Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তৃতীয় হলেও বেলজিয়াম কিন্তু আনন্দ দিয়ে গেল

বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে নামার আগে ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের মন্তব্য আমাকে বিস্মিত করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা এমন একটা ম্যাচ, যা কোনও দলই খেলতে চায় না।’’ অথচ বেলজিয়ামের কোচ রবের্তো মার্তিনেস জানিয়েছিলেন, তাঁর পাখির চোখ এখন ২০২০ সালের ইউরো কাপ। শনিবার থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করতে চান। দু’জনের মানসিকতার পার্থক্য এখানেই।

বিদায় বিশ্বকাপ। তিন নম্বরে অভিযান শেষ করলেন কোম্পানিরা। ছবি: রয়টার্স।

বিদায় বিশ্বকাপ। তিন নম্বরে অভিযান শেষ করলেন কোম্পানিরা। ছবি: রয়টার্স।

শিশির ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৫:৩১
Share: Save:

বেলজিয়াম ২ ইংল্যান্ড ০

ফাইনালে না উঠলেও এই বিশ্বকাপে বেলজিয়ামই সেরা দল।

শনিবার সেন্ট পিটার্সবার্গে বেলজিয়াম বনাম ইংল্যান্ডের তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নির্ধারণের ম্যাচটা নিয়ে অধিকাংশেরই খুব একটা আগ্রহ ছিল না। সবাই তাকিয়ে আছে রবিবার মস্কোয় ফ্রান্স বনাম ক্রোয়েশিয়া ফাইনালের দিকে। আমার কাছে কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানের ম্যাচটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেখতে চেয়েছিলাম, স্বপ্নভঙ্গের পরে দু’দলের ফুটবলারেরা মানসিক ভাবে কী অবস্থায় রয়েছেন। বেলজিয়ামকে দেখে আমি মুগ্ধ। এডেন অ্যাজার-কেভিন দে ব্রুইনরা দেখালেন, কেন ওঁদের বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের তালিকায় রাখা হয়।

বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে নামার আগে ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের মন্তব্য আমাকে বিস্মিত করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা এমন একটা ম্যাচ, যা কোনও দলই খেলতে চায় না।’’ অথচ বেলজিয়ামের কোচ রবের্তো মার্তিনেস জানিয়েছিলেন, তাঁর পাখির চোখ এখন ২০২০ সালের ইউরো কাপ। শনিবার থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করতে চান। দু’জনের মানসিকতার পার্থক্য এখানেই।

আগের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা জিতল। অথচ ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবলারেরা অজুহাত দিতে শুরু করেছেন, হ্যারি কেন নাকি পুরো সুস্থ ছিলেন না। সেই কারণেই জিতেছে ক্রোয়েশিয়া। না হলে নাকি ছবিটা বদলে যেত। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, ইংল্যান্ডের দলে বেশিরভাগই তরুণ ফুটবলার। অভিজ্ঞতার অভাবেই ফাইনালে উঠতে পারেনি। শনিবার সেন্ট পিটার্সবার্গে অ্যাজারেরা প্রমাণ করে দিলেন, ইংল্যান্ড ‘কাগুজে বাঘ’ ছাড়া কিছুই নয়।ইংল্যান্ডের সব চেয়ে বড় সমস্যা ওদের মানসিকতা। ক্রিকেট থেকে ফুটবল— সব খেলাতেই ওরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবে। চার-পাঁচ দিন আগে ওরা এমন ভাব করছিল, মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েই গিয়েছে। বিশ্বকাপ নাকি এ বার বাড়ি ফিরছে! যেন ১৯৬৬ সালের পর থেকেই বিশ্বকাপ গৃহহীন! এই অহঙ্কারই ইংল্যান্ডের পতনের নেপথ্যে।

বেলজিয়াম কোচ এ দিন দল নামিয়েছিলেন ৩-৪-৩ ছকে। সাউথগেটের ছক ছিল ৩-৫-২। হয়তো ভেবেছিলেন, মাঝমাঠে ফুটবলার বাড়িয়ে দে ব্রুইনদের ছন্দ নষ্ট করে দেবেন। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খেলেন ইংল্যান্ড কোচ। চার মিনিটে থোমাস মুনিয়ের গোল করে এগিয়ে দেন বেলজিয়ামকে। ম্যাচের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বল দখলের লড়াই এগিয়ে ইংল্যান্ড (৫৭ শতাংশ)। সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, পাঁচ জন মিডফিল্ডার খেলিয়েছেন সাউথগেট। স্বাভাবিক ভাবে পাসও বেশি খেলেছেন এরিক ডায়ারেরা। শনিবার মোট ৬৯৮টি পাস খেলেছেন ইংল্যান্ডের ফুটবলারেরা। যার মধ্যে নিখুঁত পাস ৬৪১টি। বেলজিয়ামের ৫১১টির মধ্যে নিখুঁত পাস ৪৫০টি। কিন্তু বলের দখলের লড়াই এগিয়ে থাকলে বা পাস বেশি খেললেই যে জেতা যায় না, স্পেন ও ব্রাজিলের ব্যর্থতা থেকেই প্রমাণিত। এখন ফুটবলটা খেলতে হয় অনেক অঙ্ক করে। যা এ দিন করে দেখিয়েছেন দে ব্রুইন, রোমেলু লুকাকুরা। শুরু থেকেই আগ্রাসী ফুটবল খেলতে শুরু করে বেলজিয়াম। তাই ইংল্যান্ডের চেয়ে বেলজিয়ামের খেলা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। মুনিয়ের-রা নিজেদের মধ্যে কম পাস খেলে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছিল বিপক্ষের রক্ষণে। বেলজিয়ামের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড় গিয়েছিলেন জন স্টোনস-রা।

হ্যারি কেন-রা কিন্তু সে ভাবে আতঙ্ক তৈরি করতে পারেননি বেলজিয়াম রক্ষণে। ছিল না কোনও উইং প্লে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বিশ্বকাপে ছয় গোল করে সোনার বুট জেতার দৌড়ে সবার আগে রয়েছে। কিন্তু আমি হ্যারি কেন-কে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের তালিকায় রাখতে পারব না। ওঁর ছ’টি গোলের মধ্যে তিনটিই পেনাল্টি থেকে করা! লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তো দূরের কথা, ওয়েন রুনিরও ধারেকাছে থাকবেন না ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার। পুরো ম্যাচে কখনওই হ্যারি কেন-কে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেখলাম না।

বেলজিয়ামের ফুটবলারেরা টানা নব্বই মিনিটই একই ছন্দে খেললেন। ম্যাচ শেষ হওয়া আট মিনিট আগে দে ব্রইনের পাস থেকে দুর্ধর্ষ গোল করলেন বেলজিয়াম অধিনায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE