লক্ষ্য: আইএফএ-র সাহায্য ছাড়াই চলছে জেলা সংস্থার শিবির।
ফুটবলের স্বার্থে প্রায় তিন বছর ধরে অনুদান না পাওয়া সত্ত্বেও আইএফএ-র কোচিং ক্যাম্প চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁকুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা। কিন্তু বীরভূমের কর্তারা কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছেন বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার বিরুদ্ধে। বকেয়া না মেটানোয় বন্ধ করে দিয়েছেন আইএফএ-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু করা কোচিং ক্যাম্প!
বাংলার ফুটবল মানচিত্রে বীরভূম কখনওই সে ভাবে ফুটে ওঠেনি। এখনও পর্যন্ত এই জেলা থেকে জাতীয় দলে কেউ সুযোগ পাননি। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানেও কেউ খেলেননি। মহমেডানের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন পার্থ মণ্ডল। এরিয়ানের হয়ে এক সময় খেলেছেন সদানন্দ নায়েক। এ ছাড়া বাংলার যুব দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তাপস দত্ত ও হৃদয়নাথ মণ্ডল। এই ছবিটা বদলানোর জন্যই বছর দশেক আগে কোচিং ক্যাম্প চালু করেছিল আইএফএ। উদ্দেশ্য, বীরভূম জেলা থেকে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে আনা। অথচ এখন তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।
ক্ষুব্ধ বীরভূম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিদ্যাসাগর সাউ ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘কোচিং ক্যাম্পে বল, খেলার অন্যান্য সরঞ্জাম ও কোচেদের বেতন দেওয়ার কথা আইএফএ-র। কিন্তু বছর তিনেক সবই বন্ধ। তাই আমরাও আইএফএ-র ক্যাম্প চালাতে আগ্রহী নই।’’ এর ফলে তো ফুটবলেরই ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারও উঠবে না। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা বলছেন, ‘‘আমরা নিজেরাই অর্থ জোগাড় করে সিউড়িতে ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছি। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আমাদের সাহায্য করছে। প্রায় একশোর কাছাকাছি খুদে ফুটবলার নিয়মিত অনুশীলন করছে। আশা করছি, কয়েক বছরের মধ্যেই কিছু ভাল ফুটবলার উঠে আসবে আমাদের জেলা থেকে।’’
বীরভূম জেলায় তিনটি মহকুমা লিগ হয়। সব চেয়ে বেশি দল খেলে বোলপুর মহকুমায়। প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশন মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ৩০টি ক্লাব। এর পরেই রয়েছে বোলপুর মহকুমা লিগ। প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশন মিলিয়ে খেলে ২২টি ক্লাব। সিউড়ি মহকুমা লিগে একটাই ডিভিশন। অংশ নেয় প্রায় ১৪টি ক্লাব। মহকুমা লিগে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দলকে নিয়ে হয় জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ। ফুটবল নিয়ে প্রবল উন্মাদনা রয়েছে জেলায়। সংস্থার সচিব জানালেন, জেলা চ্যাম্পিয়নশিপের প্রচারের জন্য যে ব্যানার বা পোস্টার বানানো হয়েছে, তাতে আইএফএ-র নাম পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়নি।
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে ফুটবলে পিছিয়ে কেন বীরভূম? জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বললেন, ‘‘আমাদের জেলায় যারা ফুটবল খেলে, তারা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। কেউ কৃষিকাজ করছে। আবার কেউ-কেউ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে সারা দিন। তার পরে ওরা ফুটবল খেলতে আসছে। ক্লান্ত শরীরে মাঠে নেমে খুব বেশি পরিশ্রম করার ক্ষমতা ওদের থাকে না। তা ছাড়া প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে আনার জন্য সে রকম কোচও নেই।’’
তিনি আরও বললেন, ‘‘ফুটবল খেলে চাকরি পাওয়ার সুযোগও এখন কমে গিয়েছে। ফলে ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তাগিদ কমে গিয়েছে। তা ছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ফুটবল খেলতে আসা ছেলের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। আমরা চেষ্টা করছি, অভিভাবকদের বোঝাতে, যাতে তাঁরা সন্তানদের মাঠে পাঠান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy