Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিতলেও রোহিতদের চিন্তা কিন্তু থাকছেই’

শুক্রবারের এই এশিয়া কাপ ফাইনাল নিশ্চয়ই ক্রিকেটদুনিয়ার কাছে এই বার্তা দিল যে, ভারত কোন পরিস্থিতিতেই হার না মানা দল। সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটাররা এটাও বুঝলেন যে, কোনও প্রতিপক্ষকেই কম গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

এশিয়া কাপ হাতে রোহিত শর্মা। ছবি এএফপি

এশিয়া কাপ হাতে রোহিত শর্মা। ছবি এএফপি

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৭
Share: Save:

৩ উইকেটে জয়ী ভারত

ম্যাচের সেরা লিটন দাস

এক সময় ১২০-০। সেখান থেকে ২২২ রানে অল আউট! এ যেমন বাংলাদেশের একটা দিক, তেমনই ২২২ রান তুলেও ভারতের সাত উইকেট ফেলে দিয়ে শেষ বল পর্যন্ত জেতার লড়াইয়ে থাকা। এটা বাংলাদেশের আর এক দিক। শুক্রবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপে যে বাংলাদেশকে দেখল ক্রিকেটবিশ্ব, তা এক নতুন বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো বিশ্বকাপজয়ী দল যখন ক্রমশ ব্যর্থতার অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে, তখন বাংলাদেশের এই উত্থান এশিয়ার ক্রিকেটের পক্ষে অবশ্যই ভাল খবর।

আর শুক্রবারের এই এশিয়া কাপ ফাইনাল নিশ্চয়ই ক্রিকেটদুনিয়ার কাছে এই বার্তা দিল যে, ভারত কোন পরিস্থিতিতেই হার না মানা দল। সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটাররা এটাও বুঝলেন যে, কোনও প্রতিপক্ষকেই কম গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কয়েক মাস আগে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই শেষ ওভারে ভারতকে যে ভাবে শেষ বলে উদ্ধার করেছিলেন দীনেশ কার্তিক, শুক্রবার সে ভাবেই শেষ বলে ভারতকে জেতালেন কেদার যাদব। এই দুই ঘটনায় এটাই বোঝা যায়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ কিন্তু ক্রমশ ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দিয়েছে। সমানে সমানে টক্কর দেওয়াটা এখন তাঁদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। শুধু অভিজ্ঞতার অভাবে এই চাপ কাটিয়ে জিততে পারছে না তারা, এই যা। অভিজ্ঞতার অভাবেই হয়তো সেটা হচ্ছে। এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে তাঁদের খুব বেশি সময় লাগবে না বোধহয়। যে ভাবে ভারতকে এ দিন শুরু থেকেই চাপে ফেলে দেন মাশরফি মর্তুজারা, তার পরে এ কথা স্বীকার করতেই হচ্ছে। ১৭ ওভারের মধ্যেই শিখর ধওয়ন, অম্বাতি রায়ডু ও রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে মর্তুজারা যে চাপটা তৈরি করেছিলেন, ৩০ ওভারের পরে দীনেশ কার্তিক ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ফিরিয়ে তা আরও বাড়িয়ে তোলেন। যা শেষ বল পর্যন্ত রেখেছিলেন তাঁরা।

ওপেনাররা ছাড়া বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও ওদের বোলারদের নিখুঁত স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিং আর অনবদ্য ফিল্ডিংই ওদের জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে চলে এসেছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবই ওদের শেষ বলে জয় পেতে দেয়নি। আর বিরাট কোহালিহীন ভারতের ব্যাটিং? ধওয়ন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে বাজে শট খেলে আউট হন। রায়ডু অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কিপারের হাতে ধরা পড়েন। ২২২ রান তাড়া করতে গিয়ে কেন এত তাড়াহুড়ো? আর রোহিতের দুর্ভাগ্য, যে পুল শট তিনি সব চেয়ে ভাল মারেন, সেই শটই ব্যাটে-বলে হওয়া সত্ত্বেও বাউন্ডারির মধ্যে রয়ে যায়।

ভারতের ভাগ্য যাঁর হাতে ছিল, সেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে স্টাম্পের পিছনে মুশফিকুরের হাতে ক্যাচ দেন। ব্যাটিং নিয়ে, ধোনিকে নিয়ে এ বার ভাবতে হবে। গত দশ ম্যাচে তাঁর কোনও ৫০ রানের ইনিংস নেই। শ্রীলঙ্কায় শেষ ৫০ রান করেছিলেন তিনি। দীনেশ কার্তিক নীচু হয়ে যাওয়া বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান। এ বার তাঁকে নিয়ে ভাবতে হবে নির্বাচকদের। বিশ্বকাপে তাঁকে নিয়ে গেলে ভুগতে হতে পারে। এ সবের পরে আবার কেদার যাদবের হ্যামস্ট্রিং তাঁকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে বাধ্য করে। দিনটা ভারতের পক্ষে মোটেই সোজা ছিল না।

কিপার ধোনির ক্ষিপ্রতার প্রশংসা অবশ্যই করতেই হচ্ছে। লিটন দাসকে যে ভাবে স্টাম্প করেন, যে ভাবে মাত্র ০.১৬ সেকেন্ডে তিনি বল ধরে স্টাম্প ভাঙেন, তা সত্যিই অসাধারণ।

স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ২২২ (৪৮.৩)
ভারত ২২৩-৭ (৫০)

বাংলাদেশ রান বল
লিটন স্টা ধোনি বো কুলদীপ ১২১ ১১৭
মেহদি ক রায়ডু বো কেদার ৩২ ৫৯
ইমরুল এলবিডব্লিউ বো চহাল ২ ১২
মুশফিকুর ক বুমরা বো কেদার ৫ ৯
মিঠুন রান আউট জাডেজা ২ ৪
মাহমুদুল্লাহ ক বুমরা বো কুলদীপ ৪ ১৬
সৌম্য রান আউট রায়ডু ৩৩ ৪৫
মাশরফি স্টা ধোনি বো কুলদীপ ৭ ৯
নাজমুল রান আউট মণীশ ৭ ১৩
মুস্তাফিজুর রহমান ন. আ. ২ ৫
রুবেল হোসেন বো বুমরা ০ ২
অতিরিক্ত ৭
মোট ২২২ (৪৮.৩)
পতন: ১-১২০ (মেহদি, ২০.৫), ২-১২৮ (ইমরুল, ২৩.৫), ৩-১৩৭ (মুশফিকুর, ২৬.৫), ৪-১৩৯ (মিঠুন, ২৭.৬), ৫-১৫১ (মাহমুদুল্লাহ, ৩২.২), ৬-১৮৮ (লিটন, ৪০.৬), ৭-১৯৬ (মর্তুজা, ৪২.৫), ৮-২১৩ (নাজমুল, ৪৬.৪) ৯-২২২ (সৌম্য, ৪৮.১), ১০-২২২ (রুবেল, ৪৮.৩)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৭-০-৩৩-০, যশপ্রীত বুমরা ৮.৩-০-৩৯-১, যুজবেন্দ্র চহাল ৮-১-৩১-১, কুলদীপ যাদব ১০-০-৪৫-৩, রবীন্দ্র জাডেজা ৬-০-৩১-০, কেদার যাদব ৯-০-৪১-২।
ভারত
রোহিত ক নাজমুল বো রুবেল ৪৮ ৫৫
ধওয়ন ক সৌম্য বো নাজমুল ১৫ ১৪
রায়ডু ক মুশফিকুর বো মাশরফি ২ ৭
কার্তিক এলবিডব্লিউ বো মাহমুদুল্লাহ ৩৭ ৬১
ধোনি ক মুশফিকুর বো মুস্তাফিজুর ৩৬ ৬৭
কেদার যাদব ন. আ. ২৩ ২৭
জাডেজা ক মুশফিকুর বো রুবেল ২৩ ৩৩
ভুবি ক মুশফিকুর বো মুস্তাফিজুর ২১ ৩১
কুলদীপ যাদব ন. আ. ৫ ৫
অতিরিক্ত ১৩
মোট ২২৩-৭ (৫০)
পতন: ১-৩৫ (ধওয়ন, ৪.৪), ২-৪৬ (রায়ডু, ৭.৩), ৩-৮৩ (রোহিত, ১৬.৪), ৪-১৩৭ (কার্তিক, ৩০.৪), ৫-১৬০ (ধোনি, ৩৬.১), ৬-২১২ (জাডেজা, ৪৭.২), ৭-২১৪ (ভুবনেশ্বর, ৪৮.১)।
বোলিং: মেহদি হাসান মিরাজ ৪-০-২৭-০, মুস্তাফিজুর রহমান ১০-০-৩৮-২, নাজমুল ইসলাম ১০-০-৫৬-১, মাশরফি মর্তুজা ১০-০-৩৫-১, রুবেল হোসেন ১০-২-২৬-২, মাহমুদুল্লাহ ৬-০-৩৩-১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asia Cup 2018 Cricket India Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE