বিরাট ব্য়াটিংয়ে মুগ্ধ সঞ্জয় মঞ্জরেকর।—ছবি এএফপি।
প্রায় ছয় বছর আগে একটি টুইট করে বিরাট কোহালির টেস্ট দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। যে টুইট নিয়ে এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। শনিবার পার্থে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে কোহালি নিয়ে সেই সঞ্জয় মঞ্জরেকরই মোবাইলে আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাব দিলেন মুম্বইয়ের সোনি পিকচার্স নেটওয়ার্কসের স্টুডিয়ো থেকে।
প্রশ্ন: পার্থ টেস্ট তো দারুণ উত্তেজক অবস্থায় রয়েছে। যে কোনও দিকে ম্যাচ যেতে পারে।
মঞ্জরেকর: অবশ্যই। টেস্ট ম্যাচ যে উত্তেজক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, তার জন্য পার্থের পিচের কথা যেমন বলতে হবে, তেমনই দুই দলের বোলিং শক্তির কথাও সামনে আনতে হবে। দু’টো দলের বোলিংই মোটামুটি একই ধরনের। দারুণ সব ফাস্ট বোলার আছে দু’দদলেরই। আবার দু’দলের ত্রুটি-দুর্বলতাগুলোও প্রায় একই রকম। তাই ম্যাচটা এত জমে গিয়েছে।
প্র: পার্থের পিচ নিয়ে কী বুঝছেন?
মঞ্জরেকর: সত্যি বলছি, পিচটা খুব অদ্ভুত ব্যবহার করছে। পিচটার মুড ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কখন কী হবে, আগাম আঁচ পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই ম্যাচ কখন কোন দিকে ঘুরবে, এটা বলা কঠিন।
আরও পড়ুন: ওপেনারদের ব্যর্থতায় খোঁজ পড়েছে পৃথ্বীর
প্র: এ রকম একটা পিচে বিরাট কোহালির শনিবারের ইনিংসটা (১৮১ বলে অপরাজিত ৮২, নয়টি চার) নিয়ে কী বলবেন?
মঞ্জরেকর: অবিশ্বাস্য ইনিংস। বিরাটের ধারাবাহিকতা দেখলে মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য। পৃথিবীর সব জায়গায় রান করেছে। সব রকম বোলারের বিরুদ্ধে রান পেয়েছে। তবে এ দিনের ইনিংসটা অন্য একটা দিক দিয়ে পথিকৃত হয়ে থাকবে।
প্র: কী ভাবে?
মঞ্জরেকর: বিরাটকে আমরা জানি বিধ্বংসী এক জন ব্যাটসম্যান হিসেবে। যে একার হাতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। কিন্তু পার্থে অন্য বিরাটকে দেখলাম। যে নিজেকে দলের প্রয়োজনে গুটিয়ে রেখেছে। অসম্ভব একাগ্রতা আর শৃঙ্খলার সঙ্গে অফস্টাম্পের বাইরের বল ছেড়েছে। দলের প্রয়োজনে ব্যাটিং থেকে ঝুঁকি নেওয়ার ব্যাপারটা পুরোপুরি ছেঁটে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: সচিন-যুগকে মনে করিয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কিং কোহালি
প্র: বিরাটের এই ইনিংসের কোন ব্যাপারটা আপনার সব চেয়ে ভাল লেগেছে?
মঞ্জরেকর: ওর আত্মবিশ্বাস আর সংযম। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিরাট ব্যাট করতে নামে, সেটা বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আর এই ইনিংসে বিরাটকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে ওর সংযম। শুরুতে আগ্রাসী থাকলেও পরে গুটিয়ে নেয় নিজেকে। শট খেলাটা ওর সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে পড়ে। একটা উদাহরণ দিই। যেমন কভার ড্রাইভ। এত ভাল কভার ড্রাইভ খুব কম ব্যাটসম্যানই মারতে পারে। সহজাত প্রবৃত্তির বশে এই শটটা খেলে। কিন্তু যখন দেখল, এই ধরনের পিচে কভার ড্রাইভ খেলা ঝুঁকির হয়ে যাবে, তখন সেটা ছেঁটে ফেলল।
প্র: বিরাটের এই ইনিংসটা কি আপনাকে সেই পুরনো ঘরানার টেস্ট ব্যাটিংকে মনে করিয়ে দিচ্ছে?
মঞ্জরেকর: সেটা বলতেই পারেন। আর এখানেই বিরাট মহান। রক্ষানত্মক ব্যাটসম্যানরা এই ধরনের সংযমী ইনিংস খেললে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। কিন্তু বিরাটের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যান, যার হাতে সব রকমের শট আছে, সে যখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে এই ধরনের ব্যাটিং করে, তখনই তার আসল দক্ষতাটা বোঝা যায়।
প্র: ইংল্যান্ড সফর আর এখন অস্ট্রেলিয়ায় যে বিরাটকে দেখছেন, আগের চেয়ে তার মধ্যে কি কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েছে?
মঞ্জরেকর: ইংল্যান্ড সফরেই বোঝা গিয়েছে, মানসিক ভাবে বিরাট কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। টেকনিক্যালি হয়তো দু’একটা পরিবর্তন করেছে ঠিকই, কিন্তু আমার মনে হয়েছে, মানসিক কাঠিন্যটাই ওকে ইংল্যান্ড আর এখন অস্ট্রেলিয়ায় রান পেতে বেশি সাহায্য করেছে।
প্র: বিরাটের তূণে নতুন কী অস্ত্র দেখছেন?
মঞ্জরেকর: অফস্টাম্পের বাইরের বলটা দারুণ ছাড়ছে। ইংল্যান্ড সফরে জিমি অ্যান্ডারসন ধারাবাহিক ভাবে ওকে অফস্টাম্পের বাইরে বল রেখে লোভ দেখিয়েছে। আমরা পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখেছি, অফস্টাম্পের বাইরে অন্তত ৬০ শতাংশ বল বিরাট ছেড়ে দিয়েছে। অবিশ্বাস্য একটা পরিসংখ্যান!
প্র: পার্থ টেস্টের কথায় আসি। ম্যাচটা এখন যে জায়গায় আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে কার জেতার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন?
মঞ্জরেকর: খুব কঠিন বলা। আমার মনে হয় এই টেস্টের ভাগ্য নির্ভর করে থাকবে দ্বিতীয় নতুন বল এই পিচে কী রকম ব্যবহার করে, তার উপরে। আগেই বলেছি, পিচটা কী রকম আচরণ করবে, বলা কঠিন। ভারতকে আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। বিরাটদের এই পিচে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে। যেটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাই প্রথম ইনিংসে যতটা সম্ভব ভাল জায়গায় চলে যেতে হবে ভারতকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy