সায়নশেখর ১৩৫।
অচেনা পরিবেশ ও উইকেটে গিয়ে পড়লে কী ভাবে ক্রিকেটের বেসিক ও মানসিক শক্তি দিয়ে অবস্থা সামলানো যায় ও সফল হওয়া যায়, সেই মন্ত্র দিয়েছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। রঞ্জি ট্রফি শুরুর আগে বাংলার প্রস্তুতিতে এসে। সেই মন্ত্রই এখন বাংলার তরুণ ক্রিকেটারদের মূলমন্ত্র।
বৃহস্পতিবার যখন গৌতম গম্ভীররা চেনা ইডেনে হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখন হিমাচলের অচেনা বিলাসপুরের পরিবেশ ও ঘাসে ভরা উইকেটে পড়েও পঞ্জাবের বোলারদের রীতিমতো শাসন করে গেল বঙ্গ ক্রিকেটের নতুন প্রজন্ম।
জয়পুরে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন অভিমন্যু ঈশ্বরন। এখানে দেখালেন সায়নশেখর মণ্ডল। অগ্নিভ পান, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়রা ভরসা দিয়েই চলেছেন। ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি ক্যাপ্টেনের মতোই চলছেন।
এই মাঠেই আগের ম্যাচে প্রথম দিন ধস নেমেছিল তামিলনাড়ুর ইনিংসে। এ দিন টস হেরে বাংলাকে যখন ব্যাট করতে পাঠান যুবরাজ সিংহ, তখনও সেই আতঙ্ক ছিল। কিন্তু লক্ষ্মণ-মন্ত্রে দীক্ষিত বাংলার তরুণ ব্রিগেড রীতিমতো দাপট দেখালেন আইপিএল খেলে আসা সন্দীপ শর্মা, মনপ্রীত গোনি, সিদ্ধার্থ কলদের বিরুদ্ধে। অভিমন্যু ঈশ্বরন ব্যর্থ হলে কী হবে, সামলে নিলেন অন্য ওপেনার সায়ন (১৩৫), অগ্নিভ পান (৭০), সুদীপ চট্টোপাধ্যায়রা (৫১)। তাঁদের পরিশ্রমকে বাড়তি মাত্রা দিলেন মনোজ তিওয়ারি (৪৫)। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেল ও লক্ষ্মণের তালিমে গড়া বাংলা যুবরাজদের এখন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। দিনের শেষে বাংলা ৩৩২-৫। যা মনে করা হচ্ছে এই উইকেটে বড় রানই।
সাতাশের সায়ন জয়পুরে আগের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ছিলেন সাপোর্টিং রোলে। এ বার তিনি প্রধান ভূমিকায়। সেই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির পর এ বার এই ম্যাচে সেঞ্চুরি তাঁর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির পর সন্ধ্যায় বিলাসপুর থেকে ফোনে সায়ন বললেন, ‘‘ভিভিএস লক্ষ্মণ আমাদের ব্যাটিংয়ের টেকনিকের থেকে মানসিক দিকটায় বেশি জোর দিতে বলেছিলেন। ওঁর টিপসই কাজে লাগাতে চেষ্টা করছি। আত্মবিশ্বাসটাও আগের চেয়ে বেড়েছে এখন। আমাদের ব্যাটিংয়ে লক্ষ্মণ স্যারের অবদান অনেকটাই রয়েছে।’’
আগের ম্যাচে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির পর অভিমন্যু ঈশ্বরন ও অগ্নিভ পানও যা বলেছিলেন, সেই একই সুর বর্ধমানের সায়নের গলাতেও। এ দিন দু’শো বলে ১৩৫-এর ইনিংস খেলেন সায়ন। যাতে বাইশটা বাউন্ডারি। বলছিলেন, ‘‘উইকেটে শুরুতে বাউন্স ও গতি সবই ছিল। কিন্তু লাঞ্চের পর দুটোই কমতে থাকে। প্রথম সেশনটা সামলানোই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা সামলে নেওয়ার পর আর অসুবিধা হয়নি। আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে যায়।’’
পঞ্জাবের বোলিং নিয়ে সায়ন বলেন, ‘‘বাউন্স আর পেস দুটোই উইকেটে থাকায় ওরা যথেষ্ট আগ্রাসী বোলিংই করছিল। উইকেট বা কন্ডিশনের কথা মাথা থেকে বার করে দিই। ওদের বোলিংয়ের মেরিট অনুযায়ী ব্যাটিং করি। ব্যাট করার সময় মেন্টাল টাফনেস বজায় রাখার টিপস তো আগেই পেয়েছি লক্ষ্মণ স্যারের কাছ থেকে।’’
ক্রিজে এখন পঙ্কজ শাউ আর প্রজ্ঞান ওঝা। ব্যাট করা বাকি আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া শ্রীবৎস গোস্বামীরও। কোচ সাইরাজ বাহুতুলের বিশ্বাস, ‘‘এখনও একশো তুলতে পারি আমরা। দিনের শেষ দিকে আমাদের পরপর দুটো উইকেট না পড়লেই ভাল হত। তবে এখন যত সম্ভব রান তোলাই আমাদের কাজ। তার পর বোলাররা বুঝে নেবে।’’
সবুজ উইকেট ও ঠান্ডা আবহাওয়া দেখে তিন পেসারে নেমেছে বাংলা। অশোক দিন্দাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ফার্স্ট ক্লাস ক্যাপ দেওয়া হয়েছে দুই মিডিয়াম পেসার অয়ন ভট্টাচার্য ও অমিত কুইল্যার হাতে। যুবরাজদের বোলিংকে শাসনের পর এ বার ব্যাটসম্যানদেরও কাবু করতে পারলে এই ম্যাচ থেকে খারাপ লাভ হবে না বলেই মনে করেন বাংলার কোচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা (প্রথম ইনিংস) ২৩২-৫
(সায়ন ১৩৫, অগ্নিভ ৭০, সুদীপ ৫১, মনোজ ৪৫, সন্দীপ ২-৭০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy