লর্ড অব লর্ডস যখন সুলতান অব সুইংয়ের সামনে। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তর কলকাতার স্কুলে এক টক শো-র মাঝে দিলীপ বেঙ্গসরকর-ওয়াসিম আক্রম। সঙ্গে আক্রম পত্নী শানিয়েরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
তিনি বলিউডের মেগাস্টার। ভারতে তো বটেই, পাকিস্তানেও নাকি তাঁর ‘দিওয়ানা’ ঘরে ঘরে। অথচ তাঁর মতো সহজ-সরল মানুষ নাকি বড় একটা পাওয়া যায় না।
তিনি শাহরুখ খান। আর তাঁর সম্পর্কে এই মন্তব্য যাঁর, তিনি ওয়াসিম আক্রম।
ক্রিস গেইলকে বল করার চেয়ে শাহরুখের সঙ্গে মিশে যাওয়াটা অনেক সোজা, বলছেন ‘সুলতান অব সুইং’।
গত কয়েক বছর নাইট পরিবারের সদস্য হিসেবে থেকে এমনই উপলব্ধি তাঁর। মঙ্গলবার এক ক্রিকেট আড্ডায় যখন বলছিলেন তাঁর মনের কথা, তাঁর ক্রিকেটের কথা, কেকেআরের কথা, তখন পাক স্পিডস্টারের হৃদয় থেকে বেরিয়ে এল শাহরুখকে নিয়ে তাঁর এই ধারণা।
আক্রম বললেন, ‘‘শাহরুখ ভাইয়ের মতো এত সহজ-সরল মানুষ খুব কম দেখেছি। কেকেআর, কলকাতাকে খুব ভালবাসে। মজা করতে খুব ভালবাসে। মাঠে নেমে গেইলকে মোকাবিলা করার চেয়ে শাহরুখ ভাইয়ের সঙ্গে মিশতে পারাটা বোধহয় অনেক সহজ। শুধু ভারতে নয়, পাকিস্তানেও উনি মেগাস্টার। প্রত্যেক ঘরে শাহরুখ খানের ভক্ত আছে আমাদের দেশে। ওঁর সঙ্গে মিশে কিন্তু তা মনে হয় না।’’
পাকিস্তানকে ‘আমাদের দেশ’ বললে কী হবে, এ শহরে থাকতে থাকতে কলকাতারই বাবু হয়ে উঠেছেন পাক স্পিডস্টার। সর্ষে-মাছ এখন তাঁর অন্যতম প্রিয় খাবার। বাংলা গানও শুনছেন আজকাল। বুঝতে পারছেন বাংলা কথাও।
নিজেই বললেন, ‘‘কলকাতার মানুষের কাছ থেকে এত ভালবাসা পেয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। এখানকার মানুষ খুব ‘প্যাশনেট’। তাই এখানে এসে মনে হয় নিজের শহরেই এসে গিয়েছি। সর্ষে-মাছের ভক্ত আমি। একটা বাংলা গানও ইদানীং শুনছি। ওই যে ‘গুন্ডে’ ছবিতে বাপি লাহিড়ীর ‘এনট্রিয়া’ গানটা বাংলাতেও আছে না? ওটাই। বাংলাও কিছু কিছু বুঝতে পারি।’’ তাঁর নমুনাও দিলেন অবশ্য।
মঙ্গলবার উত্তর কলকাতার দিল্লি পাবলিক স্কুলে ক্রিকেট টক শোয়ে বসে যখন কথাগুলো বলছেন আক্রম, তখন তাঁর পাশে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর। যিনি এ দিন আইপিএলে খেলার সুযোগ না পাওয়ার আফসোস করে বলেন, ‘‘আমরা একবার চার মাসের বিদেশ সফরের পর বোর্ড থেকে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। তাও ম্যানেজারের রিপোর্ট ‘ওকে’ হওয়ার পর। আর এখনকার ক্রিকেটাররা এই দেড় মাসের টুর্নামেন্টেই কত টাকা পায়! তা ছাড়া কী সব শট! আমরা কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি এ সব শটের কথা।’’
আক্রম ও বেঙ্গসরকর যেখানে একই মঞ্চে, সেখানে জাভেদ মিয়াঁদাদ ‘কমন ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতেই পারেন। তাঁকে নিয়েই দু’জনের মধ্যে হল প্রচুর কথা। আক্রমের স্মৃতি রোমন্থন, ‘‘জাভেদ ভাইকে কেন সব সময় থার্ড ম্যানে পাঠিয়ে রাখত, ইমরানকে তা জিজ্ঞেস করেছিলাম এক দিন। বলল, ও প্রতি দু’মিনিট অন্তর সাতশো করে আইডিয়া নিয়ে আসত আর বকবক করত। তার মধ্যে হয়তো একটা কাজে লাগত।’’ শারজায় চেতন শর্মার শেষ বলে জাভেদের ছয়ের ‘আফটারশক’ নিয়ে বেঙ্গসরকরের মন্তব্য, ‘‘সে দিন ড্রেসিংরুমে ফিরে সবাই খুব মনমরা হয়ে গিয়েছিলাম। তবে তার আগে পর্যন্ত কিন্তু আমরা শারজায় কোনও ম্যাচ হারিনি। সেই ম্যাচের পর আর আমরা ওখানে ওদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।’’ তবে ’৮৭-তে শারজায় আক্রম যে শেষ ওভারে বেঙ্গসরকরের সেঞ্চুরি আটকে দিয়েছিলেন, তা ভোলেননি দু’জনের কেউই।
কোচ হিসেবে মাঠের বাইরে বসে থাকাটা যে বেশ কঠিন, তা আক্রমের আফসোসেই পরিষ্কার। যখন বলছিলেন, ‘‘খুব কঠিন। বিশেষ করে যখন মরণ-বাঁচন পরিস্থিতিতে পড়ে আমাদের পেসাররা, তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। হাত নিশপিশ করে যেন।’’
উঠতি পেসারদের টিপস দেওয়া ও তাঁদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করাটা তাঁর বেশ পছন্দের কাজ। বললেন, ‘‘অনেকেই আসে আমার কাছে। সৌরভ তখন ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন। জাহির খানকে নিয়ে এসেছিল আমার কাছে। এই তো গত কাল ম্যাচের পর ট্রেন্ট বোল্ট বেশ কিছু প্রশ্ন নিয়ে এসেছিল। উপমহাদেশের ছেলেদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে বেশি ভাল লাগে। ওরা সবাই আমার ভাইয়ের মতো।’’
এ রকম একটা সময়ে কোনও ক্রিকেট আড্ডায় ভারতীয় কোচের প্রসঙ্গ উঠবে না, তা হয়? উঠলও। ভারতের যে আর বিদেশি কোচের প্রয়োজন নেই, সেই মতও দিলেন দু’জনেই। তাঁদের যুক্তি, দেশীয় কোচ ক্রিকেটারদের অনেক ভাল বোঝেন, চেনেন, তাদের বোঝাতে পারেন। যেটা বিদেশিদের পক্ষে সোজা নয়। ভারতে কোচ হওয়ার মতো লোকও রয়েছে। রবি শাস্ত্রী খারাপ বাছাই হবে না বলে মনে করেন তাঁরা।
কয়েক কিলোমিটার দূরেই তখন বসে বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। এই বার্তা পৌঁছল তাঁর কাছে?
মঙ্গলবার ছিল মুম্বইবাসী তরুণী পল্লবীর প্রথম কলকাতা সফর।
দুপুরে বিমানবন্দরে নেমে প্রথমেই তিনি ছোটেন ইডেন গার্ডেন্সে। এর আগে একাধিক বার লর্ডস দেখেছেন
কিন্তু যে মাঠে তাঁর বাবার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি সেটাই দেখা হয়নি। এ শহরেই যে আসেননি। ছত্রিশ বছর আগের ইডেনের
চেহারাই ছিল আলাদা। তবু দিলীপ বেঙ্গসরকর কন্যা সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র সঙ্গে উইকেটের ধারে দাঁড়িয়ে ফিরে যেতে চাইলেন
তাঁর জন্মের অনেক আগের এক দুপুরে। যে দিন কালীচরণের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁর বাবা ১৫৭ নট আউট করেছিলেন। ইডেন থেকে পল্লবী সোজা চলে যান গ্র্যান্ড হোটেলে। এখানেই তো তাঁর মা ও বাবার প্রথম আলাপ হয়েছিল। ছবি: উৎপল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy