Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্বপ্ন শুরু ভারতের, আক্রান্ত পাকিস্তান

সরফরাজ-রা এখন বার্মিংহামেই থাকবেন। কিন্তু খুব যে স্বস্তিতে থাকবেন না, বলে দেওয়া যায়। ও দিকে, কোহালিরা দেখিয়ে দিলেন, টিম ঠিকঠাক চললে কোনও বিতর্কই খুব প্রভাব ফেলতে পারবে না।

দাপট: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মারমুখী রোহিত শর্মা। ছবি: গেটি ইমেজেস

দাপট: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মারমুখী রোহিত শর্মা। ছবি: গেটি ইমেজেস

সুমিত ঘোষ
বার্মিংহাম শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০৪:২৯
Share: Save:

মহারণ জিতে বিরাট কোহালি স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিলেন। হেরে গিয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে আক্রান্ত দেখাচ্ছে। বরাবরের ভারত-পাক ম্যাচের মতোই দুই অধিনায়কের জন্য দুই পৃথিবী অপেক্ষা করছে বার্মিংহামের দ্বৈরথের পরেও।

ওয়াঘার ওপারে যদিও পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের চেয়েও বেশি করে কাঠগড়ায় ওঠানো হচ্ছে কোচ মিকি আর্থার-কে। রবিবার ভারতের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে হারের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে পাক মিডিয়ার দিক থেকে রীতিমতো ঝাঁঝালো প্রশ্নের মুখে পড়লেন কোচ। জানতে চাওয়া হল— প্রায় এক বছর হয়ে গেল। আপনি তো বলেই চলেছেন উন্নতি ঘটবে। দারুণ খেলবে। টিম ঘুরে দাঁড়াবে। বাস্তবে তার কিছুই তো এখনও দেখা গেল না। আর কত দিন অপেক্ষা করব?

মিকি আর্থার বেশ ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন। বলার চেষ্টা করলেন যে, ‘‘আর একটু ধৈর্য দেখানো দরকার। তরুণ দল খেলানোর চেষ্টা হচ্ছে। তাদের সময় দিতে হবে।’’ মিডিয়ার প্রশ্ন তাতেও থামল না। রবিবারের ম্যাচে জুনেইদ খান-কে কেন খেলানো হল না? সেই প্রশ্ন তুলেও তাঁকে বিঁধল পাক মিডিয়া। বিরাট কোহালি-রা সকলে স্পিন ভাল খেলেন। তবু ভারতের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় দুই স্পিনার নিয়ে কেন দল নামল, তা নিয়ে ঝড় তুলতে চলেছে পাক মিডিয়া।

আরও পড়ুন: ভারতের হয়ে প্রথম চার ব্যাটসম্যানেরই হাফ সেঞ্চুরি

শুধু তাদের দেশের মিডিয়া বলে নয়, প্রাক্তন তারকাদের সমালোচনার তিরও ধেয়ে আসতে শুরু করে দিয়েছে। শাহিদ আফ্রিদি ম্যাচের পরেই টুইট করেছেন, ‘আমাদের সেই পুরনো রোগ থেকে অব্যাহতি ঘটেনি। স্ট্রাইক রোটেট করা হচ্ছে না।’ আর একটি টুইটে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘ভারত-পাকিস্তান এখন তুলনাই হবে না। ভারত অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি’। তাঁর সঙ্গে আরও অনেক প্রাক্তন সরব হবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়।

সমবেদনা: লড়াইয়ের আবহে সম্প্রীতি। ওয়াহাবের সঙ্গে যুবরাজ। ছবি: এএফপি

সরফরাজ-রা এখন বার্মিংহামেই থাকবেন। কিন্তু খুব যে স্বস্তিতে থাকবেন না, বলে দেওয়া যায়। ও দিকে, কোহালিরা দেখিয়ে দিলেন, টিম ঠিকঠাক চললে কোনও বিতর্কই খুব প্রভাব ফেলতে পারবে না। কোহালির কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যুবরাজ সিংহের রান পাওয়া। তাঁর সমর্থনে দলে ফেরত এসেছেন যুবরাজ। রান না পেলে অধিনায়ককেই কাঠগড়ায় তোলা হতো। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের মতো হাইভোল্টেজ দ্বৈরথে যুবি রান করে দিলেন শুধু নয়, কোহালির চাপ কমিয়ে রান করে দিলেন দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেট রেখে। ‘‘যুবি যে কোনও বল মেরে দিচ্ছিল। লো ফুলটস মেরে দিচ্ছে। এমনকী, ইয়র্কারও মেরে দিল। এ রকম ফর্মে যখন ও ব্যাট করে, দলের চিন্তাটাই কমে যায়,’’ বলে গেলেন কোহালি। এর আগে টিভি-তে কোহালি বলে যান, ‘‘যুবরাজ যে ভাবে ব্যাট করছিল, নিজেকে ক্লাবস্তরের ব্যাটসম্যানের মতো লাগছিল।’’

তবে এটাও ঠিক যে, ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন কোহালি এবং যুবরাজ। দু’জনেরই ক্যাচ পড়েছে। যা নিয়ে পাক অধিনায়ক এবং কোচ দু’জনেই বলে গেলেন, ‘‘চল্লিশ ওভার পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল। দু’জনেরই ক্যাচ পড়ায় আমাদের ভুগতে হল।’’ কিন্তু ক্যাচ ধরলেই পাকিস্তান জিতত, এমন দুরাশা করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং সরফরাজদের বিনা লড়াইয়ে হারা দেখেই তাঁদের ক্রিকেট ভক্তরা বেশি ক্ষুব্ধ মনে হল।

পাকিস্তান ব্যাটিং যখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে, রামিজ রাজার মুখটা মনে পড়ছিল। রবিবারের মহারণ তখনও শুরু হয়নি। রামিজ রাজা বলছিলেন, শারজা ক্রিকেটের আমলে একটার পর একটা ম্যাচে তাঁরা ভারতকে হারাতেন। কখনও জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কা। কখনও ওয়াসিম আক্রমদের ভয়ঙ্কর পেস ও সুইং। কখনও আকিব জাভেদের হ্যাটট্রিক-সহ সাত উইকেট। কেউ না কেউ ঠিক তাঁদের জিতিয়ে দিতেন শারজায়। রামিজকে অবশ্য এখানেই থেমে যেতে হল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিকি পন্টিং-রা দ্রুত মনে করিয়ে দিলেন, এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে ভাই, রামিজ। এখন ভারতই শাসক।

বিশেষ করে বিশ্ব মানের প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানকে বার বার হারিয়ে শারজার সেই অভিশপ্ত বিপর্যয়ের বদলা সুদে-আসলে তুলে নিচ্ছে ভারত। বার্মিংহামের পরে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ১২ ম্যাচের মধ্যে ১০টি জিতল ভারত।

২০১১ মোহালি, ২০১৩ বার্মিংহাম, ২০১৫ অ্যাডিলেডে যা দেখা গিয়েছে, ২০১৭ বার্মিংহামেও তাই দেখা গেল। ভাংড়ার তালে নাচতে নাচতে কোহালি, ধোনিদের নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে ফিরছেন ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা। হারের বিষণ্ণতা গ্রাস করেছে পাকিস্তানকে। উল্টে তাদের সেরা অস্ত্র মহম্মদ আমির এবং ওয়াহাব রিয়াজ পুরো দশ ওভারের কোটা সম্পূর্ণ করতে না পেরে বেরিয়ে গেলেন চোট পেয়ে। আমির যদি দ্রুত ফিরতে না পারেন, গোটা টুর্নামেন্টেই পাকিস্তানের বোলিং জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে।

তেমনই যুবির বল্লা চলায় ভারতের রথ এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ভারত তিনশো তোলার পর থেকেই ভাংড়া আর বিরাট-যুবিদের নামে জয়ধ্বনির ডেসিবেল শুনেই বা কে বলবে শনিবারেই ফের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে ইংল্যান্ড। ম্যাঞ্চেস্টারের পরে এ বার লন্ডন। গত রাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অনেক জায়গায়। কয়েকটি শহরে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু রবিবাসরীয় বার্মিংহাম যেন বলে দিল, ক্রিকেটের সর্বসেরা দ্বৈরথ দেখার জন্য জঙ্গি-আতঙ্কও উপেক্ষা করতেও কেউ ভয় পায় না।

তবে ম্যাচ শুরুর আগে মাঠের বাইরে আজাদ কাশ্মীরের স্বপক্ষে স্লোগান দিতে শোনা যায় এক ঝাঁক লোককে। কিন্তু তাঁদের মাঠের মধ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়নি একেবারেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE