ম্যাচের আগে পিচ দেখছেন ধোনি, শাস্ত্রী এবং ভরত অরুণ।
পুণেতে ভারত-নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ওয়ান ডে শুরুর আগেই বিতর্কের ঝড় বয়ে গেল। একটি চ্যানেলের গোপন ক্যামেরা অভিযানে পুণের কিউরেটর পাণ্ডুরঙ্গ সালগাওকর-কে বলতে শোনা যায় যে, তিনি চাহিদা মতো পেস বোলারদের সহায়ক পিচ বানিয়ে দিতে পারবেন।
মনে করা হচ্ছে, গোপন ক্যামেরার পিছনে থাকা সাংবাদিকেরা জুয়াড়ি সেজে এই টোপ দিয়েছিলেন কিউরেটরকে। সেই টোপ গিলে পান্ডুরঙ্গ নাকি প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি দাবি মতো পিচকে বিকৃত করে দেবেন। যদিও চ্যানেলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে পরিষ্কার নয় এই তথ্যটি। জুয়াড়ি সেজে আসা রিপোর্টাররা টাকা দিতে চাইছেন আর কিউরেটর সেই আর্থিক প্রস্তাব গ্রহণ করছেন, এমন কোনও ফুটেজ ভিডিওতে নেই।
তবে এটা ঠিক যে, কিউরেটরকে বলতে শোনা গিয়েছে তিনি পিচ বিকৃত করে দিতে পারবেন। বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় এমসিএ স্টেডিয়ামের বাইশ গজ নিয়ে এই নাটক। যার জেরে ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই সাসপেন্ড হন কিউরেটর পাণ্ডুরঙ্গ সালগাওকর। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থা তো বটেই, এই অভিযোগের তদন্তে নেমে পড়েছে আইসিসি-ও। এমনকী, ম্যাচের আগের দিন ছদ্মবেশী জুয়াড়িকে নিয়ে বেআইনি ভাবে পিচে ঢোকার অভিযোগও উঠেছে কিউরেটরের বিরুদ্ধে। কোন পিচে খেলা হবে, তা ম্যাচ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেই তিনি আগন্তুককে জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: ভুবনেশ্বর, বুমরায় মুগ্ধ কোহালি
নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের আগের দিন বাইরের কারও পিচের উপর যাওয়া নিষেধ। সে সবের তোয়াক্কা না করেই অপরিচিত ব্যক্তিকে কী ভাবে পিচ দর্শন করাতে নিয়ে গেলেন কিউরেটর, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। গোপন ক্যামেরায় এ নিয়ে প্রশ্ন হলে কিউরেটর বলে দেন, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করবেন। দুই বোলারের (নাম জানানো হয়নি) সুবিধার জন্য পিচে যাতে বাড়তি বাউন্স থাকে, সেই ‘ব্যবস্থা’ও করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। এই পিচে ৩৩০-এর উপর রান উঠবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেন কিউরেটর। সেই রান নাকি পরে ব্যাট করা দল তুলেও দেবে বলে তাঁর পূর্বাভাস ছিল। যদিও সেই স্কোরের ধারেকাছেও যায়নি এ দিন প্রথম ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড।
বুধবার সকাল থেকে টিভিতে এই গোপন অভিযানের ভিডিও দেখানো শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্রিকেট মহলে হইচই পড়ে যায়। একটি অংশ থেকে বুধবারের ম্যাচ বন্ধ করার দাবিও ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। আইসিসি ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডও সংশ্লিষ্ট পিচ পরীক্ষা করে ম্যাচ চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার আগেই পান্ডুরঙ্গকে সাসপেন্ড করা হয় এবং তাঁর মাঠে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ভারতীয় বোর্ডের দুর্নীতি দমন বিভাগ সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ম্যাচের আগের দিন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি পিচে চলে গেলেন? সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা এক তথাকথিত জুয়াড়ির ক্ষেত্রে বলবৎ হল না কেন? দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার বোর্ডের দুর্নীতি দমন শাখার প্রধান। তিনিই আইপিএলে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির অভিযোগে শ্রীসন্থদের ধরেছিলেন। তবে আদালত নিযুক্ত প্রশাসক কমিটির প্রধান বিনোদ রাই বোর্ডের দুর্নীতি দমন শাখার পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি দমন বিভাগের তিন সদস্যের পক্ষে সব জায়গায় ছুটে যাওয়া সম্ভব নয়।’’ পুণের পিচ নিয়ে ফেব্রুয়ারিতেও তুমুল বিতর্ক বাধে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে ভারত দুই ইনিংসেই প্রায় একশো রানে আউট হয়ে হেরে যাওয়ায়। তখন পান্ডুরঙ্গের বিতর্কিত মন্তব্য ছিল, ‘‘আমি জানতাম পিচের চরিত্র রাতারাতি বদলাতে গেলে এমনই হবে।’’ প্রাক্তন পিচ কমিটি প্রধান বেঙ্কট সুন্দরমের আশঙ্কা, কিউরেটররা বোর্ডের কাছ থেকে কম টাকা পান বলে সব সময়ই তাঁদের সহজ ‘শিকার’ হওয়া খুব স্বাভাবিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy