গুরুপ্রণাম। চুনী গোস্বামীর শুভেচ্ছা নিতে সত্যজিত্ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: উৎপল সরকার
মোহনবাগান নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসই কি নির্ণায়ক শক্তি হতে চলেছে? একশো পঁচিশ বছরের পুরনো ক্লাবের ধুন্ধুমার নির্বাচন যে ভাবে এক তরফা হওয়ার দিকে ঝুঁকছে তাতে সেই সন্দেহ ক্রমশই জোরাল হচ্ছে। ক্রমশ তা পাল্লা ভারি হচ্ছে শাসক গোষ্ঠীর দিকেই। তৃণমূলের তিন নেতা—বিধানসভার মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক অশোক ঘোষ এবং শিয়ালদহের যুবনেতা সজল ঘোষ আগেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন বিরোধী প্যানেল থেকে। শনিবার দুপুরে আরও বড় ধাক্কা খেল বলরাম চৌধুরী-সুব্রত ভট্টাচার্যদের নেতৃত্বাধীন বিরোধী গোষ্ঠী। শোভনদেব-অশোকদের যিনি বিরোধীদের প্যানেলে টেনে এনেছিলেন সেই ডাকাবুকো কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষকেই নাটকীয়ভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিলেন কলকাতার হবু মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। রাতে শোভনবাবু বলে দিলেন, ‘‘কলকাতার মেয়র পারিষদের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হিসাবে অতীনের বাগানের নির্বাচনে কোনও একটি দলের হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। ওকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছি। ও রাজি হয়েছে।’’ মেয়রের কথার পর অতীনবাবুর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। অনর্গল ফোনে কথা বলা অতীন নীরব থেকেছেন বাধ্য হয়েই।
অথচ উত্তর কলকাতার এই পুরপিতা গত ছয় মাস ধরেই কর্মসমিতিতে এবং বাইরে টুটু-অঞ্জনদের নানা সিদ্ধান্তের নিয়মিত বিরোধীতা করে এসেছেন। ক্লাবের সাধারণ সভায় লোকজন নিয়ে গিয়ে হইচই করেছেন। ক্লাবের লনে বক্তৃতা করেছেন। শাসকদের নির্বাচনে হারানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলরাম-সুব্রতদের সঙ্গে বসে বিরোধী প্যানেল তৈরি করে জমাও দিয়েছিলেন।
কেন অতীনকে সরানো জরুরি ছিল? উত্তর কলকাতায় বাগানের নয় হাজার ভোটের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো ভোট রয়েছে। অতীনবাবু সাংগঠনিক দক্ষতায় তা ভোট বাক্সে এনে ফেলার জন্য ঝাঁপিয়েছিলেন। তাঁর লোকবলও ছিল শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ায় তাই সুবিধা হয়ে গেল শাসকদের। মেয়রকে প্রশ্ন করা হয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় কেন অতীনকে বারণ করা হল না? শোভনবাবু বলেন, ‘‘আমি যখন জেনেছি তখনই বলেছি।’’ বাজারে জোর রটনা যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই মেয়র এই নির্দেশ দিয়েছেন। তা অবশ্য মানতে চাননি শোভনবাবু। বলে দেন, ‘‘আমিই ওকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছি।’’
ক্লাবের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। ১৭ মে-র নির্বাচনে অতীনের নাম তাই ব্যালটে থাকছেই। জানা গিয়েছে, সে জন্যই অতীনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। মিটিং-মিছিল না করার জন্য। অতীন সেটা মেনেও নিয়েছেন দলে তাঁর ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
বিরোধী গোষ্ঠীর এ দিন সভা ছিল উত্তর কলকাতার শ্রদ্ধানন্দ পার্কে। বাড়ির কাছে সভা হলেও সেখানে যাননি অতীন। আজ রবিবার অতীনের নেতৃত্বে তাঁর পাড়া মোহনবাগান লেনে বিরোধীদের যে সভা হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল হয়েছে। তবে প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে এক প্রবীণ সমর্থকের মৃত্যুর জন্যই সভা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিরোধীদের অন্যতম প্রধান মুখ সরে দাঁড়ানোয় বাগানের শাসক শিবিরে উল্লাস। তবে সেটা তাঁরা সামনে আনতে চাইছেন না। টালা পার্কের সভা শেষ করে ফিরে সহ সচিব পদপ্রার্থী সৃঞ্জয় বসু বললেন, ‘‘এই ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা নেই।’’ আর বিরোধীগোষ্ঠীর সচিব পদপ্রার্থী বলরাম চৌধুরী বললেন, ‘‘ওর নাম তো ব্যালটে থাকছে। আমার এ রকম কিছু জানা নেই।’’ বিরোধীদের প্রধান নেতা ফুটবল সচিব পদ প্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য আবার বললেন, ‘‘ওদের অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে। তবে আমি লড়াই থেকে সরছি না। আমার লড়াই জারি থাকবে।’’
সন্ধ্যায় শাসকগোষ্ঠীর ফুটবল-সচিব পদ প্রার্থী সত্যজিত্ চট্টোপাধ্যায় জেতার জন্য আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন চুনী গোস্বামীর কাছে। চুনীকে পাশে পাওয়ার পর বিরোধীদের অন্যতম নেতা অতীন সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন। টুটু-অঞ্জন-সৃঞ্জয়-দেবাশিসদের আর ধরে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy