Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বড় স্ট্রাইকার র‌্যান্টি তবে আমিও তৈরি, হুঙ্কার বেলোর

র‌্যান্টি মার্টিন্স কী ভাবে পা ফেলেন সেটা আর্মান্দো কোলাসোর পরেই যিনি সবচেয়ে ভাল জানেন তাঁর নাম সঞ্জয় সেন। শনিবারের ডার্বিতে নিজের বছর দুয়েক আগের প্রাক্তন ছাত্রকে আটকাতে তাই মোহনবাগান কোচের বাজি বেলো রজ্জাক। যিনি আবার এক সময়ে ইউনাইটেড স্পোর্টসে র‌্যান্টিরই সতীর্থ ছিলেন। তাই র‌্যান্টির গতিবিধি তাঁরও অজানা থাকার কথা নয়।

লক্ষ্য স্থির। মোহনবাগান মাঠে কাতসুমি-নর্ডি। ছবি: উত্‌পল সরকার।

লক্ষ্য স্থির। মোহনবাগান মাঠে কাতসুমি-নর্ডি। ছবি: উত্‌পল সরকার।

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

র‌্যান্টি মার্টিন্স কী ভাবে পা ফেলেন সেটা আর্মান্দো কোলাসোর পরেই যিনি সবচেয়ে ভাল জানেন তাঁর নাম সঞ্জয় সেন। শনিবারের ডার্বিতে নিজের বছর দুয়েক আগের প্রাক্তন ছাত্রকে আটকাতে তাই মোহনবাগান কোচের বাজি বেলো রজ্জাক। যিনি আবার এক সময়ে ইউনাইটেড স্পোর্টসে র‌্যান্টিরই সতীর্থ ছিলেন। তাই র‌্যান্টির গতিবিধি তাঁরও অজানা থাকার কথা নয়।

এবং ডার্বির আগের দিন বেঙ্গলের নাইজিরিয়ান গোলমেশিনকে বাগানের নাইজিরিয়ান স্টপারের হুঙ্কার, “নিঃসন্দেহে ও বড় স্ট্রাইকার। তবে আমিও তৈরি।”

অনেক বছর পর আই লিগে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে থাকলেও মহাগুরুত্বপূর্ণ কলকাতা ডার্বির আগে চোট-আঘাত সমস্যায় জর্জরিত মোহনবাগান ডিফেন্স। শৌভিক ঘোষ চোট পেয়ে এই মরসুমের মতোই ছিটকে গিয়েছেন। প্রীতম কোটাল অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে। চোটে নেই ধনচন্দ্র সিংহও। শেহনাজ সিংহ আবার আগের ডেম্পো ম্যাচেই লাল কার্ড দেখেছেন। আর আনোয়ার আলি দলে ফিরেছেন সদ্য চোট থেকে সেরে উঠে। বহু দিন ম্যাচের মধ্যে নেই। স্বভাবতই রক্ষণ নিয়ে কোচের চিন্তা থাকাটাই স্বাভাবিক।

আর তার জন্য কি বাগান কোচ চার দিন আগেই এল ক্লাসিকোয় জয়ী বার্সা কোচের স্ট্র‌্যাটেজি দেখে সম্ভবত আশায় বুক বাঁধছেন। রবিবারই লুই এনরিকে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞ বাস্কেকে বসিয়ে ম্যাথু জেরেমিকে খেলিয়েছিলেন। বাস্কে যেখানে বার্সা জার্সিতে দু’শোর বেশি ম্যাচ খেলেছেন, সেখানে ম্যাথুর খেলা ম্যাচের সংখ্যা মাত্র কুড়ি। কিন্তু পিকেরা তাঁকে সঙ্গে নিয়েই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, গ্যারেথ বেল, করিম বেঞ্জিমাদের আটকে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ম্যাচের প্রথম গোলটা ওভারল্যাপে যাওয়া ম্যাথুরই। সেটাকেই উদাহরণ করে কি আনোয়ার, সুখেনদের উদ্বুদ্ধ করেছেন সঞ্জয়? বলেছেন কি, ভাল খেলার ইচ্ছে আর জেদ থাকলে টিমে অভিজ্ঞ বা তারকা ফুটবলারদের অনুপস্থিতি বেশি গুরুত্ব পায় না। প্র‌্যাকটিস সেরে বাড়ি ফেরার সময় বেলোও তাত্‌পর্যের মন্তব্য করে গেলেন, “এল ক্লাসিকো, বার্সেলোনা অনেক বড় ব্যাপার। তবে আমরাও টিমগেম খেলছি। তাই কোনও বিশেষ ম্যাচে কোনও বিশেষ ফুটবলার না থাকলে তেমন সমস্যা হবে না। এই অবস্থাতেও র‌্যান্টি-ডুডুকে আটকানো অসম্ভব নয়।”

রক্ষণের শেষ প্রহরী দেবজিত্‌ মজুমদারের ফর্মও হয়তো কিছুটা স্বস্তিতে রাখছে কোচ সঞ্জয়কে। চোট পেয়ে বাগানের এক নম্বর গোলকিপার শিল্টন পাল ছিটকে যাওয়ার পর থেকে ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্স করছেন দেবজিত্‌। এ দিন প্র‌্যাকটিসের পর বলছিলেন, “সব ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আর ডার্বি তো সব সময়ই আলাদা। শিল্টনদা আমাকে গাইড করছেন।”

এ দিন মোহনবাগান প্র‌্যাকটিসে গিয়ে দেখা গেল, মাঠের এক কোণে ফুটবলারদের ক্লাস নিচ্ছেন সঞ্জয়। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বোর্ডে ছক কেটে স্ট্র‌্যাটেজি বোঝালেন তিনি। কী ভাবে র‌্যান্টি-ডুডুকে আটকাতে হবে, কী করে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ভাঙতে হবে, এলকোর পাসিং ফুটবলের পাল্টা ছোট-ছোট পাসে কী ভাবে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠতে হবে--- ফুটবলারদের ধরে ধরে বোঝাতে দেখা গেল চেতলার বাসিন্দাকে। তবে ডার্বির আগের দিন বল নিয়ে হালকা অনুশীলনই করেছেন সনিরা। বরং গার্সিয়ার তত্ত্বাবধানে ফিটনেস ট্রেনিং করার পর ফুটবলারদের নিয়ে সেট পিসে জোর দিলেন কোচ সঞ্জয়।

সব মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামার আগে বাগান শিবিরে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া স্পষ্ট। পিয়ের বোয়া যেমন বললেন, “র‌্যান্টি গোল পেয়ে চললেও ইস্টবেঙ্গলের খেলায় এখনও বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে।” সনি অবশ্য সতর্ক করে দিলেন, “ডার্বি মানেই কঠিন ম্যাচ। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। তবে গোল করে দলকে জেতাতে পারলে সেটা অনেক তৃপ্তি দেবে আমাকে।”

সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এ দিন সকালে ক্লাব তাঁবুতে হাজির হন ক্লাব প্রেসিডেন্ট টুটু বসু। তিনি টাকা দেওয়ায় ডার্বির আগে ফুটবলাররা বেতন পেয়েছেন। আর এ দিন ফুটবলারদের ড্রেসিংরুমে গিয়ে টুটুবাবু তাঁদের দিলেন ভোকাল টনিক। টিম বাগানকে বলেছেন, “ডার্বি নিয়ে একেবারে চাপ নিও না। আই লিগের বাকি ম্যাচগুলোর মতোই এই ম্যাচকে উপভোগ করো। তবে শেহনাজের মতো অকারণে মাথা গরম করে কেউ কার্ড দেখো না।”

উল্টো দিকে ডাচ কোচ। বাগান কোচকে দেখে মনে হল, এটা যেন আরও তাতাচ্ছে তাঁকে। সঞ্জয় তাই একটা অদৃশ্য প্ল্যাকার্ড নিয়ে মাঠে নামতে চাইছেন আজ—‘বঙ্গসন্তান কোচেরাও পারে। সুভাষ-সুব্রত-মনোরঞ্জনের পর তারা হারিয়ে যায়নি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE