জুটি: হাফসেঞ্চুরির পরে ব্যাট তুলে অভিবাদন রামনের। পাশে শ্রীবৎস (বাঁ দিকে)। রবিবার কটকে। পিটিআই
চতুর্থ দিনের শেষে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অরুণ লাল ফোনে কাকে একটা বলছিলেন, ‘‘আমরা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছি। ইডেনে এসো কর্নাটকের বিরুদ্ধে আমাদের সমর্থন করতে।’’
ম্যাচের এখনও এক দিন বাকি। কিন্তু বলে দেওয়াই যায়, শেষ চারে বাংলার যোগ্যতা অর্জন করা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও পর্যন্ত সাত উইকেট হারিয়ে বাংলার স্কোর ৩৬১। ওড়িশার চেয়ে এখনই ৪৪৩ রানে এগিয়ে। সে ক্ষেত্রে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে শেষ চারের যোগ্যতা অর্জন করবে অভিমন্যু ঈশ্বরনের দল। অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে ইডেনে ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মণীশ পাণ্ডে, কে এল রাহুলদের বিরুদ্ধে শেষ চারের লড়াইয়ে নামবে তারা। অন্য কোয়ার্টার ফাইনালে জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ১৪ রানে এগিয়ে গিয়েছে কর্নাটক। দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করতে নেমে চার উইকেট হারিয়ে কর্নাটকের রান ২৪৫। সোমবারই শেষ দিন।
রবিবার ড্রিমস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকালের এক ঘণ্টায় বাংলা শিবিরে তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। দলের সব চেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মনোজ তিওয়ারি (৬) ও অনুষ্টুপ মজুমদার (১০) দ্রুত ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। ১১৫ রানে চার উইকেট হারায় বাংলা। এই ছন্দেই উইকেটের পতন ঘটলে চতুর্থ দিনের শেষে ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে যেতে পারত। কিন্তু অভিষেক রামন ও শ্রীবৎস গোস্বামীর ধৈর্যের বিরুদ্ধে হার মানতে হয় বসন্ত মোহান্তি, সূর্যকান্ত প্রধানদের। সেমিফাইনালের আগে ১৮৯ বলে ৬৭ রান করে যান রামন। ৭৮ রান শ্রীবৎসের। বাংলা শিবিরে স্বস্তি, সেমিফাইনালের আগে ছন্দে ফিরলেন দলের তিন নম্বর ব্যাটসম্যান। রামন রান পেলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাঁকে ব্যাট করতে দেখা যায়নি। আগামী ম্যাচে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়কে ফেরানোর সম্ভাবনা ছিল বাংলা শিবিরে। কিন্তু রামনের রান পাওয়ার পরে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় কি না, সেটাই দেখার।
অর্ণব নন্দী ও শাহবাজ আহমেদও ম্যাচ প্র্যাক্টিস করে নেন দিনের শেষে। ৪৫ করে যান অর্ণব। শাহবাজ অপরাজিত ৫২ রানে। স্বস্তির মধ্যেই উদ্বেগ, বাঁ-পায়ের পেশিতে হাল্কা চোট রয়েছে মনোজ তিওয়ারির। পঞ্চম দিন তাঁকে ফিল্ডিং করানো হবে না। শেষ চারের ম্যাচের আগে যতটা সম্ভব বিশ্রাম দেওয়া হবে তাঁকে।
দলের পেসারদেরও বেশি চাপ দিতে চান না কোচ ও অধিনায়ক। অরুণ বলছিলেন, ‘‘আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। কাল যতটা সম্ভব ব্যাট করব। বোলিং পেলে দায়িত্ব নিতে হবে শাহবাজ, অর্ণবদের। কর্নাটকের বিরুদ্ধে নামার আগে পার্ট-টাইম বোলারদের দেখে নিতে চাই। অনুষ্টুপ বল করে। রামন, কৌশিকও কাজ চালিয়ে দিতে পারে।’’
এ দিকে ওড়িশাকে দেখে মনেই হয়নি তাদের খেলার কোনও ইচ্ছে আছে। বিপক্ষ মিডিয়াম পেসার প্রীত সিংহ চৌহন সব চেয়ে হতাশ করেছেন। দিনে চারটি বিমার (বাউন্স না করিয়ে ব্যাটসম্যানের কোমরের উপরে বল করা) করে আম্পায়ারদের বিভ্রান্ত করেছেন। একটি এমন বিমার দিয়েছেন যে, উইকেটকিপার রাজেশ ধুপারের মাথার উপর তা দিয়ে চলে যায়। আম্পায়ার বুঝতে পারছিলেন না, তিনি নো-বল ইঙ্গিত করবেন না ডেড বল। আরও একটি বল ব্যাটসম্যানের মাথার উপর দিয়ে সোজা কিপারের দস্তানায় গিয়ে পড়ে প্রীতের। সমর্থকেরা তাঁর নামকরণ করেন ‘বিমার বিশেষজ্ঞ’।
ম্যাচে যদিও তিনটি উইকেট পেয়েছেন প্রীত। তাঁর বাবা গুরজিৎ সিংহ চৌহন ওড়িশার হয়ে খেলেছেন। ছেলের বোলিং দেখে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। লাঞ্চের মধ্যেই উপলব্ধি করতে পারেন, তাঁর রাজ্যের রঞ্জি অভিযান হয়তো এই ম্যাচেই শেষ।
সেমিফাইনালের আগে যদিও দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে থাকা যাচ্ছে না। কর্নাটকের বোলিং আক্রমণ দেশের অন্যতম সেরা। পেস বিভাগে রয়েছেন নাইট পেসার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, অভিমন্যু মিঠুন, রণিত মোরে। স্পিন বিভাগ সামলাবেন কৃষ্ণাপ্পা গৌতম, জগদীশ সুচিতের মতো তারকা। তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলার উপরের সারির ব্যাটসম্যানেরা ব্যর্থ হলে ফের অনুষ্টুপদের পক্ষে দলকে ম্যাচে ফেরানো কঠিন হয়ে যাবে। কোচ যদিও আত্মবিশ্বাসী। বললেন, ‘‘সেমিফাইনাল অন্য রকম হবে। আমি নিশ্চিত, কর্নাটকের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যাটসম্যানেরা বড় রান পাবে। বাংলার মুখ উজ্জ্বল করার এটাই সুযোগ। প্রত্যেকে তা উপলব্ধি করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy