Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার মুখ দুই কন্যা

ইংল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিদার নাইট করোনা অতিমারির বিরুদ্ধে লড়তে সে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য স্কিম (এনএইচএস)-এ স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। আর কেটি ও তাঁর মা নিকি দু’জনে মিলে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের বাড়ির গ্যারাজ থেকে রোজ খাবারের প্যাকেট বিলি করছেন ৭০ জন দরিদ্র মানুষকে।

দায়বদ্ধ: আক্রান্তদের পাশে হিদার-নিকি। ফাইল চিত্র

দায়বদ্ধ: আক্রান্তদের পাশে হিদার-নিকি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০৪:০৪
Share: Save:

২৮ মার্চ: তাঁরা দু’জনেই মহিলা। দু’জনেই খেলার জগতের ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন হিদার নাইট ইংল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। আর দ্বিতীয় জন কেটি সোয়ান ইংল্যান্ডের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন টেনিসে। কিন্তু এই মুর্হূতে দু’জনের মধ্যে মিল একটাই। তা হল এই দুই কন্যাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করোনা সংক্রমণ রুখতে লড়াই চালাচ্ছেন নিজেদের মতো করে।

ইংল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিদার নাইট করোনা অতিমারির বিরুদ্ধে লড়তে সে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য স্কিম (এনএইচএস)-এ স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। আর কেটি ও তাঁর মা নিকি দু’জনে মিলে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের বাড়ির গ্যারাজ থেকে রোজ খাবারের প্যাকেট বিলি করছেন ৭০ জন দরিদ্র মানুষকে।

গত মঙ্গলবার ইংল্যান্ডে এনএইচএস আবেদন রেখেছিল, মারণ এই ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে আড়াই লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক দরকার। তাঁদের কাজ রোগীদের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, গাড়ি চালিয়ে আক্রান্তদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া বা বাড়ি নিয়ে আসা। আইসোলেশনে থাকা মানুষদের ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া। ইতিমধ্যেই এনএইচএস-এর সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন হিদার নাইটও। যিনি ১০ দিন আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে।

সমাজের জন্য কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত নাইট। বলছেন, ‍‘‍‘হাতে প্রচুর অবসর সময় ছিল। তাই যতটা সম্ভব সমাজের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করতে চাই। আমার দাদা ও তাঁর সঙ্গী চিকিৎসক। আমার বেশ কয়েক জন বন্ধুও এনএইচএস-এ কাজ করে। তাই জানি, এই সময়টা কতটা কঠিন আর কী শক্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে ওরা।’’

অন্য দিকে, পেশাদার টেনিসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কেটি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে উইচিতা বলে একটা জায়গায়। সেটা অবশ্য তাঁর বাবারও কর্মস্থল। তাঁর নিজের দেশেই তিনি পাঁচ নম্বর। গত বছরের নভেম্বরে সিঙ্গলসে বিশ্বক্রমতালিকায় ছিলেন ২৪০-এ। স্বভাবতই টেনিসমহলেও খুব পরিচিত নন কেটি সোয়ান। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, ২১ বছরের এই মেয়েটিই হঠাৎ শিরোনামে চলে এসেছেন, নিজের মায়ের সঙ্গে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে।

ঠিক কী করছেন কেটি? নিজের বাড়ির গ্যারাজ থেকে উইচিতার ৭০ জন দরিদ্র মানুষকে তিনি প্রত্যেক দিন বিলি করছেন, ‘ফুড-প্যাকেট’। এবং তাতে স্থানীয় মানুষেরা উপকৃত!

সাউদাম্পটনের সমাজর্কমী তাঁর মা নিকি, এই ধরনের কাজে রীতিমতো সিদ্ধহস্ত। নিজের মায়ের প্রশংসা করতে বসে আবেগাপ্লুত হয়ে যান কেটি, ‘‘করোনাভাইরাস নিয়ে এতকিছু শুরু হওয়ার পরে মা-র মনে হল, মানুষের সব চেয়ে বেশি দরকার মুদিখানার জিনিস। গরিবদের যা কেনার ক্ষমতা নেই। অথবা বাড়ির বাইরেই বেরোতে পারছিল না কেউ। অনেকে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে। অনেকের বাড়িতে বাচ্চা থাকায় তাদের ছেড়ে আসতে পারছিল না।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার বাবা-মা প্রতিদিন সকালে কস্টকোয় যায়। ওখান থেকেই ট্রলি ভর্তি করে মুদিখানার জিনিস নিয়ে আসে। যে ভাবে এই কাজটা করা হচ্ছিল, তা সবিস্তার আমার মা ফেসবুকে পোস্ট করে। সঙ্গে আমরা সাহায্যও প্রার্থনা করি। অবিশ্বাস্য ব্যাপারটা হচ্ছে দিন দু’য়েকের মধ্যে তহবিলে উঠে আসে প্রায় তিন লক্ষ টাকা (ভারতীয় মুদ্রায়)। এবং এ সবই হয়েছে আমার মায়ের জন্য। আমি, ভাই আর বাবা ওকে সঙ্গ দিয়েছি এই যা। সত্যি এমন মায়ের জন্য আমি গর্বিত।’’

মূল উদ্যোগটা মা নিকির হলেও কেটি নিজেও কিন্তু সারাক্ষণই তাঁকে সাহায্য করেন। এমনকি টেনিসের ট্রেনিংও এখন তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। ‘‘আমরা মুদিখানার যাবতীয় জিনিস এক জায়গায় জড়ো করি। তার পরে আমার ভাইয়ের স্কুলের বাচ্চারা খাবারের প্যাকেটগুলো নিয়ে মা-র বলে দেওয়া ঠিকানায় লোকের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। যাদের দিয়ে আসে, তারা সবাই খুবই গরিব। অনেকের বাড়িতে আবার প্রচুর বাচ্চা আছে। আমাদের খাবার যাঁরা পান, তাঁরা কিন্তু বিভিন্ন বয়সের। এক জনের বয়স তো ৯৮! কী ভাবে উনি যাবেন মুদির দোকানে। তা ছাড়া অনেক খাবার আমরা তৈরি করেও পাঠাই। ওই বৃদ্ধ যেমন আমার মায়ের হাতে তৈরি করা ব্যানোফি পাই খেতে অসম্ভব ভালবাসেন,’’ বলেন কেটি। সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এই সময় আমার বিদেশে টেনিস নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু রয়েছি বাড়িতে সবার সঙ্গে। যা আমাকে এনে দিয়েছে মায়ের সঙ্গে মানুষের সেবার করার অবিশ্বাস্য এক সুযোগ। আমি তাই রীতিমতো শিহরিত।’’

আর ক্রিকেটার হিদার নাইট? তিনি বলছেন, ‍‘‍‘আমি রোজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আক্রান্ত মানুষের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছি। আর যাঁরা স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে জনসংযোগের কাজটিও করতে হচ্ছে। কেউ বাড়িতে একা থাকলে তাঁকে ফোন করে কথা বলে প্রয়োজনীয় পরার্মশও দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE