Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিপর্যস্ত বার্সা, আক্রান্ত মেসি

চার গোলে হেরে বিদায়ের আতঙ্কে এমএসএনের দল

দশ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই বিদায়ের মুখে বার্সেলোনা। কিন্তু সেটা নয়। যে ভাবে ০-৪ গোলে এমএসএনের দল বিধ্বস্ত হল প্যারিস সঁ জরমঁ-র হাতে, সেটাই ফুটবল দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

দি মারিয়াদের সামনে মেসির পতন। -এএফপি

দি মারিয়াদের সামনে মেসির পতন। -এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

দশ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই বিদায়ের মুখে বার্সেলোনা। কিন্তু সেটা নয়। যে ভাবে ০-৪ গোলে এমএসএনের দল বিধ্বস্ত হল প্যারিস সঁ জরমঁ-র হাতে, সেটাই ফুটবল দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, কী হল বিশ্বের সবচেয়ে তারকা-সমৃদ্ধ দলের?

অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া দুর্ধর্ষ খেলে মেসিকেও ম্লান করে দিয়েছেন। চার গোলের দু’টি তাঁর। অন্য দু’টি কাভানি ও ড্র্যাক্সলারের। পিএসজি দারুণ ফুটবল খেলেছে। সে সব মেনে নিয়েও ময়নাতদন্ত চলছে যে, বার্সেলোনা কতটা খারাপ খেলেছে?

স্প্যানিশ ফুটবলে ভূমিকম্প

বার্সেলোনার বিপর্যয়ে স্পেনে যেন ভূমিকম্প হয়ে গিয়েছে। লুইস এনরিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা শুরু হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে বার্সেলোনা ম্যানেজারকেই। তিকিতাকা ও স্প্যানিশ ফুটবল নিয়ে অনেকদিন ধরেই নানা নেতিবাচক কথাবার্তা চলছিল। এই হারে সেই আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে। ম্যাচের পরিসংখ্যান থেকে অবিশ্বাস্য সমস্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন গোটা ম্যাচে মেসি প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে একবারও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি। পিএসজি যেখানে লক্ষ্যে ১০টি শট নিয়েছে, সেখানে বার্সার ছিল মাত্র একটি গোলমুখী শট। যা দেখে কারও কারও মনে হচ্ছে, প্যারিসে কি ঝড় শুরু হয়ে গেল যে, এ বার বার্সাও পতনের মুখে কি না?

আক্রান্ত জাদুকর মেসিও

প্যারিসে বার্সেলোনার বিপর্যয় লিও মেসিকেও কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছে। রিও ফার্ডিনান্ড, স্টিভেন জেরারের মতো প্রাক্তনরা পর্যন্ত মেসির সমালোচনায় মুখর। ফার্ডিনান্ড বলেছেন, ‘‘মেসিকে হতাশ, দুর্বল দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, ও কোনও পথই খুঁজে পাচ্ছে না।’’ জেরার আরও চাঁচাছোলা ভাষায় বলেছেন, ‘‘কোনও চেষ্টাই দেখায়নি মেসি।’’ গ্যারি লিনেকার টুইট করেছেন, ‘বার্সেলোনা খুব খারাপ খেলল। মেসিকেও এত খারাপ খেলতে আমি কখনও দেখিনি’।

কোথায় ভুল করল বার্সেলোনা

এক কথায় বলতে গেলে সমস্ত কিছুই ভুল করেছে তারা। মাঝমাঠের খেলায় পিএসজি তাদের দুরমুশ করে দিয়ে গিয়েছে। সুপারস্টার ত্রয়ী এমএসএন সম্পূর্ণ ফ্লপ। এত নিষ্প্রভ এবং শক্তিহীন আর কখনও দেখা যায়নি মেসি, সুয়ারেজ, নেমারের ত্রিমুখী ফলাকে। নেমার তাও কয়েক বার বিপজ্জনক ভাবে দৌড় শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। পিএসজি মাঝমাঠের ত্রয়ী মার্কো ভেরাত্তি, আদ্রিয়া হাবিউ এবং ব্লেস মাটুডি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ গোলের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে এই ত্রয়ীর দাপট। মেসিদের চরম ব্যর্থতার দিনেই দুর্দান্ত খেললেন বার্সেলোনার গোলকিপার মার্ক-আন্দ্রে তার স্তেগান। না হলে আরও বড় লজ্জা অপেক্ষা করত বার্সেলোনার জন্য। কারও কারও মনে পড়ে যাচ্ছিল গত বিশ্বকাপে জার্মানির হাতে ব্রাজিলের সাত গোলে চূর্ণ হওয়ার সেই দৃশ্য। সে দিন যেমন মুলারদের সামনে অসহায় দেখিয়েছিল ব্রাজিলকে, প্যারিসে তেমনই দিশেহারা লাগছিল বার্সাকে।

এভাবেই ম্যাচের রাশ ধরে রাখলেন দি মারিয়া।

কেউ কি ভাবতে পেরেছিল

একেবারেই না। কেউ ভাবেনি পিএসজি এ ভাবে চূর্ণ করে দিয়ে যাবে তারকাখচিত বার্সেলোনাকে। কিন্তু বিপর্যয়ের পরে অনেকের চোখ খুলে গিয়েছে। তাঁরা এখন বলছেন, ‘‘গোটা মরসুম ধরে লা লিগায় বার্সেলোনার খেলায় ধারাবাহিকতা ছিল না। মাঝেমধ্যেই এলোমেলো, উদ্দেশ্যহীন দেখিয়েছে। তখন যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি ক্লাব। এখন ফল ভুগতে হচ্ছে।’’ লা লিগায় খেতাব জয় থেকে দূরে সরে গিয়েছে বার্সেলোনা। তা ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অনেক বেশি কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে পড়তে হয়। ভাল দলের সামনে পড়লেই মেসিদের বিভ্রান্ত দেখিয়েছে। পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ৩-১ হারিয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহে কোপা দেল রে সেমিফাইনালে আতলেতিকো দে মাদ্রিদের বিরুদ্ধেও তাদের খেলায় কোনও আকর্ষণ ছিল না। লা লিগায় চলতি মরসুমে প্রথম ছয়ের মধ্যে থাকা দলের মধ্যে একমাত্র সেভিয়াকে হারাতে পেরেছেন মেসিরা। এখন তাই পাল্টা বলা হচ্ছে, দেখেও কি দেখেননি বার্সেলোনা কর্তারা? নাকি তাঁরা ভেবেছিলেন এমএসএনের হাত ধরে সব যুদ্ধই পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব।

এনরিকের শেষের শুরু?

প্যারিসে সম্ভবত বিধান লেখাই হয়ে গেল। মরসুম শেষে হয়তো বিদায় নিতেই হবে মেসিদের ম্যানেজার লুইস এনরিকে-কে। সবচেয়ে চিন্তার কথা হচ্ছে, মাঠের ধারে বা বেঞ্চে বসে থাকা এনরিকের মুখে কখনওই স্বস্তির ছাপ দেখা যায় না। সারাক্ষণই তাঁর সঙ্গী আতঙ্কিত চোখমুখ। যা দেখে স্পেনের পণ্ডিতরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, এনরিকের নেতিবাচক শরীরীভাষাটাও কি দলের পক্ষে মঙ্গলজনক? এর সঙ্গে সঠিক রণনীতি করার ব্যাপারে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই। এমএসএনের মতো বিখ্যাত তারকাদের সামলানোর নীতিও প্রশ্নের উর্দ্ধে নয়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বিদায়ের মুখে। লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে পয়েন্টে পিছিয়ে। জিদান ও রোনাল্ডোর রিয়ালের হাতে এখনও দু’টি ম্যাচ আছে। বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে রোনাল্ডোরাই চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন। তখন আরও বেশি করে ‘এনরিকে হঠাও’ স্লোগান উঠতে পারে। যে ক্লাবের ম্যানেজারদের তালিকায় ক্রুয়েফ, রাইকার্ড, গুয়ার্দিওলাদের নাম রয়েছে, সেখানে এনরিকে খুব মানানসই নাম কি?

আরও পড়ুন:

সুনীলদের নজরদারিতে মোবাইল অ্যাপ

কোনও আশা কি আছে?

মেসিদের পক্ষে সেমিফাইনালে যাওযা কার্যত অসম্ভব। একে তো চার গোলের ঘাটতি মেটানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ থাকছেই। তার ওপর পিএসজি একটি অ্যাওয়ে গোল করে দেওয়া মানে বার্সেলোনাকে দু’লেগ মিলিয়ে ম্যাচ জিততে গেলে ছয় গোল করতে হবে নিজেদের মাঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lionel Messi Barcelona Champions League Defeat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE