Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বার্লিনে বসে দেখলাম জার্মান কার্নিভাল

বার্লিনের একটি পাবে বসে কনফেডারেশন্স কাপ ফাইনালের খেলা দেখছিলাম। রেফারি খেলা শেষের লম্বা বাঁশি বাজাতেই যেন স্টেডিয়ামটাই উঠে এল রাশিয়ায়।

উৎসব: রবিবার ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে চিলেকে ১-০ হারানোর পর ট্রফি নিয়ে উৎসব জার্মানদের। ছবি: গেটি ইমেজেস

উৎসব: রবিবার ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে চিলেকে ১-০ হারানোর পর ট্রফি নিয়ে উৎসব জার্মানদের। ছবি: গেটি ইমেজেস

দীপেন্দু বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০৪:০২
Share: Save:

জার্মানিতে এসে ফুটবল কার্নিভাল দেখে ফেললাম রবিবার রাতে। শুক্রবার অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি। তার পর রবিবার রাতে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে চিলেকে হারিয়ে প্রথম কনফেডারেশন্স কাপ জয়। জার্মানির ফুটবলভক্তদের বাঁধনহারা উৎসবে ভেসে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

বার্লিনের একটি পাবে বসে কনফেডারেশন্স কাপ ফাইনালের খেলা দেখছিলাম। রেফারি খেলা শেষের লম্বা বাঁশি বাজাতেই যেন স্টেডিয়ামটাই উঠে এল রাশিয়ায়। কেউ উদ্বাহু নৃত্যে মত্ত। সঙ্গী বা সঙ্গীনির কোমর ধরে কেউ আবার নাচতে শুরু করে দিয়েছে। বাইরে তখন গাড়ি, মোটরবাইকে করে জার্মানির পতাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে বার্লিনের ফুটবলপ্রেমীরা।

আমাদের এখানে মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল বড় ম্যাচ জিতলে যুবভারতীর সামনে প্রিয় দলের টিমবাস ঘিরে যে রকম আনন্দ করে সমর্থকরা, সেই আবেগকে ছাপিয়ে যাওয়া কিছু দেখলাম বার্লিনে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছিল এখানে। সে সব পাত্তা না দিয়েই রাস্তায় নেমে যায় গোটা বার্লিন।

রবিবার দুপুরেই বার্লিনে চলে এসেছিলাম বার্সেলোনা থেকে। হোটেলে পা রেখেই বুঝেছিলাম, রাতে বড় কিছু অপেক্ষা করে রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে যে হোটেলে রয়েছি, তার ফুটবল পাগল রুম সার্ভিসের কর্মী অল্পস্বল্প ইংরেজি জানে। আমি কলকাতায় থাকি শুনে তার প্রশ্ন, ‘‘আমাদের ক্যাপ্টেন অলিভার কান তো কলকাতাতেই অবসর নিয়েছিলেন। আর ওখানেই তো অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল হবে। রাতে হোটেলের পাবে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখতে চলে আসুন। আপনার শহরে আমার দেশ চ্যাম্পিয়ন হলে বার্লিনের সেলিব্রেশন কেমন হবে তা আগাম দেখে যান।’’

আরও পড়ুন:

দারুণ শুরু করেও হার চিলের, কনফেড কাপ জার্মানির

জার্মানির সময়ে রাত সাড়ে আটটায় ফাইনাল শুরু। ফুটবল-উৎসব উপভোগ করতে সময় মতো ঢুকে পড়েছিলাম। সেখানেই আলাপ সারা এবং মাইক-এর সঙ্গে। ওরা ইংরেজি জানায় বসেছিলাম ওদের পাশেই। খেলা দেখতে গিয়ে বলে ফেলেছিলাম— থমাস মুলার, স্যামি খেদিরাদের মতো তারকারা নেই। প্রায় ‘বি’ টিম জার্মানির। সঙ্গে সঙ্গে মাইক শুধরে দিল, জার্মানির কোনও ‘বি’ টিম হয় না বন্ধু।

লার্স স্টিন্ডল গোল করে জার্মানিকে এগিয়ে দেওয়ার পরেই বেড়ে গেল গানের প্রাবল্য। গোটা পাব তার পরেই তালে তালে নাচতে-গাইতে লাগল পুরো নব্বই মিনিট। জার্মান ভাষা জানি না। মাঝে-মাঝে স্লোগান ‘ডাই ম্যানশ্যাফ্‌ট’ কানে আসছিল। আর ম্যাচ শেষ হতেই শুরু হল শ্যাম্পেনে স্নান।

মাইকের কাছ থেকেই শুনছিলাম, ম্যানুয়েল ন্যয়ার, মার্কো রয়েস, মেসুত ওজিল-সহ তারকাদের দলে না রাখায় প্রথমে জার্মান মিডিয়া সমালোচনা করেছিল কোচ জোয়াকিম লো-কে। কিন্তু টুর্নামেন্টে যত এগিয়েছে জার্মানি,ততই থিতিয়ে গিয়েছে কোচকে নিয়ে সেই সমালোচনা।

সোমবার সারাদিন বার্লিনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঢুঁ মেরে একটা ব্যাপার বুঝলাম, কনফেড কাপ আপাতত জার্মানদের কাছে অতীত। এ বার নতুন ক্লাবে ঢুকতে হবে ওদের। রাস্তাঘাট, মার্কেট, টিউবে সর্বত্র জার্মানদের মনের রিং-টোন একটাই। এ বার টানা দু’বার বিশ্বকাপ জিততে হবে। বিশ্বে যে ক্লাবের সদস্য মাত্র দুই। ব্রাজিল ও ইতালি। সংখ্যাটা তিন করতে সোমবার থেকেই মরিয়া দেখাচ্ছে জার্মান সমর্থকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE