চ্যাম্পিয়ন: আমিই সেরা। হেপ্টাথলনে সোনা জিতে এ কথাই যেন সবাইকে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন বাংলার স্বপ্না বর্মণ। বুধবার জাকার্তায়। রয়টার্স
হেপ্টাথলন থেকে বাংলার স্বপ্না বর্মণ সোনা পেয়েছে খবরটা শোনার পরে গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে। ২০০২ সালে বুসান এবং চার বছর পরে দোহায় আয়োজিত এশিয়ান গেমসে এই ইভেন্টেই দেশের হয়ে নেমেছিলাম। কিন্তু সোনা পাইনি। দু’বারই রুপো নিয়ে ফিরেছিলাম। তাই মনে মনে একজন বাঙালি হেপ্টাথলিটের এশিয়ান গেমস থেকে সোনা জয় দেখার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন। স্বপ্না আমার সেই স্বপ্ন বুধবার বাস্তবে পরিণত করল।
আমাদের আগে ভারতীয় দলের সফল বাঙালি অ্যাথলিট হিসেবে আদর্শ ছিলেন রীতা সেন। তার পরে জ্যোতির্ময়ী শিকদার থেকে এশিয়ান গেমসে ভারতীয় মহিলা অ্যাথলেটিক্স দলে বাঙালিদের জয়জয়কারই বেশি চোখে পড়ত। চার বছর আগে ইঞ্চিয়নে সেই সাফল্য মেলেনি। হেপ্টাথলন থেকে স্বপ্না ফিরেছিল চতুর্থ হয়ে। এ বার সেই ইভেন্টে সোনা পেয়ে স্বপ্না আবার এশিয়ান গেমসের ট্র্যাকে বাঙালি মহিলা অ্যাথলিটদের বিজয় পতাকা তুলে ধরল।
সকালবেলা স্বপ্নার জ্যাভলিনের ইভেন্টটা টিভিতে দেখার সময়েই মনে হচ্ছিল আজ দিনটা ওর। ৬০৫০-৬০৬০ পয়েন্টের মধ্যে শেষ করবে। স্বপ্না তার একটু আগে শেষ করল ৬০২৬ পয়েন্ট পেয়ে। রুপোজয়ী চিনের কিংলিং পেয়েছেন ৫৯৫৪ পয়েন্ট। ৮০০ মিটার দৌড় কখন হবে, সেটা সঠিক জানতাম না। তাই সেই ইভেন্টটা দেখতে পারিনি। জাতীয় ক্রীড়াদিবসের দিন সন্ধেবেলা গাড়ি চালাতে চালাতেই হোয়াটসঅ্যাপ থেকে জানলাম স্বপ্না সোনা পেয়েছে।
হেপ্টাথলিটরা সাধারণত লম্বা চেহারার হয়ে থাকেন। স্বপ্নার উচ্চতা সেখানে খুব বেশি নয়। তার পরেও ও কী ভাবে হেপ্টাথলনে নেমে সফল! বাংলার মেয়ের সোনা জয়ের দিনে অনেকেই এই প্রশ্নটা করছেন। এক্ষেত্রে উত্তর একটাই। তা হল, স্বপ্না হেপ্টাথলন ইভেন্টের ব্যতিক্রম। উচ্চতা কম হলেও স্বপ্না সেই খামতি পুষিয়ে দেয় ওর হার না মানা মনোভাব, কঠোর পরিশ্রম ও স্থির লক্ষ্য নিয়ে। অনেক দিন সাইতে গিয়ে দেখেছি অনেক অ্যাথলিট যখন ক্লান্ত হয়ে অনুশীলন বন্ধ করছে, স্বপ্না তখন মনপ্রাণ ঢেলে অনুশীলন করে যাচ্ছে ওর কোচের কাছে।
এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দিই। স্বপ্নার মতোই চোট পেয়ে খেলোয়াড় জীবন অন্ধকারে চলে গিয়েছিল বাংলার আর এক অ্যাথলিট আশা রায়ের। স্বপ্না কিন্তু তার পরে ঠিক ফিরে এসেছে। আর আশা পারল না। এই মরিয়া মনোভাবটাই স্বপ্নার সাফল্যের একটা বড় কারণ। মেয়েটার জেদ দেখার মতো। হেপ্টাথলনের ইভেন্টগুলোর মধ্যে স্বপ্না ১০০ মিটার হার্ডলস, শটপাট, ২০০ মিটার বা ৮০০ মিটারে একটা সমতা রেখে পারফর্ম করে। কিন্তু অন্যদের ও টেক্কা দিয়ে যায় জ্যাভলিন, লং জাম্প ও হাই জাম্পে। এই তিনটেই ওর শক্তির জায়গা। জ্যাভলিন ছোড়ার সময়ে ওর ‘থ্রোয়িং আর্ম’ যদি লক্ষ্য করেন, তা হলেই যে কোনও অ্যাথলিট বুঝতে পারবেন, এই মেয়েটি ব্যতিক্রমী ঘরানার অ্যাথলিট। হাইজাম্পের সময়ও বারের উপর দিয়ে অনায়াসে টপকানোর সময় ওর দুই হাতের অবস্থানটাও তরুণ অ্যাথলিটদের কাছে শেখার মতো ব্যাপার। ওই সময় শেষ মুহূর্তে ও অদ্ভুতভাবে লাফ দিয়ে বাধা অতিক্রম করে যায়।
দু’বছর পরে টোকিয়ো অলিম্পিক্স। গত বার রিয়ো থেকে স্বপ্না খালি হাতে ফিরেছিল। এ দিন এশিয়াড থেকে সোনা জয়ের পরে অনেকেই জানতে চাইছেন অলিম্পিক্সে স্বপ্নার ভবিষ্যৎ কী? অলিম্পিক্সে ইউরোপ আর আমেরিকার অ্যাথলিটদেরও দাপাদাপি বেশি। ওই মঞ্চে পদক জিততে গেলে আজকের ৬০২৬ পয়েন্টকে ৬৩০০-৬৪০০ তে নিয়ে যেতে হবে স্বপ্নাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy