Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
বাংলা-রেল প্রথম দিনে পড়ল ১৪ উইকেট

আতঙ্কের পিচে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলা

পাহাড়ের আবহাওয়ার মতোই খামখেয়ালি। সকালের খেলার আবহ দেখে বোঝার উপায় ছিল না পরের দিকে ম্যাচের আবহাওয়া হঠাৎ এমন পাল্টে যাবে! তাণ্ডব চালাবেন পেস বোলাররা।

ব্যাটে-বলে সফল দিন্দা।

ব্যাটে-বলে সফল দিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

পাহাড়ের আবহাওয়ার মতোই খামখেয়ালি। সকালের খেলার আবহ দেখে বোঝার উপায় ছিল না পরের দিকে ম্যাচের আবহাওয়া হঠাৎ এমন পাল্টে যাবে! তাণ্ডব চালাবেন পেস বোলাররা। বিকেলে খেলা শেষে দেখা গেল আসলে প্রথম দিনটা পেসারদেরই। সারা দিনে ১৪-র মধ্যে ১৩টা উইকেটই অনুরীত সিংহ, অশোক দিন্দাদের মতো দু’দলের পেস বোলারদের শিকার।

বাংলাকে ২০৫-এ শেষ করে দেওয়ার পর রেলওয়েজ ৩৭-৪-এ রীতিমতো কাঁপছে। অনুরীতের পাল্টা হুঙ্কার ছাড়ছেন মেদিনীপুর-জুটি অশোক দিন্দা, অমিত কুইলা। ধর্মশালার এমন পিচে তাই প্রথম দিনই বাংলা শিবিরে ছ’পয়েন্টের স্বপ্ন রঞ্জি ট্রফির এই গ্রুপ ম্যাচ থেকে।

দিনের পঞ্চম ওভারে অভিমন্যু ঈশ্বরনের কট বিহাইন্ডটা যেন ছিল নিছক ট্রেলার। বাংলা পুরো ছবিটা দেখা শুরু করল তার ১৫ ওভার পর থেকে। যখন স্কোর বোর্ড কয়েকটা ডেলিভারির মধ্যে ৬২-১ থেকে হয়ে পড়ে ৬২-৪। মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহারা দু’জনে মিলে দশ বলও টিকতে পারলেন না ক্রিজে। রানের খাতা খোলা তো দূরের কথা। ঘাস, আর্দ্রতা, বাউন্স, ডাবল পেস— বাইশ গজে যখন এ সবই একসঙ্গে, তখন তো পেসারদের এমন তাণ্ডব তো স্বাভাবিক। বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি এ দিন সন্ধেয় ধর্মশালা থেকে বললেন, ‘‘এমন উইকেটে তো পেসাররা মস্তানি করবেই। আমাদের পেসাররাও তো করছে। দোটা ম্যাচেই মনে হচ্ছে পেস বোলিংই দাপট দেখাবে।’’

বাংলার ব্যাটিংয়ের যখন এই বেহাল অবস্থা, তখন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইডেনে বলছিলেন, ‘‘ভাল দিনের পর খারাপ দিন আসতেই পারে। সেটা সামলাতে হবে আমাদের ছেলেদের। দেখা যাক কী হয়।’’ রেলের ধাক্কায় বেসামাল বাংলার প্রথম ইনিংসকে বেশ কিছুটা সামলান সৌরভেরই অন্যতম প্রিয় ব্যাটসম্যান সুদীপ চট্টোপাধ্যায়।

ব্যাটসম্যানদের এই আতঙ্কের উইকেটে মাত্র ১৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা সুদীপ ফোনে জানালেন সেই সময়টার কথা, যখন তাঁর চোখের সামনে অন্য প্রান্তে পরপর আউট হয়ে যাচ্ছিলেন সায়নশেখর মন্ডল, মনোজ তিওয়ারি ও ঋদ্ধিমান সাহা। বললেন, ‘‘পরপর তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। যখন অগ্নিভ ক্রিজে এল, তখন ওকে বললাম, রান-টান করা বাদ দে। এখন আমাদের উইকেটে পড়ে থাকার লড়াই। পড়ে থাকলে রান আসবেই। ধীরে-সুস্থে শট খেল।’’ এই মন্ত্র নিয়ে সুদীপ অনেকটা এগোলেও অগ্নিভ ২৭-এর বেশি পাননি।

কিন্তু আদ্যন্ত পেসার-বন্ধু পিচ দেখে বোধহয় ড্রেসিংরুমেই ফুটছিলেন অশোক দিন্দা। বাংলার এক নম্বর পেসারের সেই উত্তেজনার প্রভাবটা এ দিন প্রথমে পড়ে তাঁর ব্যাটে। যখন ইনিংসের শেষের দিকে পাঁচটা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাত্র ২৬ বলে অতি মূল্যবান ৩০ রান করে বিপক্ষ পেসারদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন দিন্দা। তার পর বল হাতে তুলে নেন চারটের মধ্যে দু’টো।

বাংলার দুশোর গণ্ডি পেরনো এই উইকেটে ভাল রান বলেই মনে করছেন মনোজ। বললেন, ‘‘এ যা উইকেট, তাতে আমরা প্রথমে বল করলে ওদের হয়তো একশোর মধ্যেই শেষ করে দিতাম। ওরা কিন্তু তেমন ভাল বল করেনি। অনেক মারার বলও দিয়েছে।’’ দিনের শেষ ঘণ্টায় দিন্দা, কুইলা ও সায়ন ঘোষের চার উইকেট ভাগাভাগি করে তোলা দেখেই বোধহয় বাংলা অধিনায়ক এতটা আত্মবিশ্বাসী। বললেন, ‘‘ওদের কাল যত দ্রুত পারি অল আউট করব। তার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও কিছু রান চাপাতে হবে ঘাড়ে।’’

কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও তো এই একই আতঙ্কের উইকেটে ব্যাট করতে হবে। সুদীপ সে ব্যাপারে বললেন, ‘‘দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার পক্ষে হয়তো কিছুটা ভাল হয়ে যাবে এই উইকেট। তবে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাবে কাল প্রথম সেশনে উইকেট কেমন ব্যবহার করে, তার উপর।’’

এ দিন সকালেই জানা যায় প্রজ্ঞান ওঝার ‘স্টিফ নেক’। তাই দলের সেরা স্পিনারকে এই ম্যাচে পাওয়া যাবে না। তাই আমির গনিকে নেওয়া হয় প্রথম এগারোয়। আর ঋদ্ধিমান সাহাকে খেলাতে শেষমেশ শ্রীবৎস গোস্বামীকেই বসতে হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলা ২০৫ (সুদীপ ৮৫, দিন্দা ৩০, অনুরিত সিংহ ৪-৬৬)

রেলওয়েজ ৩৭-৪ (দিন্দা ২-১৭)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ashoke dinda Bengal Ranji Trophy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE