Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Football

কোমানকে নামিয়েই বাজিমাত গুরু হান্সের, চ্যাম্পিয়ন্সে চ্যাম্পিয়ন বুম বুম বায়ার্ন

বায়ার্নের রণনীতিই হচ্ছে, বিপক্ষের ফুটবলারদের বল ধরতে না দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে আক্রমণে ওঠা। রবিবার লিসবনে থিয়াগো আলকান্তারার নেতৃত্বে শুরু থেকে সেটাই করছিল বায়ার্ন।

সেরা: বুন্দেশলিগা, জার্মান কাপের পরে ইউরোপ সেরার ট্রফি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে উল্লাস লেয়নডস্কিদের। ছবি: গেটি ইমেজেস।

সেরা: বুন্দেশলিগা, জার্মান কাপের পরে ইউরোপ সেরার ট্রফি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে উল্লাস লেয়নডস্কিদের। ছবি: গেটি ইমেজেস।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৬:০০
Share: Save:

পিএসজি ০ • বায়ার্ন ১

বার্সেলোনাকে ৮-২ চূর্ণ করার পরেই গোটা বিশ্ব বুঝে গিয়েছিল, বায়ার্ন মিউনিখের ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় কেউ আটকাতে পারবে না। রবার্ট লেয়নডস্কি, থোমাস মুলারদের আগ্রাসনের শিকার এ বার কারা হয় তা নিয়েই আগ্রহ তুঙ্গে ছিল। যদিও রবিবার ফাইনালে প্যারিস সাঁ জারমাঁর (পিএসজি) বিরুদ্ধে মাত্র ১-০ জয় দেখে অনেকেই হতাশ হয়েছেন।

ফাইনালে দু’দলের দুই ম্যানেজারের মস্তিষ্কের লড়াই বেশ উপভোগ করেছি। বায়ার্নের হান্স ফ্লিক ও পিএসজি-র থোমাস টুহেল দু’জনেই জার্মান। অভিজ্ঞতায় নেমারদের ম্যানেজার বরং একটু এগিয়ে। পিএসজি-র দায়িত্ব নেওয়ার আগে দু’বছর বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ম্যানেজার ছিলেন। লেয়নডস্কি, মুলার-সহ বায়ার্নের অনেক ফুটবলারের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। অন্য দিকে, জার্মানিতে বায়ার্নই প্রথম বড় ক্লাব হান্সের।

বায়ার্নের রণনীতিই হচ্ছে, বিপক্ষের ফুটবলারদের বল ধরতে না দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে আক্রমণে ওঠা। রবিবার লিসবনে থিয়াগো আলকান্তারার নেতৃত্বে শুরু থেকে সেটাই করছিল বায়ার্ন। ছ’মিনিটে লেয়নডস্কির পাস থেকে নেওয়া থিয়াগোর শট ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। বায়ার্ন-ঝড় সামলে মিনিট দশেক পরে আক্রমণে উঠতে শুরু করে পিএসজি। ১৮ মিনিটে নেমারের পাস থেকে নেওয়া এমবাপের শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচায় গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার। ২২ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল জার্মান বুন্দেশলিগা চ্যাম্পিয়নেরা। লেয়নডস্কির শট ধাক্কা খায় পোস্টে। দু’মিনিটের মধ্যেই অবিশ্বাস্য ভাবে সামনে একা ন্যয়ারকে পেয়েও ক্রসবারের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেয় অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া।

ফরাসি লিগ চ্যাম্পিয়নদের প্রধান সমস্যা দলটা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নেমার ও এমবাপের উপরে। এক বা দু’জন ফুটবলারের ব্যক্তিগত নৈপুন্যে যে সব ম্যাচ জেতা যায় না, আরও একবার প্রমাণিত। যে কোনও দলের সাফল্য নির্ভর করে দলগত ফুটবলের উপরে। যা বায়ার্নের অস্ত্র।

নায়ক: ম্যাচের একমাত্র গোলটি বায়ার্নের কোমানের। ছবি: গেটি ইমেজেস।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬১ শতাংশ বলের দখল ছিল বায়ার্নের! সফল পাস ৪৬২টি। স্যাজ ন্যাব্রিরা দৌড়েছে ১০৩.৯ কিলোমিটার। পিএসজি-র সফল পাসের সংখ্যা ২৬২টি। নেমারেরা দৌড়েছে ৯৯.৫ কিলোমিটার। এই পরিসংখ্যান থেকেই পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: অধরা ট্রফি, নতমস্তকে চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন নেমার

প্রশ্ন উঠছে তা হলে কেন একটির বেশি গোল করতে পারল না বায়ার্ন? আমার মতে, পিএসজি ম্যানেজারের রণনীতি এর নেপথ্যে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাগ শক্তিশালী হলে, সব ম্যানেজারেরই লক্ষ্য থাকে প্রথমে গোল খাওয়া আটকানো। পিএসজি-র খেলার মধ্যেও সেই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। বেশ কয়েকবার নেমারকেও দেখা গিয়েছে নেমে এসে বায়ার্নের আক্রমণ রোখার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে ডান প্রান্ত থেকে ন্যাব্রি-জোশুয়া খিমিচ, বাঁ-দিক থেকে ইভান পেরিসিচ ও আলফান্সো ডেভিস বার বার বল নিয়ে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ছিল। রবিবার প্রথমার্ধে বায়ার্নের খেলায় তা দেখা যায়নি। মনে হয়, নেমার, এমবাপে, দি’মারিয়াকে আটকানোর জন্যই রণনীতিতে সামান্য পরিবর্তন করেছিলেন হান্স। তবে এই ম্যাচে বায়ার্ন ম্যানেজারের সেরা চাল পেরিসিচকে বসিয়ে কিংসলে কোমানকে শুরু থেকে খেলানো।

পিএসজি অ্যাকাডেমি থেকেই উত্থান কোমানের। উপেক্ষার যন্ত্রণা নিয়ে জুভেন্টাসে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে বায়ার্ন। হান্স জানতেন, এই ম্যাচটার তাৎপর্য কোমানের কাছে একেবারে আলাদা। ৫৯ মিনিটে জোশুয়ার সেন্টারে মাথা ছুঁইয়ে বায়ার্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের দরজা খুলে দেয় কোমান। অবশ্য এই গোলের জন্য দায়ী পিএসজি-র থিলো খেরা। ওর উচিত ছিল কোমানের পিছনে থাকা। তা না করে সামনে চলে এল। থিলোর মাথার উপর দিয়েই বলটা যায় কোমানের কাছে। গোল করার মিনিট দশেকের মধ্যেই ওকে তুলে পেরিসিচকে নামান বায়ার্ন ম্যানেজার। ঠিক যেন এই কাজটার জন্যই ওকে নামিয়েছিলেন।

সত্যি, অনবদ্য হান্স!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE