Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ব্র্যাডম্যানের দেশে একাত্তর বছরের প্রতীক্ষার অবসান

নাম না-করে সানিকেই কি ফের তোপ শাস্ত্রীদের

এই ট্রেসার বুলেট শাস্ত্রীর খুব প্রিয় কথা। কমেন্ট্রি করার সময় খুব ব্যবহার করতেন।

জুটি: হেড কোচ শাস্ত্রীর সঙ্গে নিজস্বী অধিনায়ক কোহালির। ছবি: টুইটার

জুটি: হেড কোচ শাস্ত্রীর সঙ্গে নিজস্বী অধিনায়ক কোহালির। ছবি: টুইটার

সুমিত ঘোষ
সিডনি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪১
Share: Save:

অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বার সিরিজ জেতার ইতিহাস তৈরি করার লগ্নেই নতুন এক সংঘাত শুরু হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আর সেই সংঘাত হল রবি শাস্ত্রী-বিরাট কোহালির ভারতীয় দল বনাম সুনীল গাওস্কর।

সোমবার সিরিজ জেতার পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে শাস্ত্রী বলে যান, ‘‘আমি মেলবোর্নে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, অনেক দূরে বসে কিছু লোক ফাঁকা গোলাগুলি ছুড়ে যাচ্ছে। তাই সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে। আমরা দক্ষিণ গোলার্ধে বসে আছি। কথাগুলো এমনি এমনি বলিনি। আমি জানতাম, ছেলেরা কত কঠিন পরিশ্রম করছে। অত দূরে বসে গুলি ছুড়লে দক্ষিণ গোলার্ধে আসতে আসতে তা হাওয়ায় ধ্বংস হয়ে যাবে ট্রেসার বুলেটের মতো।’’

এই ট্রেসার বুলেট শাস্ত্রীর খুব প্রিয় কথা। কমেন্ট্রি করার সময় খুব ব্যবহার করতেন। এখানেই না থেমে তিনি বলে চলেন, ‘‘কিন্তু গোলায় যদি শক্ত কিছু থাকে তা হলে সেটা কিন্তু অনেককে সমস্যায় ফেলতে পারে। গোটা অস্ট্রেলিয়া সফরে আমরা ঠিক সে ভাবেই ফায়ার করে গিয়েছি।’’ মনে করা হচ্ছে শাস্ত্রীর এই তোপ গাওস্করের দিকে। দেশে বসে টিভি চ্যানেলে কোহালির টিমের সমালোচনায় সব চেয়ে সরব ছিলেন সানি। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই নানা ব্যাপারে তিনি আক্রমণ করে গিয়েছেন বর্তমান দলকে। যা নিয়ে দল খুব প্রসন্ন হয়েছে বলে খবর নেই। চলতি সিরিজেও শুরুতেই দল নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতে থাকেন গাওস্কর। পার্‌থে সেঞ্চুরি করে কোহালি বিশেষ ইঙ্গিতবাহী, নিয়ন্ত্রিত সেলিব্রেশন করেন। সেখানে তিনি যে ইঙ্গিত করেন, তাতে মনে হয়েছিল, বলতে চাইছেন যতই তোমরা কথা বলে যাও আমার ব্যাটই জবাব দেবে। সেটাও অনেকে মনে করেন, গাওস্করকে উদ্দেশ্য করেই বার্তা পাঠানো। এর পর গাওস্কর তাঁর আক্রমণ বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিততে না পারলে কোহালি এবং শাস্ত্রীকে পদে রাখা হবে কি না, ভেবে দেখা উচিত। এ সবেরই উত্তরে মেলবোর্নে গাওস্করের নাম না করে শাস্ত্রী বলেন, ‘‘দূরে বসে ফাঁকা তোপধ্বনি করে যাওয়া সহজ। যাঁরা কথা বলছেন, তাঁরা অনেক দূরে বসে আছেন। আমরা এখন দক্ষিণ গোলার্ধে।’’ ক্রিকেট মহলে কেউ কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না, গাওস্করের সঙ্গে এক সময় খুব ভাল সম্পর্ক থাকা শাস্ত্রীর এতটা তিক্ততা তৈরি হয়ে গেল কেন? যদিও প্রেস কনফারেন্সে শাস্ত্রী বা কোহালি কেউ কখনও সানির নাম করছেন না। তা সত্ত্বেও বুঝতে বাকি থাকছে না যে, দু’পক্ষে শিঙা ফোঁকাফুঁকি বেশ ভাল রকম চলছে। গাওস্কর এর মধ্যে শাস্ত্রীর কটাক্ষের উত্তরে বলেছেন, ‘‘ফাঁকা আওয়াজ করে তো লাভই হল। টিম অনেক গুছিয়ে খেলল পরের ম্যাচ থেকে।’’ তার উত্তরে শাস্ত্রী আবার এ দিন তোপ দেগে গেলেন। এর পর আবার সানি কিছু বলেন কি না, দেখার। তবে দু’পক্ষের মধ্যে খুব শান্তিপূর্ণ বাতাবরণ যে এই মুহূর্তে নেই এবং সহজে তা ফিরবেও না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।

অভিনন্দন: বিরাটদের উৎসবে শামিল অনুষ্কাও। ছবি: গেটি ইমেজেস।

শাস্ত্রী-কোহালি এ দিন যৌথ ভাবে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। দু’জনের কথাবার্তাতেই বার বার উঠে আসে গত বারো মাসের প্রক্রিয়ার কথা। কোহালি বলেন, ‘‘গত বারো মাস ধরে যে প্রক্রিয়া চলেছে, সেটার ফল পাওয়া গেল এখানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় হারলেও আমরা জানতাম, মানসিকতা ঠিক আছে এবং ফল আমরা পাবই। আসল হচ্ছে নিজেদের যোগ্যতার উপরে বিশ্বাস। সেটা দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ডে হারের ফলে শেষ হয়ে যায়নি। আমরা জানতাম, ঠিক পথেই এগোচ্ছি। এখানে ফলটা পাওয়ায় সেই বিশ্বাসটা আরও বাড়বে।’’ শাস্ত্রী বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া সিরিজ অস্ট্রেলিয়াতে শুরু হয়নি। শুরু হয়েছিল কেপ টাউনে বছরের শুরুতে। ওখান থেকে যে সিরিজ চালু হয়েছিল, সেটাই এখানে চলেছে।’’ কোহালির পাশে বসে এর পর ভারত অধিনায়ককে সম্মান করার আর্জিও জানান তিনি। বলেন, ‘‘বিরাট যে রকম আবেগ নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলে, মনে হয় না সারা বিশ্বে কেউ সেটা করে। আমার ক্যাপ্টেনকে স্যালুট করুন। ও নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পিছপা হয় না। অন্য ক্যাপ্টেনদের চেয়ে ও আলাদা, প্রতিপক্ষের মুখের উপরে রয়েছে সারাক্ষণ এবং ওর এই মনোভাব গোটা দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।’’ আরও বলেন, ‘‘যখন টিমের বাকিরা দেখে অধিনায়ক নিজে গলা বাড়িয়ে দিতে ভয় পাচ্ছে না, তখন অন্যরাও সেটা করবে। এই টিমে কোনও সিনিয়র, জুনিয়র নেই। দেশের জন্য, দলের স্বার্থে যদি পাহাড়ের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিতে হয়, সেটাই করার জন্য প্রস্তুত ছেলেরা।’’ শাস্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয় অতীতের ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সের পাশে কোথায় রাখবেন এই জয়কে? হেড কোচ বলে দেন, ‘‘পাস্ট ইজ হিস্ট্রি, ফিউচার ইজ মিস্ট্রি। আমরা বাস্তবে থাকতে চাই। এবং, বাস্তবটা হচ্ছে এই দল একাত্তর বছরে প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জিতে দেখিয়েছে। ছেলেদের কৃতিত্ব দিন, ক্যাপ্টেনকে স্যালুট করুন। এই টিমের এখন নিজস্ব পরিচয়পত্র হয়ে গিয়েছে। তারা অতীতের যে কোনও দলের চোখে চোখ রেখে বলতে পারে, তোমরা ভাল ছিলে কিন্তু আমরাও ভাল ছিলাম।’’ পূজারাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত দেখাল দু’জনকেই। শাস্ত্রী বললেন, ‘‘পূজারাকে দেখে একটাই কথা মাথায় আসে আমার। ব্যাট, ব্যাট এবং ব্যাট।’’ অস্ট্রেলিয়ায় এসে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি ছাড়াও আরও অনেক কিছু জিততে দেখা গেল কোহালি, শাস্ত্রীদের। যেমন অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকেরা তাঁদের কাছে অ্যাশেজের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কী ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত? অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কোহালি তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন। মিচেল স্টার্কের প্রতি অহেতুক নির্দয় হচ্ছেন সমালোচকেরা এমনও বললেন। এত ভাল এক জন বোলারের পাশে সকলের দাঁড়ানো উচিত বলে আর্জি জানালেন। শাস্ত্রী বলে দিলেন, ‘‘ইংল্যান্ড থেকে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে রাশ আলগা করা যাবে না। আর ওদের টেলএন্ডারদের রান করতে দেওয়া যাবে না। আমরা ওই ভুলটা করেছিলাম।’’ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এই জয় সত্যিই অনেক উচ্চ শিখরে বসিয়ে দিল বিরাট বাহিনীকে। পরাভূত প্রতিপক্ষ এখন তাঁদের কাছেই জয় করার মন্ত্র জানতে চাইছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE