বিরাট যখন ফাইনালের দর্শক। ছবি: টুইটার
ইন্টারনেটে দেখছি আইসিসি আজ একটা বিশেষ টিম করেছে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টি একাদশ। টিমে ক্রিস গেইল বা এবি ডে’ভিলিয়ার্সের মতো কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের মস্তান নেই দেখে প্রথমে একটু অবাক হলাম। তার পর দেখলাম, এটা এ বারের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তৈরি টিম। গেইলের তো প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিটা ছাড়া আর কোনও বড় রান নেই। এবির সেটাও নয়।
তবে আইসিসি টিমটার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এটা নয়। যেটা সবচেয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ, সেটা হল ওদের অধিনায়ক বাছাই। সীমিত ওভারের আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক বলা হয় মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। কিন্তু সেই ধোনি অধিনায়ক তো নয়ই, ওকে টিমেও রাখা হয়নি। তার চেয়েও বড় চমক, আইসিসি বিশ্ব টি-টোয়েন্টি টিমের অধিনায়ক করেছে বিরাট কোহালিকে!
বিশ্বাস করুন, টিমলিস্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে বিরাটের নামটা দেখেই মনে হল, সত্যি তো। এটাই তো হওয়া উচিত। আর তার পরপরই মনে হল, আমাদের জাতীয় নির্বাচকেরা কি এই টিমটা দেখেছেন? যদি দেখে থাকেন, তা হলে কি তাঁরা সেটা থেকে কোনও নোট নিয়েছেন? যদি না নেন, তা হলে বলব অবশ্যই নেওয়া উচিত। কারণ আমার তো মনে হয়, ধোনিকে সরিয়ে বিরাটকে সীমিত ওভারেও অধিনায়ক করে দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
দেখুন, সব অধ্যায়েরই একটা শেষ থাকে। কোনও কিছুই তো অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। আমি ক্যাপ্টেন ধোনিকে কোনও ভাবে ছোট করছি না। অধিনায়ক হিসেবে দেশকে ও যা যা দিয়েছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ও দারুণ কাজ করেছে। কিন্তু তা-ও বলব, সময় কারও জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না। আর আমার মনে হয়, পাঁচ-ছ’বছর পর অধিনায়ক বদল করা খুব দরকার। তাতে টিমে একটা তরতাজা ব্যাপার থাকে। বছরের পর বছর টিম এক জায়গায় আটকে থাকে না।
টেস্টে বিরাটের অধিনায়কত্ব দেখে দারুণ লেগেছে। এই যে জয় ছাড়া ছেলেটা অন্য কিছু নিয়ে ভাবেই না, এই যে বলে দেয় ‘হারলে হারব, কিন্তু ড্রয়ের রাস্তায় যাব না’, এগুলো ধোনির ক্যাপ্টেন্সির থেকে একদম আলাদা মানসিকতা। এই নতুন ভাবনাচিন্তার অক্সিজেনটা টিমের খুব দরকার। নতুন আইডিয়া, নতুন মনোভাব, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। যেটা সাপ্লাই করার সেরা লোক বিরাটই।
অধিনায়ক ধোনি এই বিশ্বকাপে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলোর ব্যাখ্যা ক্রিকেট দিয়ে করা যাবে না। এই যে অশ্বিনের চারটে ওভার পুরো না করানো, হার্দিক পাণ্ড্য বা রবীন্দ্র জাডেজাকে বেশি ওভার দেওয়া, শেষ ওভারে বিরাটকে আনা— এগুলো নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। এ রকম সব ফাটকা ওর ক্যাপ্টেন্সিতে নতুন কিছু নয়। আসলে ধোনি এত বেশি সাফল্য পেয়েছে যে, তার পেছনে এগুলো এত দিন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। এখন পরপর ব্যর্থতা সেগুলোকে সবার চোখের সামনে এনে ফেলেছে।
ধোনির আর একটা ব্যাপার আছে যেটা আমার বিশেষ ভাল লাগে না। সেটা হল, ওর প্রিয় প্লেয়ারদের টানা সুযোগ দিয়ে যাওয়া। এই যে একটু আগে হার্দিকের কথা বলছিলাম। ছেলেটা যতই রান দিক, যতই খারাপ বল করুক, ওকে দিয়ে সমানে সব ম্যাচে প্রায় পুরো ওভার বল করিয়ে গেল ধোনি। তার পর সুরেশ রায়নার কথা ধরুন। শেষ কবে রান করেছে, মনে করতে পারছি না। তবু ওকে টানা চারে নামিয়ে যাবে ধোনি। ভাল খেলুক, খারাপ খেলুক, ম্যাচের পর ম্যাচ খেলিয়ে যাবে। জাডেজা আর এক জন। মানছি, সব অধিনায়কেরই প্রিয় প্লেয়ারের প্রতি একটু বেশি প্রশ্রয় থাকে, কিন্তু ধোনি সেটাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।
২০১৯ ওয়ান ডে বিশ্বকাপা মাথায় রাখলে আরও বেশি করে মনে হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিরাট কোহালিকে অধিনায়কত্ব দিয়ে দেওয়া হোক। মনে হচ্ছে ওটার তো অনেক দেরি। কিন্তু একটা বিশ্বকাপের জন্য ঠিকঠাক তৈরি হতে গেলে তিন বছর খুব বেশি সময় নয়। এখন বিরাটকে সব ফর্ম্যাটের নেতৃত্ব দিলে বিশ্বকাপের সময় ওর অভিজ্ঞতা, ওর আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি থাকবে। দেশের জন্য সেটা খুব জরুরি নয় কি?
এত কিছু যে বললাম, ভাববেন না আমি চাই ধোনির অবসর নিয়ে নিক। সেটা কিন্তু একেবারেই নয়। আমি মনে করি, অধিনায়কত্ব ছেড়ে শুধু প্লেয়ার হিসেবে খেলাটা এখন ধোনি আর টিমের পক্ষে অনেক বেশি ভাল। কারণ ওর লেভেলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান এখনও দেশে কেউ নেই। তাই প্লেয়ার ধোনিকে এখনও টিমের ভীষণ দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy