সঞ্জয় মঞ্জরেকর নিয়মিত বলে থাকেন, ব্যাটসম্যান হিসেবে যে উচ্চতায় পৌঁছনোর উচ্চাকাঙ্খা তাঁর ছিল, তার আদ্ধেক রাস্তাও পৌঁছতে পারেননি।
পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেই সময়কার ভয়ঙ্করতম ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে পাদানির মতো ব্যবহার করা উচিত ছিল ছোট মঞ্জরেকরের। কিন্তু বিরানব্বইয়ের অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে সেই যে তাঁর রান না পাওয়া শুরু হয়, তা সে বার বিশ্বকাপেও কাটেনি। যখন বছরখানেকের মধ্যে অবসর নিয়ে নেন, মাত্র ৩৭ টেস্টে দু’হাজারের কিছু বেশি রান করেছেন তিনি। গড় মাত্র ৩৭ যা তাঁর পর্যায়ের ব্যাটসম্যানের জন্য কোনও সন্তোষজনক গড়ই নয়।
প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে আপাতত যে ধর্মযুদ্ধে তিনি একক ভাবে অবতীর্ণ তাতে সফল হলে কিন্তু আধুনিক ক্রিকেট ইতিহাস তাঁকে সেই স্থায়িত্ব দেবে, যা ক্রিকেট ব্যাট দিতে পারেনি। প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি, এমসিসি এবং আইসিসি-র টেকনিক্যাল কমিটির কাছে আবেদন জানিয়েছেন মঞ্জরেকর যে, ব্যাটের ঘনত্ব সম্পর্কে একটা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে। নইলে পারফরম্যান্সে মুড়ি আর মুড়কি এক দর হয়ে যাচ্ছে।
সোমবার হ্যামিলটনে নেমে মঞ্জরেকর এবিপিকে বলছিলেন, “আমি চাই ব্যাটের ঘনত্ব এক ইঞ্চির বেশি হবে না। চওড়াতেও বিধিনিষেধ থাকবে। ব্যাটের ওজন নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। ওজন যত ইচ্ছে হতে পারে। আসল হল থিকনেস। যত বেশি থিকনেস ততই সুইট স্পটের সংখ্যা বেশি। তত বল টাচ করলেই উড়ে যাচ্ছে। এটা চলতে দেওয়া যায় না।”
মঞ্জরেকরের ধারণা, বিশ্বকাপের পর এটা নিয়ে নড়াচড়া এ বার হতে বাধ্য। এক একটা ম্যাচ এমন ছেলেখেলার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সব টিমই কম-বেশি যে ভাবে তিনশো করে ফেলছে। এক একটা সপ্তাহে ছয়-সাত জন ব্যাটসম্যান দারুণ খেলে দিচ্ছে যে, তাঁদের মধ্যে সেরা কে বোঝাই যাচ্ছে না। সবাই তো দারুণ! ম্যাক্সওয়েলকে অবশ্য এই দলে রাখতে রাজি নন মঞ্জরেকর। মনে করেন, ম্যাক্সওয়েল নিছক পাওয়ার নন। স্কিলও।
বিজয় মঞ্জরেকর পুত্রকে ইতিমধ্যে আইসিসি থেকে আশ্বাস দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বড় কর্তা ডেভ রিচার্ডসন। এমসিসি থেকেও চিঠি এসেছে। অতীতের মতো ক্রিকেটের নিয়ম তৈরি এখন আর এমসিসি করে না কিন্তু তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য থাকে। বন্ধু কুম্বলের কাছেও মেল পাঠিয়ে রেখেছেন সঞ্জয়। মনে করেন, টেকনিক্যাল কমিটি প্রধান হিসেবে কুম্বলেও এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন। আইসিসি যেমন বিশ্বকাপের পর তিরিশ গজি বৃত্তের মধ্যে সব সময় পাঁচ জন রাখার নিয়ম বদলাবে বলে ভাবছে তেমনই ব্যাট-বলের লড়াই অসম হয়ে পড়াকে অগ্রাধিকার দেবে।
মঞ্জরেকরের দাবি ব্যাট এ বার থেকে দু’ধরনের হবে। এক রকমের ব্যাট আইনসিদ্ধ আর এক রকম নয়। আপাতত ব্যাট মানেই আইনসিদ্ধ তা তার ঘনত্ব তিন ইঞ্চি হলেও। এ দিনই শুনে খুব উৎসাহিত হয়েছেন ব্যারি রিচার্ডসের মন্তব্য। রিচার্ডস বলেছেন, সবাই বলে চামড়া তুলে বোলার অন্যায় সুবিধে নিচ্ছে। বল ট্যাম্পারিং হচ্ছে। এখন যেটা হচ্ছে তা হলে সেটা নিয়ে কেন আওয়াজ তোলা হবে না? ওটা বল ট্যাম্পারিং হলে এটা তো পরিষ্কার ব্যাট-ট্যাম্পারিং।
মঞ্জরেকরের কথা শুনে মনে হল টিভি কমেন্ট্রি, কলাম লেখা আর প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে নিজের অস্তিত্বের বাইরে নতুন সংস্কারবাদী ভূমিকা নিয়ে খুব সিরিয়াস। এটা তাঁর কাছে এখন ধর্মযুদ্ধ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy