Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাট জবাব দেবে, বিরাটের অভিনব সেঞ্চুরি-উৎসব

সেঞ্চুরিয়ন। বার্মিংহাম। পার্‌থ। দেশ পাল্টেছে। মাঠ বদলেছে। কোনও পরিবর্তন হয়নি বিরাট কোহালির উপর ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নির্ভরতার। 

অনবদ্য: সেঞ্চুরি করে বিরাটের ইঙ্গিত। রবিবার। এএফপি

অনবদ্য: সেঞ্চুরি করে বিরাটের ইঙ্গিত। রবিবার। এএফপি

সুমিত ঘোষ 
পার্থ শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০২
Share: Save:

সেঞ্চুরিয়ন। বার্মিংহাম। পার্‌থ। দেশ পাল্টেছে। মাঠ বদলেছে। কোনও পরিবর্তন হয়নি বিরাট কোহালির উপর ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নির্ভরতার।

দক্ষিণ আফ্রিকায় কেপ টাউনে হারার পরে সেঞ্চুরিয়নে বড় সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহালি। সেই টেস্টে ভারতের করা ৩০৭ রানের মধ্যে ২৭৯ রান এসেছিল কোহালি ক্রিজে থাকার সময়ে। বার্মিংহামে ভারত তোলে ২৭৪। তার মধ্যে ২২০ রান এসেছিল কোহালি ক্রিজে থাকার সময়ে। ঘটনা হচ্ছে, আগের দু’টো জায়গাতেই একা কুম্ভ হয়ে কোহালি দলকে টানা সত্ত্বেও ভারত হেরে গিয়েছিল। এ বারে পার্‌থেও একই রকম ভাগ্য অপেক্ষা করে আছে কি না, সেটাই সকলের প্রশ্ন।

কোহালির আউট বিতর্ক এবং তার পরেই দ্রুত লেজ গুটিয়ে যাওয়ায় আপাতত ম্যাচে খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে ভারত। দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গিয়েছে ১৭৫ রানে। হাতে এখনও ছয় উইকেট এবং পুরো দু’দিন সময় বাকি। যদি তিনশোর কাছাকাছি শেষ ইনিংসে তাড়া করতে হয়, মোটেও সহজ হবে না ভারতের জন্য। বিশেষ করে পার্‌থের এই এক্সপ্রেস গতিসম্পন্ন, অসমান বাউন্স তৈরি হওয়া পিচে। কয়েকটা বল বেশ বিপজ্জনক ভাবে লাফাচ্ছে বলে আঘাতের ভয়ও থেকে যাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। সকালে কোহালি এক বার কনুইতে আঘাত পেলেন। বরফ ঘষে, ওষুধ খেয়েও তিনি ব্যাট করে গেলেন। মার্কাস হ্যারিসের হেলমেটে ঘটাং করে লাগল বুমরার বাউন্সার। এত জোরে হেলমেটে আছড়ে পড়েছিল বল যে, হ্যারিস মাটিতে পড়ে গেলেন। ফিল হিউজের মৃত্যুর ট্র্যাজেডির পর থেকে এ ভাবে কারও লাগা মানেই গোটা মাঠে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া। হ্যারিস শুশ্রুষা নিয়ে ফের দাঁড়ালেন কিন্তু তাঁকে ব্যাট করতে দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে মৃদু বিতর্ক শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার অন্য ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চকে হাসপাতালে ছুটতে হল মহম্মদ শামির লাফিয়ে ওঠা বল আঙুলে লাগায়। রক্ত জমে আঙুল একেবারে কালো হয়ে গিয়েছিল ফিঞ্চের। তখনই মাঠ থেকে বার করে এক্স-রে করার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। এক্স-রে রিপোর্টে অবশ্য চি়ড় পাওয়া যায়নি। উসমান খোয়াজা দারুণ লড়াই করছেন। কিন্তু তাঁরও এক বার লেগেছে। এই পিচে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিনতম চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: কোহালির ইনিংসে যেন উদ্বুদ্ধ হন ব্যাটসম্যানরা

তার উপর আবার কোহালি এবং চেতেশ্বর পূজারা ছাড়া আর কারও উপরে খুব বেশি ভরসা করা যায় না। মেরেকেটে কিছুটা অজিঙ্ক রাহানে। তরুণ ঋষভ পন্থকে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি টেস্ট মঞ্চে বিভ্রান্ত এক প্রতিভা। যিনি জানেন না, কোন বলটা স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ওড়াতে যাবেন, কোনটা জমাট রক্ষণ দিয়ে সামলাবেন। কোহালি আউট হওয়ার পরে যদি তিনি আরও কিছুটা লড়তে পারতেন, প্রথম ইনিংসের ব্যবধান হয়তো কমতে পারত। নীচের দিকে রবীন্দ্র জাডেজার মতো কারও অভাব খুব বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। পন্থ সেই কারণে সঙ্গীর অভাবেও ভুগছেন। জাডেজা থাকলে দ্বিতীয় ইনিংসে কাজেও আসতে পারতেন। চার পেসারকে নিয়ে সোমবার সকালে কোহালির প্রথম কাজ হবে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে দ্রুত শেষ করে ফেলা। তার পরে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য ধরে পড়ে থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা জানেন, যত ক্ষণ ক্রিজে থাকবেন কোহালি, তত ক্ষণই শ্বাসযন্ত্র চালু থাকবে ভারতের।

যদিও রবিবার তাঁর ব্যাটিংয়ের মতোই আলোচনা চলল সেঞ্চুরির পরে অভিনব উৎসব করার ভঙ্গি নিয়ে। সচরাচর যে ভাবে আবেগ প্রকাশ করে থাকেন কোহালি, সে রকম উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। শুধু ব্যাটে টোকা মারতে থাকলেন আর ডান হাতের তালুকে খুললেন আর বন্ধ করলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন সমালোচকদের উদ্দেশে বলতে চাইছেন, তোমরা যতই যা বলে যাও আমার ব্যাটই নিঃশব্দে জবাব দিয়ে যাবে। তীব্র জল্পনা তৈরি হয়েছে যে, তাঁর এই উৎসবের ভঙ্গি সুনীল গাওস্করের উদ্দেশে কি না। গাওস্কর এক দিন আগেই কোহালির ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন। তার মধ্যে কয়েকটা বক্তব্য নিয়ে কোহালির আপত্তি থাকতে পারে। আবার কারও কারও অনুমান, সিরিজের শুরুতে যে প্যাট কামিন্স বলেছিলেন, কোহালি এই সিরিজে রান পাবেন না, এটা তারই উত্তর। সেঞ্চুরি করে কোহালি হয়তো পাল্টা বলতে চাইলেন, চুপ থাকো। যা জবাব দেওয়ার আমার ব্যাটই দিচ্ছে।

২৫৭ বলে ১২৩ করে গেলেন কোহালি। অনেক দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ এই ইনিংসকে তাঁর জীবনের সেরা আখ্যা দিচ্ছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন টুইট করেছেন, পার্‌থে দুই চ্যাম্পিয়নের দু’টো ইনিংস সারা জীবন মনে থাকবে। সচিন তেন্ডুলকরের জীবনের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এবং কোহালির এ দিনেরটা। মাইকেল ভন আরও উচ্ছ্বসিত। টুইট করেছেন, ‘‘এখনও যদি কারও মনে সমস্ত ফর্ম্যাট মিলিয়ে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে অন্য কারও নাম থাকে, তা হলে সেই প্লেয়ারকে আমি এখনও দেখে উঠতে পারিনি।’’

ব্যাটে জবাব দিয়েও হয়তো কোহালির কাজ শেষ হচ্ছে না। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার দুর্গ রক্ষা করতে নামতে হবে তাঁকে। আবার হয়তো এক-একটা করে উইকেট পড়বে আর শূ্ন্য দৃষ্টিতে জায়ান্ট স্ক্রিনের রিপ্লের দিকে তাকিয়ে থাকবেন তিনি। ফিরে ফিরে তাকাতে হবে ড্রেসিংরুমের দিকে যে, এ বার কে বেরিয়ে আসছে আমাকে সঙ্গ দিতে? হয়তো কাউকেই পাবেন না। ‘একলা চলো রে’ বলেই এগিয়ে যেতে হবে। যদি পূজারা বা রাহানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন, তা হলে বাইশ গজে তাঁর একাকীত্ব কিছুটা কমতে পারে। না হলে পার্‌থে সোমবারেই ফের অসম লড়াই আসন্ন— একের বিরুদ্ধে এগারো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE