Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুঙ্গার ছক ধার নিয়ে ব্রাজিলের সামনে আজ ব্রাজিল-টু

নেইমার দ্য সিলভার এখন কী মনে হচ্ছে, বলা মুশকিল। প্যারাগুয়ে বনাম ব্রাজিল নিয়ে এখনও টুঁ শব্দ করেননি। অথচ তাঁর মন্তব্যই আজ সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ছিল। চার বছর আগের অভিশপ্ত কোপা ম্যাচে তো তিনিও ছিলেন টিমের এক পরাভূত মুখ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

নেইমার দ্য সিলভার এখন কী মনে হচ্ছে, বলা মুশকিল। প্যারাগুয়ে বনাম ব্রাজিল নিয়ে এখনও টুঁ শব্দ করেননি। অথচ তাঁর মন্তব্যই আজ সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ছিল। চার বছর আগের অভিশপ্ত কোপা ম্যাচে তো তিনিও ছিলেন টিমের এক পরাভূত মুখ।

চার বছর পর একই যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। সেই কোপা, সেই কোয়ার্টার ফাইনাল, সেই প্যারাগুয়ে। টাইব্রেকারে ছিটকে যেতে হয়েছিল সে দিন। নেইমার দ্য সিলভার মধ্যে তো প্রতিশোধের আগুন জ্বলা উচিত। কিন্তু জ্বলছে না। নিজেই তো নেই তিনি।

নেইমার ছাড়া বড় ম্যাচে ব্রাজিলের কী হয়, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল দেখেছে। কোপায় জার্মানি নেই। কিন্তু কোপায় যে প্যারাগুয়ে আছে, তারা কম শক্তিশালী নয়। টুর্নামেন্টের প্রেক্ষিতে বড় ম্যাচ। ব্রাজিল পারবে?

সমালোচকরা খুব আশা রাখছেন না। ব্রাজিলকে ট্রফি হাতে দেখছেনও না। নেইমার নেই, ট্রফি আসবে কী করে? বড় ম্যাচও জেতা সম্ভব কী ভাবে? দুঙ্গার ব্রাজিল তা মনে করে না। স্পিরিট মেনেই তারা নৈরাশ্যবাদীদের দলে নয়।

রবের্তো ফির্মিনো যেমন। তাঁর গোলেই কোয়ার্টারে উঠেছে ব্রাজিল। তাঁর অভিমতে, নেইমার ছাড়াও টিম যথেষ্ট শক্তিশালী। বলছেন, ‘‘নেইমার না থাকায় আমরা দুঃখ পেয়েছি, কিন্তু দুর্বল হয়ে যাইনি। আস্তে আস্তে উন্নতি তো করছি।’’ টিমের সেরা প্লেয়ারের অনুপস্থিতিতে ভরসার অন্যতম নাম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন রবিনহো। কোপায় কেন তাঁকে নেওয়া হল, তা নিয়ে এক সময় প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু প্রত্যাবর্তনে চমকে দিয়েছেন অভিজ্ঞ ব্রাজিল স্ট্রাইকার। দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে। ফির্মিনো আশা করছেন, রবিনহো আবারও ও রকম কিছু একটা করবেন প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে। দেশকে সেমিফাইনালে তুলতে আপ্রাণ লড়িয়ে দেবেন নিজেকে। বুঝতে দেবেন না নেইমারের অভাব।

কিন্তু আবেগ এক জিনিস, যুক্তি আর এক। ব্রাজিল কোচ দুঙ্গা কোনও দিন আবেগের বশ্যতা স্বীকার করেননি, আজও করেন না। উইলিয়ানরা যখন ইতিমধ্যেই কোপা সেমিফাইনাল দেখতে শুরু করেছেন, দুঙ্গা ডুবে প্যারাগুয়ের ‘এরিয়াল’ বলে দক্ষতা নিয়ে। প্রতি দিন নাকি ফুটবলারদের প্যারাগুয়ের ভিডিও দেখাচ্ছেন। দুর্বলতা-শক্তি বোঝাচ্ছেন। অনুশীলনে আক্রমণের উপর জোর দিলেও রক্ষণাত্মক কম্বিনেশন দেখে নিচ্ছেন। সেট পিস থেকে প্যারাগুয়ের হেডে গোল বন্ধ করতে দাভিদ লুইজকে হয়তো প্রথম থেকে নামিয়ে দিতে পারেন দুঙ্গা। মিরান্ডার সঙ্গে তাঁর জুটি নিয়েই নাকি পরীক্ষা চালাচ্ছেন। আর নেইমারহীন দলের ফরোয়ার্ডে থাকবেন সেই ফির্মিনো সহ কুটিনহো-উইলিয়ান ও রবিনহো। তাঁকে আরও একটা ওষুধ বার করতে হবে। ফুটবলের বাইরের রোগের। মানসিক বাধা কাটানোর ওষুধ। চার বছর আগে একই ট্রফির একই ম্যাচে একই প্রতিপক্ষের কাছে হেরে যাওয়ার আতঙ্ককেও হারাতে হবে দুঙ্গাকে।

প্যারাগুয়ে— তাদের কী অবস্থা? টিমের আজের্ন্তিনীয় কোচ মোন দিয়াজ বেশ ফুরফুরে। স্ট্র্যাটেজি না বিপক্ষকে চাপে ফেলার অঙ্ক, স্পষ্ট নয়। দিয়াজ শুধু বললেন, বর্তমান ব্রাজিলের ধাঁচে ফুটবলটা খেলবেন। দুঙ্গার রক্ষণাত্মক ফুটবলের ছক দিয়ে বধ করার চেষ্টা করবেন দুঙ্গার টিমকেই। ‘‘বিশ্বকাপের ধাক্কার পর ওরা শিক্ষা নিয়েছে। ব্রাজিল এখন খুব ভাল রক্ষণাত্মক টিম। কিন্তু আমিও টিমকে শেখাচ্ছি, কী ভাবে রক্ষণাত্মক ফুটবলটা খেলতে হবে,’’ বলেছেন দিয়াজ। প্রতিপক্ষকে ফেভারিট বেছেও যিনি চান, দুঙ্গাদের কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বাদ দিতে। যাতে বুঝিয়ে দেওয়া যায়, লাতিন ফুটবলের মানচিত্রে প্যারাগুয়ে হেলাফেলা করার মতো শক্তি নয়।

পারবেন দুঙ্গা? পারলে মানো মেনেজেসকে কোথাও হারিয়ে দেবেন। চার বছর আগে নেইমার সমেত তিনি যা পারেননি, দুঙ্গা তখন তা করে দেখাবেন। লুই ফিলিপ স্কোলারি—তাঁকেও কি একটা বার্তা দেওয়া যাবে না? বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের সঙ্গে এটার কোনও তুলনা চলে না। কিন্তু দুঙ্গা আজ পারলে, এটা অন্তত বোঝানো যাবে বড় ম্যাচে নেইমার ছাড়াও ব্রাজিল পারে। বোঝানো যাবে, সাত গোলটা ব্যতিক্রম ছিল।

আসলে শনিবার রাতের ব্রাজিল বনাম ব্রাজিল–টু নামেই। চিলির মাঠে এটা অনেক বেশি করে তারকাপ্রথার মিথ ভেঙে টিম ব্রাজিলে উত্তরণের লড়াই। বেলো হরাইজন্তের অভিশাপকে অঘটনে বদলে দেওয়ার লড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE