Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আইএসএল

এগিয়ে গিয়েও হার এটিকের, দুরন্ত গোলে মন জয় কোমলের

কলকাতার যে কোনও ক্লাবের সামনে পড়লেই সুনীল ছেত্রী যেন কেমন হয়ে যান। তাঁর সেই চোখ ধাঁধানো গোল বা খেলা যেন কোথায় হারিয়ে যায়! সেই পরম্পরা বুধবারের যুবভারতীতে অক্ষতই রইল।

উচ্ছ্বাস: গোলের পরে অভিনব উৎসব কোমলের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উচ্ছ্বাস: গোলের পরে অভিনব উৎসব কোমলের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৩
Share: Save:

এটিকে ১ বেঙ্গালুরু এফসি ২

বঙ্গ জামাইয়ের মুখে হাসি ফুটল। তবে ফুটবলার হিসাবে নয়। অধিনায়ক হিসাবে।

কলকাতার যে কোনও ক্লাবের সামনে পড়লেই সুনীল ছেত্রী যেন কেমন হয়ে যান। তাঁর সেই চোখ ধাঁধানো গোল বা খেলা যেন কোথায় হারিয়ে যায়! সেই পরম্পরা বুধবারের যুবভারতীতে অক্ষতই রইল।

ভারতের জার্সিতে সর্বকালের সেরা গোলদাতা সুনীল এ দিন গোল পাননি। তবে দিওয়ালির ছয় দিন আগে তুবড়ি হয়ে আলো ছড়ালেন এক জুনিয়র বিশ্বকাপার—এটিকের কোমল থাটাল। সিকিমের নামচি অ্যাকাডেমী থেকে উঠে আসা সদ্য আঠারো পেরনো কোমল আসাধারণ একটি গোল করলেন সুনীলের দলের বিরুদ্ধে। এ বারের ইন্ডিয়ান সুপার লিগের কনিষ্ঠতম মিডিওকে পাস বাড়িয়েছিলেন এভার্টন স্যান্টোস। বেঙ্গালুরুর তিন ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে। বল তাঁর কাছে আসতে পারে ভেবে মুহূর্তেই একটি স্প্রিন্ট টানলেন কোমল। ছোট্ট খাট্টো চেহারার এটিকে ফুটবলারের সামনে তখন দেশের সেরা গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু। বল ধরে কোমল বাঁ পায়ে এত দুর্দান্ত প্লেসিং করলেন যে বেঙ্গালুরু গোলকিপার তা ছোঁয়ার সুযোগই পেলেন না। বলে বেশ জোরও ছিল।

ম্যাচের পর কোমলের গোল নিয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর দলের কোচ স্টিভ কপেলের সঙ্গে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক সুনীলও। কপেল বললেন, ‘‘অসম্ভব প্রতিভাবান। দুর্দান্ত গোলটা করেছে। কিন্তু সেটা আমরা কাজে লাগাতে পারলাম না।’’ আর সুনীল বলে গেলেন, ‘‘কোমল প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার। তবে ওকে এখন থেকেই আমাদের কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না। ওকে খেলতে দিন। চাপ বাড়াবেন না।’’ খাটো চেহারার ফুটবলার বলে যুব বিশ্বকাপে মাত্র একটি ম্যাচ কোমলকে খেলিয়েছিলেন তৎকালীন জুনিয়র দলের কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস। তাঁকে আই লিগের দল ইন্ডিয়ান অ্যারোজ থেকেও ছেঁটে ফেলা হয়। এর পর গত বছর এটিকেতে নাম লেখালেও একটি ম্যাচও খেলেননি। টেডি শেরিংহ্যামের দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন আর জেদ বাড়িয়েছেন। এ বার সুযোগ পেয়েই কোমল ফুটে উঠেছেন অনেক তারকার মধ্যে থেকে। প্রতিযোগিতায় নিজের প্রথম গোল করে কোমল এতটাই তৃপ্ত ছিলেন যে জার্সির কলার তুলে গোল-উৎসব পালন করতে দেখা গেল তাঁকে।

শুরুতে কোমলের দুর্দান্ত গোল কলকাতাকে এগিয়ে দিলেও কপেলের দলকে শেষ পর্যন্ত মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হল। এটিকেতে যিনি অন্ধকার নামালেন তিনি ভেনেজুয়েলার বিশ্বকাপার, বেঙ্গালুরুর স্ট্রাইকার মিকু। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে এটিকে বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পেয়েছিল বেঙ্গালুরু। দিমাস দেলগাডোর সঙ্গে ছোট্ট একটা পাস খেলে মিকু গোলটি করলেন ছবির মতো। ছয় ফুটের এটিকে গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের বাড়িয়ে দেওয়া হাতও সেই সোয়ার্ভিং শট ছুঁতে পারল না। ওই গোলটাই অক্সিজেন দিল বেঙ্গালুরুকে। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টও ওই গোলই। এটিকে কোচ বলেও দিলেন, ‘‘সেট পিসে বেঙ্গালুরু প্রচন্ড শক্তিশালী। সেটা ছেলেদের বলেছিলাম। বিরতির মুখে মিকুর গোলটাই খেলা ঘুরিয়ে দিল। আমরা দ্বিতীয় যে গোলটা খেয়েছি সেটা রক্ষণ সংগঠনের ভুলে।’’

মিকুর গোলে সেই যে অন্ধকার নামল, সেটা বিরতির দু’মিনিট পর অমাবস্যা হয়ে দেখা দিল এটিকেতে। দু’মিনিটের মধ্যে দুটো গোল করে ফেললেন গতবারের রানার্সরা। বিরতির আগে এবং পরে। বেঙ্গালুরুকে ২-১ এগিয়ে দেওয়ার গোলটা এরিক পার্তালু করলেন এটিকে রক্ষণের ভুলে। রিকির হেডে ফিরিয়ে দেওয়া বল যখন অস্ট্রেলিয়া-এস্তোনিয়া মিডিওর পায়ে তখন জন জনসনরা স্থবির।

বেঙ্গালুরু দলটার মূল কাঠামো পাঁচ বছর ধরে প্রায় অটুট। সামান্য কিছু অদলবদল হয়েছে দলে। বেঙ্গালুরুর সাফল্যের রসায়ন সেটাই। ম্যাচের পর সুনীল বলছিলেন, ‘‘১-০ পিছিয়ে পড়ার পর চাপে পড়ে গিয়েছিলাম ঠিক। তবে জানতাম ঘুরে দাঁড়াবই। বিরতির আগে মিকুর গোল আমাদের ঘুরে দাঁড় করিয়েছিল।’’ তবে এটিকের লড়াই করার ক্ষমতা আরও কমে গিয়েছিল কালু উচে চোট পেয়ে বিরতির আগে বেরিয়ে যাওয়ায়। ম্যাচের শেষে দেখা গেল ক্র্যাচ নিয়ে তাঁকে স্টেডিয়াম ছাড়তে।

এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, আইবর, জন জনসন, গার্সন ভিয়েরা, রিকি লালামিনামাওয়া, ডস স্যান্টোস, কোমল থাটাল (জয়েশ রানে), প্রণয় হালদার, বলবন্ত সিংহ (হিতেশ শর্মা), ম্যানুয়েল লাঞ্জারোতি, কালু উচে (নৌসার মাইমনি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE