Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
লা লিগা

উত্তপ্ত, আগ্রাসী এল ক্লাসিকোয় প্রাপ্তি ৪ গোল

আর্জেন্তিনা অধিনায়ককে এতটা আগ্রাসী হতে খুব কমই দেখেছি। মনে হচ্ছিল, মেসি যেন জীবন বাজি রেখে খেলতে নেমেছেন। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে সের্খিয়ো রবের্তো লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যান।

জুটি: এল ক্লাসিকোয় গোলের পরে সুয়ারেসের কোলে মেসি। ছবি: রয়টার্স

জুটি: এল ক্লাসিকোয় গোলের পরে সুয়ারেসের কোলে মেসি। ছবি: রয়টার্স

শিশির ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ১৭:৩০
Share: Save:

বার্সেলোনা ২ : রিয়াল মাদ্রিদ ২

ফুটবল না কুস্তি? রবিবার রাতে ক্যাম্প ন্যু-তে লা লিগার এল ক্লাসিকোয় ফুটবল ছাড়া বাকি সবই ছিল!

বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদ কোনও দলেরই লা লিগা ভাগ্য হয়তো এই এল ক্লাসিকোর উপর নির্ভরশীল ছিল না। কিন্তু দু’দলের কাছেই ম্যাচটা ছিল মর্যাদার লড়াই। তাই শুরু থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আবহ। অবশ্য প্রদর্শনী ম্যাচেও রিয়াল-বার্সা মুখোমুখি হলে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। অনেকটা আমাদের এখানকার ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো। রেষারেষি লেগেই রয়েছে। ফুটবলারদের মধ্যেও যে তা ছড়িয়ে পড়ছে, তা লিয়োনেল মেসিকে দেখেই বোঝা গিয়েছে।

আর্জেন্তিনা অধিনায়ককে এতটা আগ্রাসী হতে খুব কমই দেখেছি। মনে হচ্ছিল, মেসি যেন জীবন বাজি রেখে খেলতে নেমেছেন। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে সের্খিয়ো রবের্তো লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যান। বার্সা দশ জন হয়ে যাওয়ার পরে সেই জেদটা যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল মেসির। এক মিনিটের মধ্যেই রিয়াল অধিনায়ক সের্খিয়ো রামোসকে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখলেন। ৫২ মিনিটে লুইস সুয়ারেসের পাস থেকে অসাধারণ গোলের পর ওঁর উৎসবের ভঙ্গিটাই বলে দিচ্ছিল, কতটা তেতে ছিলেন। তুলনায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে অনেক বেশি শান্ত দেখিয়েছে। সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে লিভারপুলের বিরুদ্ধে ম্যাচ। তাই হয়তো নিজেকে উজাড় করে দেননি এল ক্লাসিকোয়। রিয়াল ম্যানেজার জিনেদিন জিদানও সি আর সেভেনকে পুরো ম্যাচ খেলানোর
ঝুঁকি নেননি।

তবে আমাকে অবাক করেছে ফুটবলারদের বদলে যাওয়া মানসিকতা। এল ক্লাসিকো তো আর যুদ্ধ নয়। ফুটবল ম্যাচ। তাই আশা করেছিলাম আন্দ্রে ইনিয়েস্তার শেষ এল ক্লাসিকোয় ফুটবলাররা অন্তত সৌজন্যবোধ হারিয়ে ফেলবেন না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল। কোনও ফুটবলার চোট পেলে সঙ্গে সঙ্গে রেফারির উচিত খেলা থামিয়ে দেওয়া। কোনও কারণে রেফারি যদি তা না করেন, সে ক্ষেত্রে ফুটবলাররা নিজেরাই বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে খেলা থামিয়ে দেন। রবিবারের এল ক্লাসিকোতেই ব্যতিক্রমী ছবি দেখল বিশ্ব। রিয়ালের কেউ চোট পেয়ে পড়ে রয়েছেন মাঠে। বার্সার ফুটবলাররা কিন্তু খেলা থামানোর কোনও চেষ্টা করেননি। একই কাজ করলেন রিয়ালের ফুটবলাররাও। এর জন্য আমি শুধু ফুটবলারদের দায়ী করতে চাই না। আমার মতে রেফারিও সমান ভাবে দোষী। ওঁর তো উচিত ছিল বাঁশি বাজিয়ে খেলা সাময়িক ভাবে থামিয়ে দেওয়া। তা কিন্তু করেননি। পুরো ম্যাচেই একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমন রিয়ালকে ন্যায্য পেনাল্টি না দেওয়া। ৭৫ মিনিটে জর্ডি আলবা পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ফেলে দেন মার্সেলো ভিয়েরাকে। পরিষ্কার পেনাল্টি। আশ্চর্যজনক ভাবে চোখ এড়িয়ে গেল রেফারির।

নিষ্ফলা এল ক্লাসিকোয় প্রাপ্তি বলতে চারটি অসাধারণ গোল ও গ্যারেথ বেলের ছন্দে ফিরে আসা। ম্যাচের ১০ মিনিটে সুয়ারেস গোল করে এগিয়ে দেন বার্সাকে। রিয়াল রক্ষণে দানি কার্ভাহালের অভাবটা বোঝা যাচ্ছিল। চার মিনিটের মধ্যেই সমতা ফেরান রোনাল্ডো। গোলের চেয়ে আমাকে মুগ্ধ করছে সি আর সেভেনের গোলের রাস্তা তৈরি করার পরিকল্পনা। পিছন থেকে উঠে আসা টোনি ক্রোসকে পাস দেন রোনাল্ডো। রিয়াল মিডফিল্ডার সেন্টার করেন পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ফাঁকায় দাঁড়ানো করিম বেঞ্জেমাকে। তিনি আবার হেড করেন ছ’গজ বক্সে ঢুকে পড়া সি আর সেভেনকে। ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দেন রোনাল্ডো। দীর্ঘ অনুশীলনের ফল এই গোল। রিয়ালের হয়ে বেলের গোলটাও দুর্দান্ত বোঝাপড়ার প্রতিফলন। বেঞ্জেমার বল ছাড়া দৌড় ধন্দে ফেলে দিয়েছিল বার্সা ডিফেন্ডারদের। সেই সুযোগে মার্কো আসেন্সিয়োর পাস থেকে বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো শটে অনবদ্য গোল করলেন ওয়েলস তারকা। একইসঙ্গে সমস্যায় ফেললেন জিদানকেও! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগের বেশ কয়েকটি ম্যাচে বেলকে ছাড়াই প্রথম একাদশ গড়েছেন রিয়াল ম্যানেজার। রবিবার রাতে যে রকম বিধ্বংসী মেজাজে দেখলাম বেলকে, তাতে জিদানের পক্ষে লিভারপুলের বিরুদ্ধে ফাইনালে ওঁকে বাদ দিয়ে দল নামানো কিন্তু কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

El Clasico Barcelona Real Madrid Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE