Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
করোনার ধাক্কা: কী প্রভাব বাংলার খেলায়/ ব্যাডমিন্টন
Coronavirus in India

গোপী স্যরের অনলাইন ক্লাস ভরসা সৈকতদের

কী ভাবে তাঁদের নির্দেশ দিচ্ছেন গোপী স্যর?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৩
Share: Save:

করোনার থাবায় সারা পৃথিবীতে প্রায় সব খেলাই স্তব্ধ। ভারতে এই মুহূর্তে খুবই জনপ্রিয় ব্যাডমিন্টনেও একই ছবি। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এমনকি পুল্লেলা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমি এখনও খোলেনি। পি ভি সিন্ধু, কিদম্বি শ্রীকান্তেরাও ফিরতে পারেননি কোর্টে। বাংলার প্রতিশ্রুতিমান ব্যাডমিন্টন তারকাদের মূল ভরসা এখন ফিজিক্যাল ট্রেনিং ও অনলাইন ক্লাস। কেউ কেউ বাড়িতেই ওয়াল প্র্যাক্টিস করছেন দেওয়ালে শাটল মেরে। কারও অস্ত্র শুধুই জগিং ও ধ্যান।

এ বছর রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় ডাবলস জয়ী আদিত্য মণ্ডল বাড়িতেই আটকে পড়েছেন। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কাছেই তাঁর বাড়ি। তাই বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। ট্রেনিং যদিও বন্ধ নেই। পুল্লেলা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে প্রস্তুতি নিতেন। লকডাউনের জন্য হায়দরাবাদ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে কলকাতায়। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন সৈকত। সিনিয়র ডাবলসের পাশাপাশি অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগে তিনি চ্যাম্পিয়ন। গোপীচন্দের নির্দেশ অনুযায়ী অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি রাখছেন। প্রত্যেক দিন নিয়মিত দু’বেলা ট্রেনিং করছেন সৈকত।

কী ভাবে তাঁদের নির্দেশ দিচ্ছেন গোপী স্যর? সৈকতের উত্তর, ‘‘সকালে নিজেই ভিডিয়ো-কলের মাধ্যমে আমাদের ট্রেনিং করান গোপী স্যর। বেশ কিছু যোগব্যায়াম, স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিংয়ের ধরন ও টেকনিক উন্নত করে তোলার জন্য শ্যাডো দেখান। স্যরের নির্দেশ অনুযায়ী ট্রেনিং চলছে আমাদের।’’

গোপীর অ্যাকাডেমির আর এক ছাত্র সল্টলেকের অঙ্কিত মণ্ডল। এশীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের জুনিয়র স্তরে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন তিনি। বলছেন, ‘‘গোপী স্যর বেশ কিছু সহজ উপায় দেখিয়েছেন, লকডাউনের মধ্যেও ছন্দ ধরে রাখার জন্য। সেই অনুযায়ী চেষ্টা করছি জড়তা কাটিয়ে ওঠার।’’

রাজ্যে মেয়েদের সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন সঞ্চালি দাশগুপ্ত ও পুরুষদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন অনির্বাণ মণ্ডল লকডাউনের ঠিক আগেই ট্রফি জিতেছেন। দু’জনেই অনুশীলন করেন নাকতলায় সৌমেন ভট্টাচার্যের অ্যাকাডেমিতে। তিন মাসের উপর কোর্টে নামতে পারেননি। গত তিন দিন ধরে এই শিবিরে শুরু হয়েছে অনুশীলন। ২৫ বছর বয়সি সঞ্চালি বলছিলেন, ‘‘কোর্টে নেমে বুঝতে পারছি, কতটা পিছিয়ে পড়েছি। শটে জোর পাচ্ছি না, স্ট্যামিনা কমে গিয়েছে। আসলে শেষ কয়েক মাস বাড়ির মধ্যে যতটা সম্ভব ট্রেনিং করেছি। কিন্তু আউটডোরে যে অনুশীলন হয়, তা বাড়িতে হয় না। তবুও শ্যাডো প্র্যাক্টিস ও ওয়াল প্র্যাক্টিস (র‌্যাকেট দিয়ে দেওয়ালে শাটল মারার অনুশীলন) করেছি। আগের ছন্দে ফিরতে অন্তত তিন মাস লাগবেই।’’ অনির্বাণেরও একই মত। বলছিলেন, ‘‘আর বেশি দিন বাড়িতে থাকলে, যতটুকু শিখেছি, অধীকাংশই নষ্ট হয়ে যেত।’’ তাঁদের কোচ সৌমেন ভট্টাচার্য মোট ছ’জন প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়দের নিয়ে শিবির শুরু করেছেন। সংক্রমণ এড়াতে ব্যবহার করতে হচ্ছে ফ্লোর স্যানিটাইজ়ারও। বলে দিলেন, ‘‘ম্যাচের সময় দূরত্ববিধি মানা গেলেও অনুশীলনে সে ভাবে সম্ভব নয়। তাই সব রকম সচেতনতা অবলম্বন করেই অনুশীলন শুরু হয়েছে। ফ্লোর স্যানিটাইজ়ার দিয়ে কোর্ট পরিষ্কার করা হচ্ছে। জিমের সরঞ্জামও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ ভাবে ছোট ছোট দলে অনুশীলন শুরু না করলে উঠতি খেলোয়াড়েরা একেবারেই হারিয়ে যাবে।’’

অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলে খেলে আসা উৎসবা পালিত যোগ দিয়েছেন প্রকাশ পাড়ুকোনের অ্যাকাডেমিতে। কয়েক দিন আগেই উড়ে গিয়েছেন বেঙ্গালুরু। অ্যাকাডেমির হোস্টেলেই আছেন ১৮ বছর বয়সি উৎসবা। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতায় সব অ্যাকাডেমিই বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে বেঙ্গালুরু চলে এসেছি। ছন্দ তো নষ্ট হতে দিতে পারি না।’’ বাংলায় জেলা সংস্থার প্রত্যেকটি অ্যাকাডেমি বন্ধ। স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার(সাই) দরজাও খোলেনি। হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে প্রত্যেককে। সাই কবে খুলবে সে বিষয়েও নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না কোচ এম এম সামন্তরা। তাঁর কথায়, ‘‘এ বছর সব প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে গিয়েছে। অ্যাকাডেমি খুলে ঝুঁকি নিতে কেউ রাজি নয়।’’

পশ্চিমবঙ্গ ব্যাডমিন্টন সংস্থার সচিব ও ভারতীয় ব্যাডমিন্টন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখর বিশ্বাস বলে দিলেন, ‘‘সরকার থেকে নির্দেশ পাওয়ার আগে জেলা স্তরের কোনও অ্যাকাডেমি খোলা সম্ভব নয়।’’

অর্জুন পুরস্কার জয়ী প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন তারকা মধুমিতা বিস্তের অনুরোধ, প্রত্যেকে যেন নিয়মিত ধ্যান করে মনঃসংযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কারণ, লকডাউনের মাঝে অবসাদ গ্রাস করা স্বাভাবিক। মধুমিতা বলে দিলেন, ‘‘বাড়িতে ট্রেনিংয়ের সঙ্গেই মনঃসংযোগ ধরে রাখতে হবে প্রত্যেককে। নিয়মিত ধ্যান করতে পারলে সব চেয়ে ভাল। অবসাদ থেকে দূরে থাকার জন্য ভাল সিনেমা অথবা ওয়েব সিরিজ দেখে নিজেদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করো, সকলকে এই পরামর্শই দেব।’’

হালফিলে ভারতে ক্রিকেটের বাইরে সব চেয়ে হইচই ফেলা খেলা ব্যাডমিন্টন। যদিও একটা পি ভি সিন্ধু, সাইনা নেহওয়াল বা কিদম্বি শ্রীকান্তের মতো আন্তর্জাতিক মানের তারকার দেখা এখনও এ রাজ্য থেকে নেই। এর মধ্যেই করোনার ধাক্কা কী ভাবে সামলে ওঠা যায়, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India Badminton Gopichand Pullela
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE