Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঈশ্বরনের সেঞ্চুরিতেও বাংলার রঞ্জি-বিদায় আসন্ন

কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে এখন দায়িত্ব নিতে হয়েছে দলের দুই সেরা ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান অভিমন্যু ঈশ্বরন ও মনোজকে।

অভিনন্দন: মনোজকে উৎসাহ যুবরাজের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

অভিনন্দন: মনোজকে উৎসাহ যুবরাজের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

কী ভাবে ম্যাচকে কঠিন করে তোলা যায়, তা বাংলাই দেখিয়ে দিল। যা তারা ফের দেখাল বুধবার, সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে চলতি ম্যাচের তৃতীয় দিন। যুবরাজ সিংহদের দলের শেষ চার উইকেট ফেলতে অশোক ডিন্ডারা তাঁদের দিলেন ২০১ রান! যার জন্য মনোজদের হাত থেকে ছ-পয়েন্ট তো দূরের কথা, তিন পয়েন্টও বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে এখন দায়িত্ব নিতে হয়েছে দলের দুই সেরা ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান অভিমন্যু ঈশ্বরন ও মনোজকে। প্রথম জনের সেঞ্চুরি ও তাঁদের ১৮০ রানের পার্টনারশিপ না হলে বাংলার যা দশা হত, তা ভেবে শিউরে উঠতে পারেন বাংলার যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমী। তিন ঘণ্টা ধরে মনোজ-অভিমন্যুরা ব্যাট হাতে মান বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও দিনের শেষে দলের মেন্টর অরুণ লালকে দেখে মনে হল, হাল ছেড়ে দিয়ে বসে রয়েছেন তিনি। বলে গেলেন, ‘‘আর কোনও আশাই নেই।’’

এর আগেও এমন হয়েছে একাধিকবার। তামিলনাড়ু ও দিল্লির বিরুদ্ধে নিজেরাই ম্যাচ কঠিন করে নেয় বাংলা। কিন্তু দুই ম্যাচই জেতায় মনোজরা বেঁচে যান। এই ম্যাচে ভুল মানে যে তা শেষ ভুল। তাই এ বার আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও উপায় নেই। সে জন্যই বোধহয় এত হতাশ অরুণ। জীবনের সেরা ইনিংস খেলেও মনোজ-অভিমন্যুরা বাংলাকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করে আনতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না।

দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান আনমোলপ্রীত সিংহ (১২৬) ও বিনয় চৌধরি (১৪) দিনের শুরুতেই ফিরে যাওয়ার পরে পঞ্জাবের শেষ জুটিই বাংলার হাত থেকে ক্রমশ ম্যাচ বার করে নিয়ে গেলেন। ১২১ বলে ৮৪ রান যোগ করলেন মনপ্রীত গোনি (৬৭ বলে অপরাজিত ৬৯) ও সিদ্ধার্থ কল (৯)। মনোজদের ১৮৭ রানের জবাবে ৪৪৭ রানের পাহাড় গড়ে পঞ্জাব। যা বাংলার শেষ আটে ওঠার আশায় বুলডোজার চালিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

শেষ জুটির বিরুদ্ধে না ইয়র্কার দিলেন বঙ্গ পেসাররা, না বেশি বাউন্সার। স্পিনার আমির গনির হাতে স্পিন, বৈচিত্র প্রায় উধাও। তাঁর প্রধান অস্ত্র আর্মার দিতে দেখা গেল না প্রদীপ্ত প্রামাণিককে। যা বাইরে স্পিন না করে গতির সঙ্গে ডান হাতি ব্যাটসম্যানের ভেতরের দিকে আসে।

ফিল্ডিংয়ের অবস্থা আরও করুণ। বাউন্ডারি লাইনে পরপর গোনির ক্যাচ ফস্কান সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়। দিনের শেষে হতাশ অরুণ লাল বলেন, ‘‘লিগ পর্ব থেকে শেষ আটে যাওয়ার মতো খেলতেই পারিনি আমরা।’’ অভিমন্যু অপরাজিত ১০০ রানে। ৯০ রানে ব্যাট করছেন মনোজ। তবু ৪২ রানে পিছিয়ে বাংলা। দিনের শেষে স্কোর ২১৮-২। বৃহস্পতিবার শেষ দিনে দ্রুত রান তুলে পঞ্জাবকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে অল আউট করা মরীচিকা মনে হচ্ছে। তার উপর অরুণ বলে দিলেন, ‘‘কাল দিনের শেষ বল পর্যন্ত ব্যাট করতে চাই।’’ তার মানে বাংলার এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার উদ্দেশ্য স্পষ্ট। অর্থাৎ বাংলার রঞ্জি-বিদায় এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

স্কোরকার্ড
বাংলা ১৮৭ ও ২১৮-২ (৫৮ ওভার)
পঞ্জাব ৪৪৭ (১৩১.৩ ওভার)

পঞ্জাব (আগের দিনের ৩৫৭-৭ এর পর প্রথম ইনিংস)
আনমোলপ্রীত ক অনুষ্টুপ বো ডিন্ডা ১২৬
বিনয় বো মুকেশ ১৪
মনপ্রীত গোনি ন. আ ৬৯
সিদ্ধার্থ কল ক শ্রীবৎস বো প্রদীপ্ত ৯
অতিরিক্ত ২৯
মোট ৪৪৭
পতন: ৮-৩৬১ (বিনয়, ১১০.৫), ৯-৩৬৩ (আনমোলপ্রীত, ১১১.৪), ১০-৪৪৭ (সিদ্ধার্থ, ১৩১.৩)।
বোলিং: অশোক ডিন্ডা ২৬-৪-৮৩-১, মুকেশ কুমার ৩১-৫-১১৪-৫, প্রদীপ্ত প্রামাণিক ৪৩.৩-৫-১০৮-৪, আমির গনি ২০-২-৬৯-০, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ৮-১-২৪-০, অনুষ্টুপ মজুমদার ৩-১-২৮-০।

বাংলা (দ্বিতীয় ইনিংস)
অভিষেক রামন ক খেরা বো গোনি ৭
অভিমন্যু ঈশ্বরন ব্যাটিং ১০০
সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বো কল ১৮
মনোজ তিওয়ারি ব্যাটিং ৯০
অতিরিক্ত ৩
মোট ২১৮-২
পতন: ১-৮ (রামন, ৪.৫), ২-৩৮ (সুদীপ, ১৪.১)।
বোলিং: মনপ্রীত গোনি ১১-১-২৮-১, বিনয় চৌধরি ১৯-০-৬৯-০, সিদ্ধার্থ কল ৯-০-৩৮-১, মায়াঙ্ক মার্কণ্ডে ১৩-১-৬১-০, যুবরাজ সিংহ ৪-০-১৩-০, গুরকীরত সিংহ ২-০-৯-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE