Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বোপান্না না খেলতে চাইলে পড়তে পারেন শাস্তির মুখে

সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশনের কর্তারা এ ব্যাপারে কোনও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে চান না। তাঁরা ভাল মতোই জানেন যে, বোপান্না একেবারেই লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী নন।

বিতর্কে: লিয়েন্ডারের সঙ্গে জুটি বাঁধা নিয়ে আপত্তি বোপান্নার। শুনতে রাজি নয় টেনিস ফেডারেশন। ফাইল চিত্র

বিতর্কে: লিয়েন্ডারের সঙ্গে জুটি বাঁধা নিয়ে আপত্তি বোপান্নার। শুনতে রাজি নয় টেনিস ফেডারেশন। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গে জুটি বেঁধে ডেভিস কাপে খেলবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখন রোহন বোপান্নার হাতে। টেনিসের ভাষায় যাকে বলা যেতে পারে, বল এখন বোপান্নার কোর্টে।

সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশনের কর্তারা এ ব্যাপারে কোনও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে চান না। তাঁরা ভাল মতোই জানেন যে, বোপান্না একেবারেই লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী নন। দু’জনের ঝামেলার ইতিহাস অনেক লম্বা। রিও অলিম্পিক্সে খেলার জন্য ২০১২ সালে এটিপি টুর্নামেন্টে তাঁদের জুটি বাঁধার কথা ছিল। কিন্তু বোপান্না পরে নিজেকে সরিয়ে নেন। রিও অলিম্পিক্সে দু’জনে একসঙ্গে ডাবলস খেললেও চূড়ান্ত বিতর্ক তৈরি হয়। প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেন তাঁরা।

অতীতে বহু বারই লিয়েন্ডারকে ছেড়ে মহেশ ভূপতির সঙ্গে খেলেছেন বোপান্না। সেই ভূপতিই এখন ডেভিস কাপ দলের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন। সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশন যদিও চিনের বিরুদ্ধে টাইয়ের দল নির্বাচন পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিল নির্বাচকদের হাতে। এবং, নির্বাচকদের বলে দেওয়া হয়েছিল সেরা দল বাছতে। টেনিস কর্তাদের মতে, ডাবলসে পেজ এবং বোপান্নাই ভারতের সেরা জুটি। তা হলে তাঁরা কেন খেলবেন না?

ভূপতি জানিয়েছিলেন, বোপান্নার চিনের বিরুদ্ধে টাইয়েও বাইরে বসতে আপত্তি নেই। লিয়েন্ডারের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেয়ে সেটা করতেই বরং তিনি পছন্দ করবেন। কিন্তু টেনিস কর্তারা শুনতে চাননি। তাঁরা পাল্টা বলেন, সরকারের কাছ থেকে অনুদান পাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সুবিধে বোপান্না পাচ্ছেন ভারতের টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে। তা হলে জাতীয় দলের স্বার্থে তিনি কেন ব্যক্তিগত লড়াই ভুলে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলবেন না? টেনিসের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এক দিকে তুমি দাবি করছ, অর্জুন পুরস্কারের জন্য কেন তোমার নাম পাঠানো হবে না? আবার স‌ংস্থার প্রতি, জাতীয় দলের প্রতি দায়বদ্ধতাও দেখাবে না? দু’রকম কী করে হয়?’’ অনুমান করা হচ্ছে, বোপান্না যদি এর পরেও লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলবেন না বলে চিনের বিরুদ্ধে টাই থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হতে পারে। ভূপতি বলেছেন, একমাত্র লিয়েন্ডারই খেলার ব্যাপারে রাজি করাতে পারেন বোপান্না-কে। কিন্তু কর্তারা সেই প্রস্তাবকেও গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, দেশের হয়ে খেলার জন্য একজনকে এত অনুরোধই বা করতে হবে কেন? অন্যান্য খেলার উদাহরণ টেনে কর্তারা এমন কথাও আলোচনা করেছেন যে, অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে সঙ্ঘাত রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশের হয়ে খেলার ক্ষেত্রে নিজেদের ঝামেলা ভুলে তাঁরা খেলতে নেমেছেন। তা হলে লিয়েন্ডার-বোপান্না কেন দেশের স্বার্থে একই কাজ করবেন না?

যা দাঁড়িয়েছে, এ নিয়ে কর্তারাও এখন গোঁ ধরে বসে আছেন। তাঁরাও ঠিক করে নিয়েছেন, ব্যক্তিগত পছন্দকে আর প্রশ্রয় দেবেন না। বোপান্নার সামনে তাই একটাই রাস্তা খোলা। হয় ব্যক্তিগত মতামতকে দূরে সরিয়ে রেখে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে নামো, নয়তো এআইটিএ অর্থাৎ সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশনের শাস্তির মুখে পড়ো। এ বারও যদি নিজেকে সরিয়ে নেন বোপান্না, তা হলে নানা রকম কড়া পদক্ষেপের মুখেই তিনি পড়তে পারেন। অর্জুন পুরস্কারের জন্যও তাঁর নাম পাঠানো হবে কি না, সন্দেহ থাকছে। এই পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া সংস্থা। গত বার অর্জুন না পাওয়ায় সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বোপান্না। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বললেন, ‘‘সংস্থাকে দোষারোপ করাটা সব চেয়ে সহজ কাজ। কিন্তু সংস্থা বা জাতীয় দলের জন্য কিছু অবদানও তো রাখতে হয়।’’

তাইনজিনে ৬ এবং ৭ এপ্রিল চিনের বিরুদ্ধে ডেভিস কাপ টাই। নির্বাচকেরা সেই ম্যাচের জন্যই লিয়েন্ডার এবং বোপান্না-কে ডাবলস পার্টনার হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এই মুহূর্তে ভারতীয়দের মধ্যে ডাবলস র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে রয়েছেন বোপান্না। তাঁর র‌্যাঙ্কিং ২০। লিয়েন্ডারের (৪৬) চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকলেও দ্বিবীজ শরণকে (৪৪) রাখেননি নির্বাচকেরা। তা নিয়ে যদিও তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, দ্বিবীজ র‌্যাঙ্কিংয়ে সামান্য এগিয়ে থাকলেও ডেভিস কাপে অসাধারণ রেকর্ড লিয়েন্ডারের। সেটা দেখেই তাঁকে রাখা হয়েছে দলে। দ্বিবীজ-কে রাখা হয়েছে রিজার্ভে।

৪৪ বছরের লিয়েন্ডারের কাছে এটা প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ হতে যাচ্ছে। ভূপতি নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে আসার পরে শেষ টাইয়ে বেঙ্গালুরুতে প্রথম দল থেকে তাঁকে বসিয়ে দেন। ছ’জনের স্কোয়াডে থাকলেও ভূপতি তাঁকে খেলাননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসেও খেলার সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন লিয়েন্ডার। টাইয়ের মাঝপথেই তিনি বেঙ্গালুরু ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE