Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্মিথ অস্ট্রেলিয়ার কোহালি, বলছেন অস্ট্রেলীয় কোচই

বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির জেরে নির্বাসিত স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নারের প্রত্যাবর্তন নিয়ে মতান্তর রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। এখানকার ক্রিকেট ভক্তদের সহানুভূতি এখনও পুরোপুরি ফিরে পাননি তাঁরা।

জুটি: ল্যাঙ্গারের (বাঁ দিকে) মুখে পেনেরও প্রশংসা। সোমবার। এএফপি

জুটি: ল্যাঙ্গারের (বাঁ দিকে) মুখে পেনেরও প্রশংসা। সোমবার। এএফপি

সুমিত ঘোষ
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৯
Share: Save:

ভারতে যতই তিনি আক্রান্ত হন, যতই তাঁর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠুক, অস্ট্রেলিয়ায় অনেকের কাছে দেখা যাচ্ছে তিনি উদাহরণ। এতটাই যে, অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার বলে দিলেন, স্টিভ স্মিথ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিরাট কোহালি! সেই স্মিথ, বল-বিকৃতির ঘটনায় নির্বাসিত আগে যাঁকে ভাবা হচ্ছিল বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানের দৌড়ে কোহালির প্রতিদ্বন্দ্বী।

বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির জেরে নির্বাসিত স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নারের প্রত্যাবর্তন নিয়ে মতান্তর রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। এখানকার ক্রিকেট ভক্তদের সহানুভূতি এখনও পুরোপুরি ফিরে পাননি তাঁরা। বিশেষ করে অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন করায় স্মিথ নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ল্যাঙ্গার যদিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাসন ওঠার পরেই তাঁরা ফিরতে পারেন। ভারতের সঙ্গে সিরিজ শেষ হওয়ার পরে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে পারে অস্ট্রেলিয়া। স্মিথদের নির্বাসন ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই হতে পারে সেই সিরিজ এবং ল্যাঙ্গারের কথাবার্তায় ইঙ্গিত, সেখানেই ফিরতে পারেন তাঁরা।

ল্যাঙ্গার সম্প্রতি স্মিথ এবং ওয়ার্নারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। বল-বিকৃতির আর এক খলনায়ক ক্যামেরন ব্যানক্রফ্‌ট পার্‌থ টেস্টের সময় দলের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। স্মিথকে নিয়ে ল্যাঙ্গার বলেন, ‘‘ও খুবই কঠিন মানসিকতার ছেলে। অনেক কিছুর মধ্যে যেতে হয়েছে। আমরা ওকে ফেরত পেতে চাইব। ও হচ্ছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বিরাট কোহালি।’’ এখানেই না থেমে এর পর অস্ট্রেলীয় কোচ যোগ করেন, ‘‘স্মিথ দারুণ ছেলে। ও আমাদের দলের ক্যাপ্টেন ছিল।’’

যদিও স্মিথ এবং ওয়ার্নারের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে অস্ট্রেলীয় জনমত বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে ধরা হচ্ছে। এবং, জনমত যে খুব স্মিথদের অনুকূলে রয়েছে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তার মধ্যেই নির্বাসিত তারকাদের ফিরে পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে ল্যাঙ্গারের মন্তব্যে কী রকম প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা দেখার। স্মিথ এবং ওয়ার্নারকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে হলে আইপিএলের একটা অংশ তাঁরা খেলতে পারবেন না। স্মিথ এর আগে জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বকাপে খেলতে চান। এবং বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ প্রস্তুতি হতে পারে আইপিএল বা বিগ ব্যাশের মতো টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় খেলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা আইপিএল নিয়ে কী করবেন, সেটাও দেখার।

ল্যাঙ্গার অবশ্য কোহালির আচরণ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ককে উড়িয়েই দিয়ে গেলেন। উল্টে বলে গেলেন, টিম পেনের সঙ্গে ভারত অধিনায়কের যে বাগ্‌যুদ্ধ চলেছে পার্‌থে, তা তাঁদের সময়কার ক্রিকেটকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। যখন মাঠে দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে কথা চালাচালি হত, আবার মাঠের বাইরে সবাই স্বাভাবিক হয়ে যেত। ‘‘আমাকে এক জন জিজ্ঞেস করছিলেন, এ সব বন্ধ হওয়া উচিত কি না। আমি বললাম, একদম কথাবার্তা না হওয়াটা ক্রিকেটকে ম্যাড়ম্যাড়ে করে দেবে।’’ কোহালি বনাম পেন বাগ্‌যুদ্ধে অস্ট্রেলীয় কৌতুকবোধ ফিরতে দেখেছেন ল্যাঙ্গার। বলছেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সময়ে আমি খেলেছি। সেই সময়ে এই কৌতুকবোধ দেখতাম।’’ টিম পেনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বললেন, ‘‘অস্ট্রেলীয়রা নিজেদের রক্ষা করার জন্য রুখে দাঁড়াবে, এটাই তো তাদের চরিত্র। পেন সেটা করে দেখিয়েছে। আমি দারুণ এক নেতাকে দেখতে পেয়েছি ওর মধ্যে।’’ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে এমনও কথাবার্তা চলছে যে, স্মিথরা ফিরলেও পেনকেই অধিনায়ক রেখে দেওয়া হোক। ফিরেই সম্ভবত নেতৃত্বের সিংহাসন পাবেন না স্মিথ।

বক্সিং ডে টেস্টে সব চেয়ে বেশি করে আলোচনার কেন্দ্রে এখন এমসিজি-র বাইশ গজ। গত বছর অ্যাশেজে বিরক্তিকর ড্রয়ের জন্য আইসিসি এখানকার পিচকে ‘পুয়োর’ রেটিং দিয়েছিল। আর এক বার এ রকম রেটিং পেলে ঐতিহ্যের বক্সিং ডে টেস্টের দায়িত্ব পাওয়াই কঠিন হয়ে যেতে পারে মেলবোর্নের। পিচ প্রস্তুতকারক ম্যাট পেজ অবশ্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন সামাল দেওয়ার। কংক্রিটের উপরে বালির স্তর দিয়ে তিনি পিচে প্রাণ ফেরানোর মরিয়া উদ্যোগ নিয়েছেন। যদিও তাতে কতটা কী উন্নতি ঘটবে, সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ল্যাঙ্গার আশা করছেন, অ্যাডিলেড এবং পার্‌থের মতো মেলবোর্নের পিচও উত্তেজক ক্রিকেট খেলার মঞ্চ উপহার দেবে। বলে দিলেন, অবাকই হয়েছেন পার্‌থের পিচকে আইসিসি ‘গড়পরতা’ আখ্যা দেওয়ায়। সচিন তেন্ডুলকর-সহ অনেকেই আইসিসি ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগলের রেটিংয়ের সমালোচনা করেছেন।

পার্‌থের মতো এখানেও পিচে ঘাস ছেড়ে রাখা হয়েছে। সম্ভবত প্রথম দিকে তা পেসারদের সাহায্য করতে পারে। ভারতীয় দল অবশ্য পিচ দেখে এ দিনই কোনও সিদ্ধান্তে আসতে চায়নি। তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, শেষ দু’দিনে সম্পূর্ণ অন্য চেহারা নিতে পারে পিচ। তাই বড় দিনে বাইশ গজ দেখার পরেই যা ভাবার ভাববেন কোহালিরা। সোমবার পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তিন পেসার-এক স্পিনার কম্বিনেশনের পিচই মেলবোর্নে হচ্ছে বলে ধরে নিচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE