Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অশ্বিন ও রোহিত বাইরে, ঘাস ছাঁটা না হলে চার পেসার

রোহিতের স্ক্যান রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। সেটা হাতে পেলেই বোঝা যাবে তাঁর চোট কতটা গুরুতর। অশ্বিনের তলপেটের নীচে মাংসপেশিতে টান ধরেছে।

দুর্ভাগ্য: চোটের জন্য দল থেকে ছিটকে গেলেন রোহিত, অশ্বিন। ফাইল চিত্র

দুর্ভাগ্য: চোটের জন্য দল থেকে ছিটকে গেলেন রোহিত, অশ্বিন। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
পার্থ শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

পার্‌থের সবুজ পিচে খেলতে নামার আগের সকালে হাসপাতালের মতো মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করা হল ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে। তিন জন চোটের কারণে প্রথম একাদশের ভাবনার বাইরে। রোহিত শর্মা, আর অশ্বিন এবং পৃথ্বী শ।

এর মধ্যে পৃথ্বী যে মেলবোর্নের আগে ফিট হতে পারবেন না, সেটা জানাই ছিল। রোহিতের কোমরের পিছন দিকে চোট লাগে অ্যাডিলেড টেস্টে। পার্‌থে তো খেলতে পারছেনই না, বাকি সিরিজেও তাঁকে নিয়ে সংশয় তৈরি হয়ে গেল কি না, সেটাই দেখার। রোহিতের স্ক্যান রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। সেটা হাতে পেলেই বোঝা যাবে তাঁর চোট কতটা গুরুতর। অশ্বিনের তলপেটের নীচে মাংসপেশিতে টান ধরেছে। ইংল্যান্ডেও এই ধরনের চোট তাঁকে ভুগিয়েছিল। অ্যাডিলেডে অনেক বেশি বলও করতে হয়েছে তাঁকে। রোহিতের চেয়ে তাঁর চোটের তীব্রতা কম বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। মেলবোর্ন এবং সিডনির জন্য তাঁর ফিট হয়ে ওঠার ভালই সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

পার্‌থে ফাস্ট, বাউন্সি পিচ হলেও অশ্বিনকে রেখেই রণনীতি সাজাচ্ছিলেন কোহালিরা। তার কারণ ‘ড্রপ-ইন’ পিচ। অ্যাডিলেডেও দেখা গিয়েছে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনেই ভাল রকম ফাটল তৈরি হয়ে যেতে পারে এই ধরনের পিচে। পার্‌থের পিচের চরিত্র অ্যাডিলেডের থেকে আলাদা হবে ধরে নিলেও ফাটল দেখা দেবে বলেই পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞদের। সেক্ষেত্রে অশ্বিন না থাকাটা বড় ধাক্কা হতে পারে।

হালফিলে ভারতীয় দল নতুন নীতি নিয়েছে যে, ম্যাচের আগের দিন বারো জনের নাম ঘোষণা করে দেবে। এ দিন কিন্তু জানানো হল তেরো জনের নাম। তার একটাই কারণ। পিচে এতটা ঘাস শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয়। অস্ট্রেলিয়ার এই বিপর্যস্ত ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা সবুজ পিচে খেলতে নামার সাহস শেষ পর্যন্ত দেখাবে কি না, তা নিয়ে ভারতীয় শিবিরে অনেকের সংশয় রয়েছে। সেই কারণে তেরো জনের দলে বাড়তি পেসার এবং স্পিনার হিসেবে রবীন্দ্র জাডেজাকে রাখা হয়েছে।

ভারতের তেরো জনের দল এ রকম: বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), এম বিজয়, কে এল রাহুল, চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্ক রাহানে (সহ-অধিনায়ক), হনুমা বিহারী, ঋষভ পন্থ, মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা। যশপ্রীত বুমরা, রবীন্দ্র জাডেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব।

পার্‌থের সবুজ উইকেট দেখার পরে গরিষ্ঠ মত ছয় ব্যাটসম্যান খেলানোর দিকে। তার মানে রোহিতের জায়গায় ইংল্যান্ডে রান করে আসা হনুমা বিহারীর প্রথম একাদশে ফেরা কার্যত নিশ্চিত। হনুমাকে গত দু’দিন ধরে আলাদা করে তৈরি করে যাচ্ছেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। যার অর্থ, মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সময়ও পেয়েছেন তিনি। হনুমা যে-হেতু অফস্পিন বলও করে দিতে পারেন, সেটা সব সময় তাঁর জন্য ‘বোনাস’।

প্রশ্ন এখন, চার ফাস্ট বোলারে নামা হবে নাকি ওভালে সফল জাডেজাকে রাখা হবে একমাত্র স্পিনার হিসেবে? এর উত্তর পাওয়া যেতে পারে শুধু শুক্রবার সকালেই। যদি দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার সবুজ বিপ্লবের মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি অর্থাৎ, ঘাস ছাঁটা হল না, তখন চার পেসারেই নামা হবে। সেখানে আবার প্রশ্ন চতুর্থ পেসার কে হবেন? ভুবনেশ্বর না উমেশ? প্রথম জনের অস্ত্র সুইং, দ্বিতীয় জনের গতি এবং বাউন্স।

ওয়াকায় ম্যাচ হলে চোখ বুজে ভুবি ঢুকে পড়তেন। কারণ, ওয়াকার সেই বিখ্যাত হাওয়া। যা সুইং বোলারের জন্য আদর্শ ছিল। অনেক ম্যাচে দুর্ধর্ষ সব স্পেল করে ম্যাচের রংই পাল্টে দিয়ে গিয়েছেন সুইং বোলাররা। কিন্তু বিশাল নতুন স্টেডিয়ামে পার্‌থের সেই বিখ্যাত হাওয়া আটকা পড়ে যাচ্ছে কংক্রিটের বহুতল জঞ্জালে। সুইং বোলারের এখানে একমাত্র ভরসা হচ্ছে পিচের ভিজে ভাব। কিউরেটরের বক্তব্য অনুযায়ী, বৈজ্ঞানিক ভাবে তাঁরা পিচের ভিজে ভাব তৈরি করার চেষ্টা করেছেন এবং প্রথম দু’দিন অন্তত সেটা থাকবে।

ম্যাচের দিন সকালে সত্যিই যদি পিচে ভিজে ভাব দেখা যায়, তা হলে ভুবির দিকে পাল্লা ভারী। তিনি যে ব্যাট করতে পারেন, সেটাও তাঁর পক্ষে যেতে পারে। মনে করা হচ্ছে, এই ধরনের বোলিং-সহায়ক পিচে টেল এন্ডারদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে অ্যাডিলেডে যেখানে ভারতের নীচের দিককার ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসা নিয়ে কথা উঠেছে। আর যদি গতি এবং বাউন্সকেই এই পিচে আপও বেশি করে অস্ত্র করতে চান কোহালিরা, তা হলে উমেশের কথা ভাবা হতে পারে। দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টেও বিধ্বংসী বোলিং করে এসেছেন উমেশ। সম্ভবত তিনিই এখন দেশের দ্রুততম পেসার।

তেজিয়ান অধিনায়ক এবং তাঁর হাতে থাকা ‘ফাইভ ম্যান আর্মি’। যাঁদের বলা হচ্ছে দেশের সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলিং বিভাগ। ‘‘নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে, আমি ক্যাপ্টেন থাকার সময়েই আমাদের দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলারেরা তাদের সেরা ফর্মে রয়েছে। আমি ওদের তৈরি করিনি। ওরা নিজেরাই নিজেদের যোগ্যতায় এই জায়গায় এসেছে। কৃতিত্ব পুরোটাই ওদের,’’ বললেন কোহালি। দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ান্ডারার্সে জয়ের উদাহরণ টেনে যোগ করলেন, ‘‘আমি পার্‌থে আগে খেলেছি। সব কিছু মাথায় রেখে বলছি, ওয়ান্ডারার্সের মতো প্রাণবন্ত পিচ আমি কোথাও দেখিনি। ওখানে আমরা পেরেছি মানে সব জায়গাতেই পারি। ওয়ান্ডারার্স আমাদের মধ্যে বিশ্বাসের জন্ম দিয়ে গিয়েছে।’’

অন্য ভারত। অন্য অধিনায়ক। অন্য রকম বোলিং আক্রমণ। স্পিনের দেশ চার পেসারে সবুজ পিচে পাল্টা আগুন ছোটানোর কথা ভাবছে। কে বলবে, কোহালি সেই দেশের ক্যাপ্টেন যেখানে ফাস্ট বোলার হতে চাওয়া এক তরুণ দুটোর জায়গায় চারটে রুটি চাওয়ায় তাঁর কপালে ভর্ৎসনা জুটেছিল। ভারতে আবার ফাস্ট বোলার হয় নাকি? পার্‌থে জিতলে জয়টা যেন কোনও এক কপিল দেবকে উৎসর্গ করার কথা ভাবতে পারে কোহালির দল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE