ৩৯.২), ৭-১৬৭ (ইমাম উল, ৪০.৫), ৮-১৮১ (হাসান, ৪৩.৫), ৯-১৮৬ (নওয়াজ়, ৪৫.১)।
বোলিং: মেহদি হাসান মিরাজ ১০-১-২৮-২, মুস্তাফিজুর রহমান ১০-২-৪৩-৪, মাশরফি মর্তুজা ৭-১-৩৩-০, রুবেল হোসেন ৮-০-৩৮-১, মাহমুদুল্লাহ ১০-০-৩৮-১, সৌম্য সরকার ৫-০-১৯-১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Asia Cup 2018 Bangladesh Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE