Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নো বলে বিরক্ত তিরাশির পরাভূত অধিনায়ক

আগে ব্যাট করব না কেন, প্রশ্ন লয়েডের

১৯৮৩ সালের ২৫ জুন। লর্ডসের সেই প্রুডেনশিয়াল কাপ ফাইনাল ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা অঘটন বলে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। সে দিন হেরে যাওয়া বিশ্বত্রাস সেই ক্যারিবিয়ান দলের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড মেনে নিতে পারছেন না যশপ্রীত বুমরার ‘নো’ বল।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৪:৩২
Share: Save:

হট ফেভারিট হয়েও ফাইনালে হারের যন্ত্রণা কী, তাঁর চেয়ে ভাল কেউ জানে না।

১৯৮৩ সালের ২৫ জুন। লর্ডসের সেই প্রুডেনশিয়াল কাপ ফাইনাল ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা অঘটন বলে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। সে দিন হেরে যাওয়া বিশ্বত্রাস সেই ক্যারিবিয়ান দলের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড মেনে নিতে পারছেন না যশপ্রীত বুমরার ‘নো’ বল।

বুমরাকে নিয়ে কী করা যায়? লাঞ্চ করতে বসে নিজেই জিজ্ঞেস করলেন লয়েড। তার পর বললেন, ‘‘এখন প্র্যাকটিসের পদ্ধতি থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু এত আধুনিক হয়ে গিয়েছে। এতগুলো কোচ রয়েছে। সাপোর্ট স্টাফ রয়েছে। তার পরেও আন্তর্জাতিক ম্যাচে নো বল কেন হবে? বুমরার নো বলটাই তো টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল!’’ মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘এটাই কিন্তু প্রথম বার নয়। বুমরা আগেও নো বল করেছে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। আর তাতে ওর দলকে ভুগতেও হয়েছে।’’

লয়েডের তথ্যে কোনও ভুল নেই। শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘নো’ বলের অভিশাপ তাড়া করেছে ভারতীয় দলকে। লয়েডকে বলা গেল, তাঁর দলে বিশ্বত্রাস, সর্বসেরা সব ফাস্ট বোলার ছিলেন। বড় চেহারার অনেক ফাস্ট বোলার খেলেছেন তাঁর অধীনে। তাঁরা কেউ এ রকম ‘নো’ বল করতেন? রবার্টস, হোল্ডিংদের অধিনায়ক বললেন, ‘‘একেবারে কেউ করত না বলা যাবে না। আমি স্লিপে দাঁড়াতাম। আম্পায়ার হাত দেখিয়ে নো বল ডেকেছে দেখলে আমারও মাথা গরম হয়ে যেত। কিন্তু আমরা আলাদা করে নজরও দিতাম এ ব্যাপারে। প্র্যাকটিসে কেউ নো বল করে আউট করলে একস্ট্রা বল করতে হতো সেই বোলারকে।’’

বলা গেল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বিশ্ব মানের টুর্নামেন্টের ফাইনালে ‘নো’ বল করাটা তো বিরাট অপরাধ। লয়েড দ্রুত থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘শুধু ফাইনাল বলে নয়, যে কোনও ম্যাচে নো বল করলেই সেটা ক্রাইম। একটা ভুল ম্যাচ শেষ করে দিতে পারে। আজ দেখলেন তো কী হল!’’ পাকিস্তানের বাঁ-হাতি ওপেনার ফখর জমান ৭ বলে ৩ রানে ছিলেন, যখন তাঁকে আউট করেও ‘নো’ বল করার জন্য উইকেটটা পেলেন না বুমরা।

আরও পড়ুন:

হারের যন্ত্রণার সঙ্গে অভিশপ্ত হয়ে রইল বুমরার নো-বল

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস সৃষ্টিকারী লর্ডসের ফাইনালে কোনটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল, তা নিয়ে কখনও কোনও দ্বিমত তৈরি হয়নি। লয়েডের টিমের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডসের অ্যাডভেঞ্চারাস শট এবং পঁচিশ গজের ওপর পিছন দিকে দৌড়ে কপিল দেবের সেই ক্যাচ দুর্দান্ত ভাবে তালুবন্দি করে ফেলা। ওভালে কোনটা টার্নিং পয়েন্ট, তা নিয়েও যেন লয়েডের মনে কোনও সংশয় নেই। বুমরার ‘নো’ বল। যদিও ভারতের আতঙ্ক ওই একটা ‘নো’ বলেই শেষ হয়নি। পাকিস্তানের ৩৩৮ তাড়া করতে নেমে শুরুতে ধস নামল তারকায় ভরপুর ব্যাটিংয়েও।

লয়েড তখন লাঞ্চ সারতে সারতে দেখছেন, একটার পর একটা ইন্দ্রপতন হচ্ছে ভারতের। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহালির পরে শিখর ধবনও ফিরে গেলেন। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বিপর্যয় দেখতে দেখতেই তাঁর কাছ থেকে দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেল, ‘‘ভারত কেন টস জিতে ফিল্ডিং নিল? ফাইনালের মতো হাই প্রেশার ম্যাচ। আগে ব্যাট করে বড় রান চাপিয়ে দিতে পারলে তো প্রতিপক্ষ ওখানেই অনেকটা চুপসে যাবে। পাকিস্তানকে উল্টে সেই সুবিধেটা নেওয়ার সুযোগ করে দিল ভারত।’’ দ্রুত এর পর যোগ করলেন, ‘‘আমি জানি, কোহালিরা ভাল রান তাড়া করে। পরে ব্যাট করে দুর্ধর্ষ রেকর্ড ওদের। কিন্তু ফাইনালের জন্য এটা মোটেও ভাল স্ট্র্যাটেজি নয়।’’

ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরও বললেন, ‘‘এত ভাল ব্যাটিং পিচে আগে ব্যাট করার সুযোগ নিয়ে কেউ বড় রান তুলে দেওয়ার ঝুঁকিটা তো থেকেই যেত তাই না? সেই ঝুঁকিটা নেব কেন? আমি তো বরং এটাই ভাবব যে, এমন দুর্দান্ত ব্যাটিং পিচ। আমার হাতে সেরা ব্যাটিং লাইন আপ। প্রথমার্ধেই ম্যাচটা শেষ করে দিই। দুর্ভাগ্যের হচ্ছে, পাকিস্তান সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিল।’’

সর্বকালের সেরা টিম কারা, তা নিয়ে তর্ক উঠলে তাঁর ক্যারিবিয়ান দলের সঙ্গে তুলনা হতে পারে স্টিভ ওয়ের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ার। লয়ে়ড সে সব আলোচনায় ঢুকতে চান না। ‘‘রেকর্ড রয়েছে সকলের হাতের সামনে। সেটাই বলবে কারা সর্বকালের সেরা। আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই। কাউকে ছোট না করেই বলছি, আমার সময়ে কোনও জিম্বাবোয়ে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার সুযোগ ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE