Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
শুরুতে আলগা বোলিং ভারতের, মন্তব্য কিংবদন্তির

বুমরায় মুগ্ধ বোথাম, বিরাট অস্ত্র প্রতিভাই

মাইলের পরে মাইল হেঁটে যিনি এক সময়ে রোগাক্রান্ত মানুষের জন্য টাকা তুলেছেন, তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে চলছেন? অ্যাসেজ না হলেও ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে তাঁকে আবিষ্কার করা যদি বিস্ময় হয়, তা হলে আঁতকে উঠতে হবে তাঁকে এ ভাবে হাঁটতে দেখে! 

সুমিত ঘোষ 
পার্থ শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৯
Share: Save:

মাইলের পরে মাইল হেঁটে যিনি এক সময়ে রোগাক্রান্ত মানুষের জন্য টাকা তুলেছেন, তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে চলছেন? অ্যাসেজ না হলেও ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে তাঁকে আবিষ্কার করা যদি বিস্ময় হয়, তা হলে আঁতকে উঠতে হবে তাঁকে এ ভাবে হাঁটতে দেখে!

তিনি— স্যর ইয়ান বোথাম। হঠাৎই পার্‌থের নতুন স্টেডিয়ামে হাজির। সম্প্রচারকারী চ্যানেলে ধারাভাষ্য দিতেও বসলেন। দিনের শেষে মাঠে নামতে হল ম্যাচের ময়নাতদন্ত করার জন্য। তখনই দেখা গেল ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন। কী হয়েছে আপনার? জিজ্ঞেস করায় বোথাম বললেন, ‘‘শিরদাঁড়ার সমস্যায় একটা অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তাই এখন ক্রাচ নিয়ে চলতে হচ্ছে।’’ তার পরেই বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের স্বভাবসিদ্ধ মেজাজে ঘোষণা, ‘‘তবে এটা খুব বেশি দিনের জন্য নয়। খুব শীঘ্রই আবার আমাকে নিজের পায়ে হাঁটতে দেখবেন।’’

আনন্দবাজারকে এর পর একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে। কথোপকথন চলল এ রকম:

প্রশ্ন: প্রথম দিনের খেলা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

ইয়ান বোথাম: ঘাসের পিচের ফায়দাটা তুলতে পারেনি আপনাদের বোলাররা। প্রথম দিকে খুব শর্ট বল করে গেল। ঘাস দেখে ওরা বোধ হয় একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। আমার মনে হয়, ভুল লাইন-লেংথে বল করেছে ভারতীয় বোলাররা। প্রথম দেড় ঘণ্টা প্রায় ভুল জায়গায় বল রেখেছে। যে কারণে সুবিধা হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের। আরও উপরে উপরে বল করা উচিত ছিল।

প্র: তার মানে পিচে সাহায্য ছিল। ভারতীয় বোলাররা তার ফায়দা তুলতে পারলেন না?

বোথাম: আমি সে রকমই বলব। এই ধরনের উইকেটে উপরে বল করতে হবে। বাকিটা তো সবুজ পিচই করে দেবে। পিচে প্রথম দিনেই বল উঁচু-নিচু হতেও দেখলাম। সেই কারণে আরও বেশি করে সঠিক জায়গায় বল রাখার দরকার ছিল। ভারতীয় বোলাররা সেটা করল লাঞ্চের পরে ফিরে এসে। তার ফলও পেয়েছে। দেরিতে হলেও ম্যাচে ফিরে আসতে পেরেছে। কিন্তু প্রথম দিনের প্রথম সেশনের ক্ষতি কতটা মেরামত করতে পেরেছে, সেটা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

প্র: ওয়াকা থেকে সরিয়ে প্রথম বার টেস্ট হল নতুন মাঠে। আপনি ওয়াকাকে মিস করলেন?

বোথাম: না, না, আমি মিস করছি না। নতুন স্টেডিয়ামটা আমার দারুণ লেগেছে। বিশাল বানিয়েছে। যুগ পাল্টাচ্ছে। দিন বদলাচ্ছে। আমাদের পুরনো আবেগ ধরে না রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

প্র: প্রথম দিনে ভারতীয় বোলিংয়ের আর কোনও সমস্যা ধরা পড়ল আপনার চোখে?

বোথাম: ইশান্তকে দেখে মনে হচ্ছিল, কোথায় বল ফেলবে তার চেয়ে বেশি ওর মাথায় ঘুরছে, পা কোথায় পড়ছে! এত নো বল করাটা ওর মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আর তার প্রভাব পড়ল ওর বোলিংয়ে। শুরুতে যে কারণে একেবারেই ছন্দে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ফিরে এল, দু’টো উইকেটও তুলল। কিন্তু পায়ের ল্যান্ডিং নিয়ে সমস্যাটা ওকে বিরক্ত করে যাচ্ছে, মনে হল। ইশান্ত সিনিয়র বোলার। ওকে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে তোলার রাস্তাও জানতে হবে।

প্র: মাত্র প্রথম দিনই হয়েছে, তবু কি মনে হচ্ছে ম্যাচ কোথায় দাঁড়িয়ে?

বোথাম: ভারতীয় বোলাররা ম্যাচে ফিরে এসেছে। দারুণ দু’তিনটে স্পেল করে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলেছে। তবু প্রথম দিনের শেষে কোনও মন্তব্য করতে হলে, আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া ভালই করেছে বলতে হবে। অ্যাডিলেডে হারের পরে ওরা বেশ চাপে ছিল। সব দিক মাথায় রাখলে আমার মনে হচ্ছে,, ভারতীয় বোলাররা ম্যাচে ফিরে এলেও প্রথম দিনটা কিছুটা হলেও এগিয়ে শেষ করল অস্ট্রেলিয়া। যে পিচকে বোলারদের বন্ধু বলা হচ্ছে, সেখানে ২৭৭-৬ স্কোরে শেষ করাকে মোটেও খারাপ বলা যাবে না।

প্র: ভারতীয় বোলারদের মধ্যে কাকে আপনার সব চেয়ে ভাল লাগে?

বোথাম: যশপ্রীত বুমরা। ইংল্যান্ডে যখন ভারত খেলতে এসেছিল, তখন থেকেই আমি খুব প্রভাবিত বুমরাকে দেখে। একটানা এক্সপ্রেস গতিতে বল করে যেতে পারে। বেশ শক্তিশালী দেখাচ্ছে ওকে। দুর্দান্ত বাউন্স আছে। ইংল্যান্ডে পুরো সিরিজে ব্যাটসম্যানদের দেখেছি বুমরার বাউন্স সামলাতে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। এখানেও তাই দেখলাম। বুমরাকে আমার খুবই ভাল লাগছে। আমার মনে হয়, আরও অনেক রাস্তা অতিক্রম করতে পারবে ও।

প্র: ভারতের এই বর্তমান দল সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

বোথাম: তরুণ একটা দল খুবই ইতিবাচক এবং লড়াকু মানসিকতা নিয়ে খেলছে। ভাল ব্যাপার। বিরাট কোহালির মতো খেলোয়াড় এই দলটার ক্যাপ্টেন। এখনকার প্রজন্মের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বিরাট। মানসিকতায় দারুণ আগ্রাসী আর ইতিবাচক। সহজে হার মানবে না। তার প্রভাব সকলে দেখতেই পাচ্ছে।

প্র: বিরাট কেন স্পেশ্যাল?

বোথাম: সচিন তেন্ডুলকর কেন স্পেশ্যাল ছিল? ভিভিয়ান রিচার্ডস কেন স্পেশ্যাল ছিল? প্রতিভা। আমি বলি ‘গ্রেট’রা প্রতিভাতেই আসলে তফাত করে দেয়।

বোথাম ক্রাচে ভর দিয়ে এগোলেন। গল্‌ফ কার্ট এসে গিয়েছে। রাতেই ফ্লাইট ধরে ম্যাঞ্চেস্টারে ফিরে যাবেন। চালিকা জানতে চাইলেন, আপনি পিছনের সিটে উঠে পড়তে পারবেন তো? বোথাম হাসলেন। ‘‘অফকোর্স’’ বলে ক্রাচ গুটিয়ে নিজেই উঠে বসলেন পিছনের সিটে।

বলা হত ইয়ান বোথামকে ধরতে হলে দৌড়তে হবে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে মানে মুহূর্তে উধাও হয়ে যাবেন কিংবদন্তি। তাঁর পায়ে যেন চাকা লাগানো। জীবনে ১৮টি বিখ্যাত ‘চ্যারিটি ওয়াক’ করেছেন। লিউকোমিয়া আক্রান্তদের জন্য তুলেছেন প্রায় ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড।

হাঁটুর ব্যথার জন্য গত বছর থেকে হাঁটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন অস্ত্রোপচারের পরে তো আরওই সম্ভব হবে না। কাকতালীয়— বোথামের বিখ্যাত ‘চ্যারিটি ওয়াকের’ শেষটি ছিল অস্ট্রেলিয়াতেই। গল্‌ফ কার্ট অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে জনদরদী অলরাউন্ডারকে নিয়ে, হাসি মুখে হাত নাড়া দেখে ফের তাঁর কথাগুলো কানে বেজে উঠল, ‘‘আমি ফিরব, খুব শীঘ্রই আবার আমাকে নিজের পায়ে হাঁটতে দেখবেন।’’ ইয়ান বোথামরা সহজে হার মানতে জানেন না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE