Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Champa Naia

এশিয়া কাপ ক্যারাটেতে তৃতীয় স্থান পেল চম্পা

ক্যানিং দ্বারিকানাথ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী চম্পা নাইয়ার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার ও এলাকাবাসী।

জয়ী: চম্পা। নিজস্ব চিত্র

জয়ী: চম্পা। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৩
Share: Save:

আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় নজির সৃষ্টি করল ক্যানিংয়ের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে।

ক্যানিং দ্বারিকানাথ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী চম্পা নাইয়ার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার ও এলাকাবাসী।

এ বছর ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম এশিয়া কাপ ওপেন ইন্টারন্যাশনাল ফুল কন্টাক্ট ক্যারাটে টুর্নামেন্ট ২০২০। ১০টি দেশ ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। তার মধ্যে চম্পা ৫০-৫৫ কেজি বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এর আগেও সে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্য অর্জন করেছে।

ক্যানিংয়ের উত্তর নিকারিঘাটা গ্রামের বাসিন্দা তপন নাইয়ার ছোট মেয়ে চম্পা। তারা পাঁচ বোন, এক ভাই। তার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা লক্ষ্মী পরিচারিকার কাজ করেন। অভাবের সংসার। চম্পার পড়াশোনার খরচ চালাতেই হিমসিম খেতে হয়। তার মধ্যে আবার ক্যারাটের প্রশিক্ষণের খরচ। যা ব্যয় সাপেক্ষও বটে। কিন্তু সমস্ত বাধা কাটিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল চম্পা। বাড়ি থেকে হেঁটে ক্যানিং স্টেশন পর্যন্ত যেত সে। এরপর ট্রেন ধরে গড়িয়ায় ক্যারাটের প্রশিক্ষণ নিতে যেত চম্পা। কিন্তু খরচ টানতে পারছিল না তার বাবা। সে সময়ে অভাবের কথা শুনে এগিয়ে আসে ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। সাহায্য করেছেন তার ক্যারাটের প্রশিক্ষক ফিরোজ আলি সাঁফুই। তিনি চম্পার কাছ থেকে কোনও টাকা নিতেন না।

ক্যারাটের পাশাপাশি পাপ নিয়ে সচেতনতার কাজ করে চম্পা। গ্রামে প্রায় সবাই চেনেন তাকে। আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাওয়ার পর নেপালের কাঠমান্ডুতে যাওয়ার খরচ বহন করার ক্ষমতা ছিল না চম্পার। এই সময় তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় মামলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উত্তম দাস এবং মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হরেন ঘড়ুই। তাঁদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েই সে ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পেরেছিল।

চম্পা বলেন, ‘‘আমার মত গ্রাম বাংলার গরিব ঘরের মেয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতা করবে, তা স্বপ্নেও ভাবতেই পারিনি। এই কাজে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে যুক্তিবাদী সংস্থা। আমার কোচ ফিরোজ আলি সাঁফুই এবং উত্তম কাকু, হরেন কাকু। তাঁরা না থাকলে আমি এই পর্যন্ত আসতেই পারতাম না।’’

তার বাবা তপন বলেন, ‘‘আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করার মতো আমার সামর্থ্য নেই। ।বহু গুণী মানুষের সহযোগিতায় সে আজ ওই জায়গায় পৌঁছেছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’’

এ বছর ওই প্রতিযোগিতায় চম্পা নাইয়া ছাড়াও সন্ধ্যা দে, রুদ্রজ্যোতি দে, পৃথ্বীজ্যোতি দে তাদের কোচ ফিরোজ আলির সঙ্গে ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন।

ফিরোজ আলি বলেন, ‘‘ও অনেক প্রতিভাবান মেয়ে। ওর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম ওকে এই জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।’’ চম্পার সাফল্যে খুশি প্রধান উত্তম দাস, হরেন ঘড়ুইও। তাঁরা বলেন, ‘‘খুব কষ্ট করেছে চম্পা। ও আমাদের গর্ব। আগামী দিনে আরও বড় জায়গায় যাক, এটাই আমরা চাই। সব রকম সহযোগিতা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Champa Naia Canning Asia Cup Karate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE