Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিরাট-বিতর্ক এড়িয়ে নতুন বিস্ময় এখন স্টাম্প মাইক

মুরলী বিজয় ব্যাট করছেন। এ বার উইকেটের পিছনে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেন। বলে উঠলেন, ‘‘বিজয়, আমি জানি কোহালি তোমার ক্যাপ্টেন। কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই এ রকম এক জনকে পছন্দ করতে পারো না, তাই না?’’

অভিনব: স্লেজিং এখন শোনা যাচ্ছে মাইক্রোফোনে। ফাইল চিত্র

অভিনব: স্লেজিং এখন শোনা যাচ্ছে মাইক্রোফোনে। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

প্যাট কামিন্স ব্যাট করছেন। উইকেটের পিছন থেকে ক্রমাগত কথা বলে চলেছেন ঋষভ পন্থ। এক বার বললেন, ‘‘প্যাটি, তোমার ছক্কা মারা দেখতেই তো লোকে মাঠে এসেছে। মারো, ছক্কা মারো।’’

মুরলী বিজয় ব্যাট করছেন। এ বার উইকেটের পিছনে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেন। বলে উঠলেন, ‘‘বিজয়, আমি জানি কোহালি তোমার ক্যাপ্টেন। কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই এ রকম এক জনকে পছন্দ করতে পারো না, তাই না?’’

অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত— চলতি টেস্ট সিরিজে স্টাম্প মাইক্রোফোনের ব্যবহার কি ক্রিকেটকে বিতর্কিত করে দিচ্ছে না কি আকর্ষণীয় করে তুলছে? এই প্রশ্ন নিয়ে নতুন তোলপাড় শুরু হয়েছে ক্রিকেটে। পার্‌থে দু’দলের অধিনায়কের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা তৈরি হলেও অনেকে কিন্তু মনে করছেন, স্টাম্প মাইক্রোফোন নতুন বিনোদন নিয়েই হাজির হয়েছে।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট যেমন বলছেন, তিনি খুবই উপভোগ করছেন প্রযুক্তির এই নতুন ব্যবহার। ‘‘টেস্ট ক্রিকেট দেখতে মাঠে লোকে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। টিভি-র সামনেও বা কত জন আর বসছে? সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে স্টাম্প মাইক্রোফোন খেলাটাকে খুব প্রাণবন্ত করে দিচ্ছে। ঘরে বসে সব কিছু শুধু দেখাই যাচ্ছে না, শোনাও যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে ক্রিকেট সম্প্রচারকে অনেক আকর্ষণীয় করে দিয়েছে স্টাম্প মাইক্রোফোন।’’

আরও পড়ুন: ওপেনার-সঙ্কটে মেলবোর্নে অভিষেকের দৌড়ে মায়াঙ্ক

গিলক্রিস্টের কথা শুনে জন ম্যাকেনরোর কথা মনে পড়ে যাবে। টেনিস তার উত্তেজনা হারাচ্ছে মনে করিয়ে দিয়ে তিন বছর আগে ম্যাকেনরো বলেছিলেন, ‘‘যদি টেনিসকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাও, লাইন্সম্যান তুলে দাও। খেলোয়াড়দের নিজেদের লাইন-কল নিয়ে ঝামেলা করতে দাও। টেনিস বড্ড বেশি ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যাচ্ছে। একটু মশলা যোগ হতে দাও।’’

পার্‌থে দু’দলের অধিনায়কের বাগ্‌যুদ্ধ কোনর্স-ম্যাকেনরো উত্তেজক দ্বৈরথের কথা মাঝেমধ্যে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। কারও কারও পরামর্শ, টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য স্টাম্প মাইক্রোফোন যদি প্রাণবন্ত সেই কথোপকথনগুলো তুলে ধরতে পারে, ক্ষতি কী? যদিও সব ঘটনা নিয়ে ভিতরে-ভিতরে সকলে খুব প্রীত, এমন ভাবার কারণ নেই।

আরও পড়ুন: ক্রিকেট থেকে সরে আসার কথাও ভাবেন ব্যানক্রফ্‌ট

কোহালিকে সব চেয়ে বেশি করে স্টাম্প মাইক্রোফোনের ঝড় সামলাতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারকারী চ্যানেল দাবি করে, তিনি নাকি পেনকে বলেছেন, ‘‘আমি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার। আর তুমি শুধুই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।’’

মাঙ্কিগেটের মতো তুলকালাম বেধে যেতে পারত কোহালির বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ নিয়ে। সম্প্রচারকারী সংস্থার ওয়েবসাইটে এই খবর চলতে থাকায় দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট কথা বলে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে। তার পরেই বোর্ড থেকে বিবৃতি দেওয়া হয় যে, ভারত অধিনায়ক মোটেও এমন কিছু বলেননি টিম পেনকে। অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারকারী চ্যানেলকে পাল্টা প্রশ্ন করে বোর্ড যে, টিম পেন কী বলেছেন কোহালিকে তার ভিডিয়ো আপনাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে। কিন্তু কোহালি কী বলেছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ককে, সেটা বিশ্বস্ত সূত্রের খবর বলে লেখা হচ্ছে। কোনও ভিডিয়ো নেই কেন? পাল্টা প্রশ্নের মুখে সম্প্রচারকারী চ্যানেল বাধ্য হয় তাদের ওয়েবসাইট থেকে এই খবর তুলে নিতে। শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় বোর্ড এবং কোহালির কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছে তারা।

আরও একটি ঘটনা নিয়ে চাপানউতোর চলছে। ইশান্ত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাডেজার মধ্যে ‘সেমসাইড’ ঝামেলা। এই ঘটনাটি যখন ঘটে তখন বোলিং হচ্ছিল না। তার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে ইশান্ত এবং জাডেজার ঝামেলা দেখিয়ে যাওয়া হল কেন, তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ভারতীয় শিবিরে। কেউ কেউ অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘দু’জনের মধ্যে যা চলছিল, তার সঙ্গে ম্যাচের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ঘটনাটা বড় করে দেখানো হয়েছে ভারতীয় দলকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছোট করে দেখানোর জন্য।’’

আইসিসি-র একটি নিয়ম পরিবর্তন স্টাম্প মাইক্রোফোনের ব্যবহারকে আরও বিতর্কিত করে দিয়েছে। আগে নিয়ম ছিল, শুধু বল যখন হবে তখনই স্টাম্প মাইক্রোফোন খোলা থাকবে। বল যখন হবে না, তা ব্যবহার করা চলবে না। মাঠের মধ্যে অশোভন আচরণ রুখতে ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সম্প্রতি বলে দিয়েছে, বোলিং না হওয়ার সময়েও স্টাম্প মাইক্রোফোন চালু রাখা যেতে পারে। বেন স্টোকস যেমন নিজেদের গালাগালি দিচ্ছেন, মাইকে ধরা পড়ে গিয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় আইসিসি। পাল্টে যাওয়া এই নিয়ম অনুযায়ী, ইশান্ত এবং জাডেজার ঘটনা সম্প্রচারকারী চ্যানেল দেখাতেই পারে।

আবার অলিখিত নিয়ম হচ্ছে, সম্প্রচারকারী চ্যানেল কখন মাইক ‘অন’ রাখবে সেটা তাদের ব্যাপার। কোন কথোপকথনকে দর্শকদের জন্য ব্যবহার করবে, কোনটাকে সেন্সর করবে, সম্পূর্ণ ভাবে তাদের হাতে। ভারতীয় শিবিরের মনে হচ্ছিল, সম্প্রচারকারী অস্ট্রেলীয় টিভি চ্যানেল দেশাত্মবোধ দেখাতে শুরু করেছে। কোহালিকে নিয়ে চাউর করা স্লেজিংয়ের খবর তুলে নেওয়া এবং দুঃখপ্রকাশে সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছে, বলা যায়। কখন আবার শিঙা ফোঁকাফুঁকি হবে, ঠিক নেই।

টিভি দর্শকদের দিক থেকে যদিও উত্তেজনার পারদ অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে স্টাম্প মাইক্রোফোন। টিভি দর্শকেরা যেমন শুনতে পেয়েছেন, মার্কাস হ্যারিস বলছেন ঋষভ পন্থকে, ‘‘এই বলটায় আউট হয়ে গেলে আজ রাতেই তুমি ডিস্কোয় যেতে পারবে। সোমবার রাতে পার্‌থের ডিস্কোয় দারুণ মিউজিক বাজে।’’ আবার নেথান লায়ন বলছেন হনুমা বিহারীকে, ‘‘কী গো, ক্রিসমাসে কোথায় ছুটি কাটাবে ভাবছ? আমি শুনেছি হ্যামিল্টন আইল্যান্ড খুব ভাল জায়গা।’’ ক্রিসমাসে হ্যামিল্টন আইল্যান্ডে ছুটি কাটাতে যাওয়ার পরামর্শ মানে ঘুরিয়ে বলে দেওয়া, বক্সিং ডে টেস্টে তো তোমার জায়গা হচ্ছে না দলে।

ম্যাকেনরোর পরামর্শ ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি টেনিস। ক্রিকেট কিন্তু শুনছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE