টাইব্রেকে দেবজিতের সেই অবিশ্বাস্য সেভ। রবিবার কোচিতে। ছবি আইএসএল
হিউম, পস্টিগা, দ্যুতি বা জাভি লারা নন। এটিকে দ্বিতীয়বারও আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল বাঙালি ফুটবলারদের সৌজন্যে।
প্রথম আইএসএলে সোদপুরের মহম্মদ রফিক চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন আটলেটিকো দে কলকাতাকে। আর এ বারের নায়ক এক জন নয়, দু’জন— দেবজিৎ মজুমদার এবং জুয়েল রাজা। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে নিজেদের নার্ভকে শান্ত রেখে টাইব্রেকারে বাজিমাত করে গেলেন উত্তরপাড়া আর বজবজের দুই বঙ্গ তনয়।
পেনাল্টি শুটআউটের ফল তখন ৩-৩। পাঁচ নম্বর শট নিতে এসেছেন কেরলের ফরাসি ডিফেন্ডার সেডরিক হেঙ্গবার্ট। সেডরিকের শটটা অসাধারণ ভাবে পা দিয়ে বাঁচান দেবজিৎ। এটা কি আচমকা হয়ে গিয়েছিল? সোমবার ম্যাচের পর কোচি থেকে ফোনে দেবজিৎ বললেন, ‘‘একেবারেই আচমকা নয়। কেরলের প্লেয়ারটা (সেডরিক) বাঁ দিকে শটটা নিয়েছিল। কিন্তু আমি ঝাঁপিয়েছিলাম ডান দিকে। তবে শটটা এতটা দূর দিয়ে যাচ্ছিল না যে আমি সেটা পা দিয়ে আটকাতে পারতাম না। কোচ আগে থেকেই আমাদের এ রকম টিপসও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মূলত বাঁ দিক আর ডান দিকেই সবাই শট মারে। যদি কোনও ভাবে উল্টো দিকে ঝাঁপাই তা হলে যেন পা দিয়ে বল বাঁচানোর চেষ্টা করি। কোচের টিপসই এ দিন কাজে লেগে গিয়েছে।’’
দেবজিৎ বল বাঁচালেও শেষ জুয়েলের শটটা যদি গোলে না ঢুকত তবে খেলার ফল কী হত কে জানে! কতটা টেনশন হচ্ছিল পাঁচ নম্বর পেনাল্টি শটটি নিতে যাওয়ার আগে? সে সময় আপনার হাতেই তো এটিকে-র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাগ্য কার্যত নির্ভর করছিল। হাসতে হাসতে জুয়েল বললেন, ‘‘এটিকে-র ভাগ্য বরাবর আমাদের টিমগেমের উপর নির্ভর করে এসেছে। এ দিনও আলাদা নয়। তবে টাইব্রেকার শুরু হওয়ার আগে আমিই কোচকে বলেছিলাম শেষ শটটা নিতে চাই। কোচ বাধা দেননি। ভরসা করেছিলেন আমার উপর। ওঁর ভরসার মর্যাদা দিতে পেরে ভাল লাগছে। তবে এটা বলতে পারি, শটটা নিতে যাওয়ার আগে কোনও টেনশন ছিল না। একটা জেদ কাজ করছিল। গোলে বল ঢোকাতেই হবে।’’ এর সঙ্গেই জুয়েল যোগ করেন, ‘‘নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ তো ছিলই। আর সেটা করার জন্য আইএসএল ফাইনালের মঞ্চ থেকে বড় প্ল্যাটফর্ম হতে পারে না। এ বার যদি কোনও আই লিগ টিম আমাকে ডাকে।’’ জয়ের উচ্ছ্বাসকে ছাপিয়ে এক রাশ হতাশা যেন ঝড়ে পড়ল জুয়েলের গলায়। তবে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে শহর জুড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে অভিনন্দন জানান এটিকে-কে।
দেবজিতের উল্টো দিকে এ দিন সন্দীপ নন্দী ছিলেন না। যে সন্দীপ কেরল ব্লাস্টার্সকে ফাইনালে তুলতে সাহায্য করেছিলেন, টাইব্রেকারে পেনাল্টি বাঁচিয়ে সেমিফাইনালের ফিরতি লিগের নায়ক হয়েছিলেন, তাঁকে এ দিন রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে হয়েছিল। তার পরিবর্তে খেলেন গ্রাহাম স্ট্যাক। সন্দীপ না থাকায় কি দেবজিতের চ্যালেঞ্জটা একটু কমে গিয়েছিল? ‘‘একেবারেই নয়। কারণ টাইব্রেকারে আসল লড়াইটা থাকে নিজের সঙ্গেই। কতটা নার্ভ ঠান্ডা রাখা যায়। আমি অবশ্য আত্মবিশ্বাসী ছিলাম শুরু থেকেই। একবারের জন্যও ঘাবড়াইনি। শুধু মাথায় ছিল টিমকে চ্যাম্পিয়ন করতে হবে।’’
দু’দিন বিশ্রাম নিয়েই আই লিগের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে চান দেবজিৎ। বলছিলেন, ‘‘যে কোনও টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই বড় প্রাপ্তি। তবে এই সাফল্য ভুলে এ বার মোহনবাগানকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করার লড়াই শুরু করতে হবে। তবে এটিকে থেকে যা শিখেছি, সেগুলো আই লিগেও কাজে লাগাতে চাই।’’
এর পর কী, এখনও জানেন না জুয়েল। অপেক্ষা করে রয়েছেন কোনও আই লিগ টিমের ডাকের জন্য। বলছিলেন, ‘‘এটিকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেলিব্রেট তো করতেই হবে। কিন্তু তার পর? জানি না কী করব! তাই এত আনন্দ, এত অভিনন্দনের মাঝেও একটা যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। নিজেকে বারবার প্রমাণ করার পরেও কেন টিম পাই না, জানি না।’’
আজ, সোমবার বিকেলে শহরে ফিরছে টিম। সেখান থেকে বাসে করে এটিকে ফুটবলারদের নিয়ে আসা হবে শহরের একটি নামী শপিং মলে। সেখানেই সংবর্ধনা দেওয়া হবে চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্যদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy